AB Bank
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি,চুয়াডাঙ্গা
০৭:২৯ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুম শুরু

চিনিখাতের লোকসান মাথায় নিয়েই ২০২২-২৩ অর্থ বছরের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু করেছে ৮৩ বছরেরও বেশি পুরনো প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড।

 

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫ টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ওই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনিশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু।

 

চলতি মৌসুমে ৫৩ মাড়াই কার্য দিবসে ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেরু কর্তৃপক্ষ।

 

চলতি মৌসুমে চিনিখাতে লোকসান কমিয়ে লাভজনক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কেরু। চিনিখাতে লোকসান হলেও চলতি বছর দেশে বিদেশী মদের আমদানি কমে যাওয়ায় মদের বেচাবিক্রি ও মুনাফায় রেকর্ড করে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ইউনিট থেকে মোট বেচাবিক্রি ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠানটি। যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

 

এ বছর শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি যা কোম্পানিটির এযাবৎ কালের রেকর্ড। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাফফুজুর রহমান মনজু, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম প্রমুখ।

 

বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনিশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু জানান, চিনিখাতটি লাভজনক পর্যায়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ডিস্ট্রিলারির মতো কেরুর সবখাতকে লাভজনক করা হবে। আখচাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে কৃষকদের। আখচাষীদের সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষদের সঙ্গে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক চলমান রয়েছে।

 

চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, এবার ৪ হাজার ২৩০ একর জমিতে আখ দণ্ডায়মান রয়েছে। যার মধ্যে কেরুর নিজস্ব জমির পরিমাণ ১ হাজার ৫০ একর। বাকী ৩ হাজার ১৮০ একর কৃষকদের জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। আখের সঠিক পরিচর্যা, আধুনিক পদ্ধতিতে আখচাষ ও মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের সার্বিক দেখভালের কারণে এবার আখের ফলন ভালো হয়েছে। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে, আখ মাড়াইসহ চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন সক্ষম হবে।

 

অপরদিকে, ২০২২-২৩ আখ রোপণ মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে আখ রোপণ শুরু করা হয় গত ১ সেপ্টেম্বর। এ বছর ৭ হাজার জমিতে আখ রোপনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭০০ একর জমিতে আখ রোপন সম্পন্ন হয়েছে। তবে, গতবারের তুলনায় এবার আখের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিল গেটে ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ টাকা। এছাড়া আখক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১৩৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭৬ টাকা।

 

কেরুর দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছর শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ বিক্রি হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকার। যা কেরুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই প্রথম ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে ১০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে কেরু। গত বছর এই ইউনিট থেকে লাভ ছিল প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও চিনি ইউনিটে বড় ধরণের লোকসান হয়েছে কেরুতে যা প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে চিনি ইউনিটে লোকসান সমন্বয়ের পরও কোম্পানির নীট মুনাফা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। যা গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

 

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ সালে অন্য বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়ে কেরুর উৎপাদিত মদের বেচা বিক্রি। গত বছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে কেরুর মদের চাহিদা। অর্থাৎ, প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে কেরু। প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি হয়ে থাকে। উৎপাদনও সে অনুযায়ী করা হয়।

 

কেরু অ্যান্ড কোং ১৭৫ মিলিলিটার, ৩৭৫ মিলিলিটার ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে মদ বাজারজাত করে থাকে। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি ও ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি মদের বোতল থাকে। কেরুতে রয়েছে মদের ৯টি ব্র্যান্ড।

 

ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে-  ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।

 

কেরু সূত্র আরও জানায়, দেশে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর মদের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বৈধপথে হ্রাস পায় মদ আমদানি। তাই বিদেশি মদের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় দেশে উৎপাদিত মদের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ায় কেরু। এতেকরে কেরুর উৎপাদিত মদ বিক্রি বাড়ার সাথে বেড়েছে মুনাফার পরিমাণ।

 

কেরুতে বর্তমানে ৯টি বিভিন্ন  ব্র্যান্ডের আওতায় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য প্রস্তুতকৃত ১০ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার মদ, ২৬ লাখ লিটার দেশি স্পিরিট ও ৮ লাখ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট উৎপাদন করা হয়। মদের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে থাকে কেরু।

 

কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা জানান, বর্তমানে কেরুতে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার এই ছয়টি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিটই লাভজনক। আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল ও বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে থাকে কোম্পানিটি। যা চিনি উৎপাদনের উপজাত। চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর তিনটি উপজাত পাওয়া যায়। এরমধ্যে রয়েছে গুড়, ব্যাগাস ও প্রেস মাড।

 

একুশে সংবাদ/হা.নি.প্রতি/পলাশ

Link copied!