মুকসুদপুরে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য একাধিক সাক্ষিগোপাল প্রার্থী
হায়দার হোসেন, গোপালগঞ্জ থেকে: চলছে চতুর্থ দফা ইউনিয়ন নির্বাচন। সারাদেশের মত মুকসুদপুরেও চলছে প্রচারণা। লোক দেখানো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বামী স্ত্রী, বাপ বেটা, আপন ভাই, খালাত ভাই, মামা ভাগ্নে। কাগজ কলমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও বাস্তবে এসব সাক্ষিগোপাল প্রতীকি প্রার্থীরা ছাপেননি কোন পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার। নেই আলাদা কোন আপ্যায়ন, স্ত্রী নিজে প্রার্থী হয়েও ভোট ভিক্ষা করছেন স্বামীর জন্য, ছেলে প্রার্থী হয়েও ভোট ক্যাম্পিং করছেন পিতার জন্য, মামাত ভাই, ছোট ভাই প্রার্থী হলেও দিনরাত ভোটের মাঠ চষে
বেড়াচ্ছেন বড় ভাইয়ের জন্য। মামা প্রার্থী হলেও ভোট চাচ্ছেন ভাগ্নের জন্য, বিএনপির প্রার্থী হয়েও ভোট প্রার্থনা করছেন আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য। লক্ষ্য একটাই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী প্রার্থীকে ঠকানো। এ ধরণের কৌশলের লক্ষ্য আরো বিশেষ সুবিধা আদায়; ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রের বাইরে অধিক গাড়ীর ব্যবহার, ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট সংখ্যায় বেশী দেওয়া, ভোটের দিন প্রার্থীর বিশেষ সুবিধা, নির্বাচনী এজেন্ট বেশী নিয়ে আইনগত বেশী সুবিধা নিয়ে জনবল বাড়িয়ে সম্মিলিতভাবে নিজেদের প্রার্থীকে জয়লাভ করার চেষ্টা। এই হিসেবে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীর কোন নকল কিংবা সাক্ষিগোপাল প্রার্থীতো নেইই উপরন্তু কোন কোন ইউনিয়নে আওয়ামী মনোনয়ন বঞ্চিত বা প্রত্যাহার করা বিদ্রোহী প্রার্থীরা গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাজ করছে দিন রাত, লক্ষ্য একটাই আওয়ামী প্রার্থীকে হারানো।
দিগনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নানান কারনে উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে দূরে চলে যাওয়াতে মনোনয়ন চাননি। কিন্তু তিনি নিজেতো প্রার্থী হয়েছেনই সেই সাথে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য তার স্ত্রী পারভীন প্রার্থী হয়েছে, মার্কা চশমা। ভোট ক্যাম্পিং বা প্রচারনার সপ্তাহ পার হলেও চশমা মার্কার কোন পোষ্টার নেই, লিফলেট নেই। নেই নির্বাচনী প্রচারনায় কোন অফিস। পারভীন বেগম নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন মটরসাইকেল মার্কায় প্রার্থী তার স্বামী সফিকুল ইসলাম সাগর মোল্যার জন্য। একই অবস্থা জলিরপার ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী মিহির
কান্তি রায়ের। তার স্ত্রী শেফালী রানী হাওলাদার, প্রতীক রজনীগন্ধা। তিনি নির্বাচনের মাঠে থাকলেও বাড়ীতে প্রতিদিন শ’খানেক কর্মী সমর্থকদের আপ্যায়ন করলেও নিজের মার্কা বাদ দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন তার স্বামী মিহির কান্তি রায়ের মার্কা মটর সাইকেলে। উজানী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দীনেশ মন্ডলের স্ত্রী মৃনালিনী মন্ডল চশমা প্রতীকে বাহ্যিকভাবে স্বামীর প্রতীক আনারসের বিরুদ্ধে কাগজে কলমে নির্বাচন করছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রতিনিয়ত মৃনালিনী মন্ডল নিজে এবং তার আত্মীয় স্বজন, সুবিধাভোগকারিদের নিয়ে স্বামীকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য যত প্রকার কৌশল আছে তা ব্যবহার করছেন। সবচেয়ে বেশী প্রার্থী রয়েছে ননীক্ষির ইউনিয়নে। সেখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ৩ জনের মধ্যে হলেও ব্যালট যাচ্ছে ৯ জনের নামে। এখানে বাপ বেটা, মামা ভাগ্নে, মামাত ভাই, আপন ভাই প্রার্থী আছেন। আছেন ভোটের মাঠেও। ভোট চাওয়া, মিটিং মিছিল করা, চা কফি, সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার সবই করছেন প্রার্থীরা। কিন্তু নিজের মার্কা রজনীগন্ধা বাদ দিয়ে শামীম শেখ ভোট চাচ্ছেন তার পিতা বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ মজিবুরের জন্য। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী অহিদুজ্জামান অহিদ চশমা
প্রতীকে নির্বাচন করলেও জামান গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে তার ভাই আসাদুজ্জামান মিনার আনারস মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। মামা খলিলুর রহমান (ঘোড়া মার্কা) ভোট চাচ্ছেন ভাগ্নে আসাদুজ্জামানের আনারস মার্কায়, টেলিফোন মার্কার প্রার্থী শেখ রকিবুল ইসলামের কোথাও কোন পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন, প্রচারনার অফিস না থাকলেও তিনি আছেন ভোটের মাঠে, প্রচারনা চালাচ্ছেন মামাত ভাই আসাদুজ্জামানের পক্ষে। নিজে প্রার্থী হয়ে অন্যের প্রচারণা চালানো আচরণ বিধি ভঙ্গ হয় কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন অফিসার ফয়জুল মোল্যা বলেন মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনের কাছে সবাই প্রার্থী। এই প্রার্থী হওয়ার সুযোগে তিনি ভোটের দিন, নিজে এবং প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট গাড়ী
ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। সুযোগ থাকবে ভোটকেন্দ্রে প্রতি নির্বাচনী বুথে নির্বাচনী পোলিং এজেন্ট দেওয়ার। প্রার্থী প্রতি ১ জনই এই সুযোগ পাবেন। তবে সাক্ষিগোপাল প্রার্থী দিয়ে সুবিধা নেওয়ার নজীর এর আগে থাকলেও তাদের বিচারের জন্য কোন বিধিবিধান নির্বাচন কমিশনের নেই।
তারা আইনত আচরনবিধি মেনে চললেও লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা রয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করা। এ মন্তব্য করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক রবিউল আলম শিকদার। আইনে আছে বলে অপরাধ করেই যাবে এটার তো মানে হয় না। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করে প্রমান পেলে হয়তো প্রশাসন কিছু একটা করলেও করতে পারে। দেখা যাক তারা কি করে।
একুশে সংবাদ /এস/০২-০৫-১৬
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :