AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিলুপ্তির পথে রামগঞ্জের গ্রাম্য ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর
০৯:৪০ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

বিলুপ্তির পথে রামগঞ্জের গ্রাম্য ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর

ছবি: একুশে সংবাদ

রামগঞ্জ প্রতিনিধি: সকালবেলা মক্তব হিসেবেও ব্যবহৃত হতো ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর। নব্বই দশকের আগেও প্রায় সকল গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই ছিল কাছারি ঘর। আর এই কাছারি ঘর ছিল গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে রামগঞ্জে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর সংস্কৃতি ঘর হারিয়ে যেতে বসেছে।

এখন গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই কাচারি ঘরের দেখা পাওয়া যায় না। এছাড়া সালিশ বৈঠক, গল্প-আড্ডা, পথচারী ও মুসাফিরদের বিশ্রামাগার হিসেবে কাচারি ঘরের ব্যাপক ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এই কাচারি ঘর ছিলো পুরো বাড়ির এক আড্ডা ও মিলন মেলার চমৎকার একটা স্থান, যেখানে সন্ধ্যার পর প্রায় সময় বাড়ি বা পাড়ার লোকজন বসে বসে মুখরোচক গল্পগুজবে সময় কাটাতো।

সাধারণত কাচারি ঘর স্থাপিত হয় বাড়ির সামনে। এতে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। অতিথি, পথচারী, মুসাফির, সাক্ষাৎপ্রার্থী ও বাড়ির ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার ঘর হিসেবে কাচারি ঘর ব্যবহার হতো। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম্য কাচারি ঘর সচরাচর তেমন চোখে পড়ে না। জানা গেছে, এক সময় গ্রাম-বাংলার অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক ছিল কাচারি ঘর। চারচালা টিনের অথবা ছনের ছাউনি দিয়ে বাড়ির সামনে তৈরি হতো এ ঘর। কাচারি ঘরে থাকতেন আবাসিক গৃহশিক্ষক বা লজিং মাস্টার।

তাছাড়া গ্রামের বাড়িস্থ কাচারিগুলোতে যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানও সম্পন্ন করা হতো। গ্রামের মোড়ললা সালিশ বিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকা-গুলো এই কাচারি ঘরে বসে সমাধা করতো। সময় সময় কাচারিতে গানবাজনার মুগ্ধকর আয়োজন চলতো। তখন পরিবারের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থাও এই কাচারি ঘরে করা হতো। আবার সময় সময় বাড়ির বৃদ্ধ লোকজনদের সেখানে বসে বিড়ি হুকা টানতে দেখা যেতো। কোন কোন সময় বাড়িতে মেহমান এলে তারা এই কাচারিতে রাত্রি যাপন করতো।

গ্রামাঞ্চলে বাড়ির ছেলেমেয়েরা সেই কাচারি ঘরে তাদের জায়গীর শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা চালিয়ে যেতো। যে কোন মাঝারি শ্রেণির পরিবারগুলো কাচারি ঘরেই জায়গীর শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতো। সেই সময়ে প্রতি গৃহস্থ বাড়ির একমাত্র আভিজাত্যের প্রতীকই ছিল বাড়ির বাহিরে অবস্থিত আঙিনায় এই বাংলো ঘর। যা শহরেও সেই সময় অনেক অভিজাত শ্রেণির বাড়ির মধ্যে বাংলো ঘর হিসেবে সমধিক পরিচিত ছিলো। সেই বাংলো ঘরের চৌকির ওপর থাকতো বাড়ির অবিবাহিত ছেলে বা ছাত্ররা।

আজ কালতো শহরে বা অধিকাংশ গ্রামে বাড়ির ড্রইং রুমের বিবিধ সাজসজ্জার মাধ্যমে পরিবারের আভিজাত্যপূর্ণ অবয়ব ফুটে উঠে আর এই ড্রইং রুম কাচারি ঘরের আধুনিক বিকল্প হিসেবে বর্তমান সমাজে অধিক সমাদৃত হচ্ছে। বিশেষ করে এই কাচারি ঘরের অতীত ঐতিহ্যই ছিলো আলাদা প্রকৃতির, যে ক্ষেত্রে কাচারি ঘর একটা সাময়িক বিশ্রামাগারের ভূমিকা রাখতো। অনেক সময় রাতে কাচারি ঘরওয়ালা বাড়িতে আসত অনাত্মীয়-অচেনা কোনো মুসাফির।

গ্রামাঞ্চলের লোকজন কোনসময় রাত-বিরেতে নদী পারাপারের জন্য বিলম্ব হলে তারা তখন পুরা রাত গ্রামের যে কোন কাচারিতে মুসাফির হিসাবে কাটিয়ে দিতো এবং পরের দিন তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিতো। কাচারি ঘরে অবস্থানকালে মুসাফিরদের আপ্যায়নের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটিই ছিলো না। এমন কি গ্রামের লোকজন চলাচলকালে, অতি ঝড়ঝাপটার মধ্যে পড়লে, তাৎক্ষণিক তারা কাছাকাছি কোন কাচারিতে গিয়ে আশ্রয় নিতো। প্রকৃত অর্থে বলা যায়, সে সময় মানুষের মানবিক আচরণ ও মনুষ্যত্বের দিক থেকে অনেক অগ্রগামী ছিলো। কালের পরিক্রমায় আজ এই কাচারি ঘরগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে, আর সেই স্থানে জায়গা করে নিচ্ছে আধুনিক যুগের বিশেষ সাজের ড্রইং রুমগুলো।

রামগঞ্জ উপজেলায় পৌরসভা ও ইউনিয়নসহ অনেক গ্রামে ঘুরে মুরব্বিগনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষের নানা স্মৃতি বিজড়িত এ কাচারি ঘর সত্যই ঐতিহ্যের বার্তা বহন করে চলেছে। চারদিকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় পৌরসভাসহ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বাড়ির সামনে এখনও পুরোনো সংস্কৃতির ধারক এ কাচারি ঘর স্মৃতি হিসেবে ধরে রেখেছেন অনেকে। এবং কয়েকটি বাড়িতে এখনও ঐতিহ্যবাহী পুরোনো কাচারি ঘর কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

একুশে সংবাদ/সাকিব আল/এইচ আই
 

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!