AB Bank
ঢাকা রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের কথা জানে না সাধারণ মানুষ


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৮:২৭ পিএম, ৭ মে, ২০২৪
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের কথা জানে না সাধারণ মানুষ

সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত বা আহত হলে সেই পরিবারের ওপর নেমে আসে কঠিন বিপর্যয়। বর্তমান সরকার এবিষয়ে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তার পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৩ লাখ ও চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলে পাবে ১ লাখ টাকা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে বীমা ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলেও সরাসরি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম সম্ভবত এটাই প্রথম। সরকার ২০২২ সালে সড়ক-পরিবহন আইন কার্যকর করে বিধিমালা ২০১৮ প্রকাশ করে। কিন্তু ব্যাপক প্রচার ও অজ্ঞতার কারণে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বিষয়টি না জানার কারণে আবেদনের সময় পার হয়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক পান দোকানদারের স্ত্রী বলেন, 

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় এটা তার জানা ছিলনা। স্বমীর জন্য কান্নাকাটি করার সময়ে একজন তাকে জানায়। নির্ধারিত সময়ে তিনি কাগজপত্র সংগ্রহ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, 

সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পেতে নির্ধারিত ফরমে ঘটনার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়। আবেদন দাখিলের পর ৪০ দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিবেদন দাখিলের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ‘প্রাপকের হিসাবে প্রদেয়’ চেকের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে।

সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত প্রত্যেকের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকার এর জন্য তহবিলও গঠন করেছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে তা জানতে পারছেন না ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ফলে আবেদন কম পড়ছে। সরকারি হিসাবে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পরের ১৫ মাসে যত মানুষ হতাহত হয়েছেন, তার মাত্র ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানায়, 

বড় দুর্ঘটনা, হতাহত বেশি হলে তা সারা দেশে আলোচিত হয়। এসব ঘটনায় বিআরটিএ বা কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অবহিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোটখাটো এবং গ্রামগঞ্জে ঘটা দুর্ঘটনার খবর আড়ালে থেকে যায়। আর ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বলে এই সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। বঞ্চিত ব্যক্তিরা মূলত দরিদ্র, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন বা স্বল্পশিক্ষিত এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষ।

২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইনে বলা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ আসবে কোথা থেকে দেবে? ২০২২ সালে এসে সরকার এ সংক্রান্ত একটা বিধিমালা তৈরি করতে সক্ষম হয়।  ২০২২ সালে ‘সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ বিধিমালা‍‍` প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয় এই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটা তহবিল গঠন করা হবে।

আইনে ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠনে যেসব খাত থেকে অর্থ পাওয়া সম্ভব, তার তালিকা দেওয়া আছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের দেওয়া অনুদান, মোটরযানের মালিকের কাছ থেকে তোলা চাঁদা, সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে আদায় করা জরিমানার অর্থ, মালিক সমিতি থেকে দেওয়া অনুদান, শ্রমিক সংগঠন বা শ্রমিক ফেডারেশন থেকে দেওয়া অনুদান, অন্য কোনো বৈধ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ।

এ ছাড়া বিধিমালায় তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কেও নির্দেশনা প্রদান করা হয। এই তহবিলে মোটরযান মালিকগণ প্রতিটি মোটরযানের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণে বার্ষিক বা এককালীন চাঁদা দেবেন।  তহবিলে প্রত্যেক মোটরসাইকেল মালিককে এককালীন ১০০০ টাকা দিতে হবে। বাস, ট্রাক, কভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভারের জন্য বার্ষিক দেড় হাজার টাকা, মিনিবাস, মিনি ট্রাক ও পিকআপের জন্য বার্ষিক ৭৫০ টাকা ধার্য হয়। কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য বার্ষিক ৫০০ টাকা ও  থ্রি-হুইলারসহ অন্যদের বার্ষিক ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মোটরসাইকেল ছাড়া অন্যান্য যানের চাঁদা দেওয়ার নির্দিষ্ট মেয়াদ চলে গেলে প্রতি মাস বা মাসের অংশবিশেষের জন্য ৫০ টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়।

বিআরটিএর হিসাবে, 

গত বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৭ হাজার জন। এ সময় আহত হয়েছেন ৯ হাজারের ওপরে। অর্থাৎ দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। আইন অনুসারে, নিহত প্রত্যেকের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করার যোগ্য। কিন্তু আলোচ্য ১৫ মাসে ক্ষতিপূরণের আবেদন পড়েছে ১ হাজার ১৮০টির মত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আবেদন করতে প্রক্রিয়াগত জটিলতাও রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। বিআরটিএর হিসাবে, ১৫ মাসে যত আবেদন পড়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২৬৭টির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সংখ্যাটি মোট আবেদনের মাত্র ২৩ শতাংশ।

বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহানি হলে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পান তিন লাখ টাকা। আহত কারও চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকলে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় তিন লাখ টাকা। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলে পান এক লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় কার দায়, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হয় ক্ষতিপূরণ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর, বনানী বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে। সারা দেশে বিআরটিএর কার্যালয় থাকলেও সেখানে আবেদন জমা নেওয়া হয় না। আবেদনের সঙ্গে নিহত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ, মামলা বা সাধারণ ডায়েরির অনুলিপিসহ ৯ প্রকারের তথ্য প্রদান করতে হয়। আহত হলে চিকিৎসা ব্যয়ের রসিদসহ দিতে হয় ৬ প্রকারের তথ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, 

এখন পর্যন্ত শুধু যানবাহনের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে প্রায় ১৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি টাকার কিছু বেশি ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র কিংবা খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে এতগুলো নথি জোগাড় করা, প্রতিটি সনদের অনুলিপি সত্যায়িত করা এবং সেগুলো ঢাকায় এসে জমা দেওয়া কঠিন। এ জন্য আবেদনের সংখ্যা কম। সরকারের কাছে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে এককালীন ১০০ কোটি টাকা অনুদান চাওয়া হয়েছিল। তবে পাওয়া যায়নি। আবেদন নিষ্পত্তিতে ধীরগতি দেখা যায়। আবেদন পক্রিয়া কিছুটা সহজ করা হলে দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন ক্ষতিপূরণ পেতে আট-নয় মাসের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষতিপূরণের আবেদন সহজলভ্য করতে সারা দেশে হাসপাতাল, থানা ও বিআরটিএর কার্যালয়গুলোতে ফরম রাখা উচিত। সেখান থেকেই হাসপাতাল বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রাথমিক আবেদনটি তৈরি করাসহ জমা নেওয়ার কাজটি বিআরটিএর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে সম্পন্ন করার সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

জানা যায়, ঢাকায় আবেদন জমা হওয়ার পর এটি নানা টেবিল ঘুরে বিআরটিএ‍‍`র চেয়ারম্যানের কাছে যায়। তিনি অনুমোদন দেওয়ার পর আবেদনের নথি যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকায় থাকা বিআরটিএর কার্যালয়ে যায়। এরপর ঢাকার বাইরের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি যাচাই–বাছাই করে। সেখানে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার এবং ওয়ারিশদের ডাকা হয়। ইউএনওর নেতৃত্বে কমিটি চূড়ান্ত ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করে তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। জেলা প্রশাসক সেটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠায়। এরপর চেয়ারম্যান সময়-সুযোগ বুঝে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে চেক হস্তান্তর করেন।

বিআরটিএ-র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, 

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও ও জেলা প্রশাসকেরা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন। দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের কাজে যুক্ত করার ফলে তাঁদের পক্ষে সময় বের করা কঠিন হয়। সব মিলিয়ে আবেদন জমা থেকে শুরু করে ক্ষতিপূরণ পাওয়া পর্যন্ত বেশ সময় লেগে যাচ্ছে।

বিআরটিএ ও ক্ষতিপূরণ তহবিলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আবেদন কম পড়ার কারণে টাকার জোগান নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগী সবাই আবেদন করলে এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হলে তহবিলে টান পড়বে। কারণ, যানবাহনের মালিকের কাছ থেকে বার্ষিক যে চাঁদা জমা হচ্ছে, তা বছরে ১৫০ কোটি টাকার বেশি নয়। অন্যদিকে অন্তত ৬০ শতাংশ ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দিতে দরকার বছরে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।


একুশে সংবাদ/ন.প্র/জাহা  

Link copied!