AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঈদ উৎসবে চাঙা দেশের অর্থনীতি


Ekushey Sangbad
মুহাম্মদ আসাদ
১১:২৮ এএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৩

ঈদ উৎসবে চাঙা দেশের অর্থনীতি

অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ঈদ উৎসেবকে ঘিরে চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি। সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি বড় উৎসব বৈশাখ ও ঈদের সুবাদে অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরেছে। গত মার্চে দেশে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চলতি মাসের ১৪ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫ কোটি ৮৭৮ লাখ ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎসবের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হিসাব বলছে, চলতি মাসেই অর্থনীতিতে অতিরিক্ত আরো দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হবে। খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহন খাতে এই বাড়তি অর্থ যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী, দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবীদের বোনাসও এ কর্মকাণ্ডে যোগ হবে। এর প্রভাবে ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত বেড়েছে বেচাকেনা। কেনাকাটা বেড়েছে অনলাইনে। জমে উঠেছে ইফতার বাজার। গ্রামেও টাকার প্রবাহ বাড়ছে। সবকিছু মিলে উৎসবে চাঙা হয়ে উঠছে অর্থনীতি। যদিও ঈদের আগে পর পর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায় কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।

 

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে বঙ্গবাজার ও নিউ সুপারমার্কেটের আগুনের ঘটনায় সারাদেশের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে খাবারের চাহিদা মিটিয়ে মানুষের হাতে ওই পরিমাণ টাকা থাকছে না। এ কারণে ফুটপাতে ভিড় থাকলেও বড় মার্কেটগুলো এখনো ওইভাবে জমে ওঠেনি। তবে আমাদের ধারণা, করোনার পর এবার ব্যবসা জমে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ড হিসাব কিছুটা পালটে দিয়েছে। তবে আশা করছি, যে কদিন আছে, তাতে বেচাকেনা আরো বাড়বে।

 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. এমকে মুজেরী বলেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। রোজার ঈদে টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বাড়ে- এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই টাকা পোশাক, ভোগ্যপণ্য, শৌখিনতা ও ভ্রমণসহ বিনোদনমুখী খাতে বেশি হচ্ছে। এই উৎসব বড় ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে। তিনি আরো বলেন, উৎসব অর্থনীতির আকার, ধরন ও ব্যাপ্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। মানুষ এ উৎসব ঘিরে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করে। এতে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী- প্রত্যেকে কিছু না কিছু লাভবান হচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

 

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের হিসাবে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার হচ্ছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। তবে উৎসবে কত টাকা লেনদেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। রোজা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে দোকান মালিক সমিতি নিজস্ব একটি সমীক্ষা করেছে। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে- রোজা ও ঈদে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন যোগ হচ্ছে। সমীক্ষা মতে, পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। জাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে ৮০০ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বাইরে আরো কয়েকটি খাতের কর্মকাণ্ডে টাকার প্রবাহ বাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস। যা ঈদ অর্থনীতিতে আসছে। এছাড়া রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা। মার্চে ২০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ২২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্র?তি ডলার ১০৭ টাকা ধ?রে) যার পরিমাণ ১০ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা।

 

এফইএবির সভাপতি ও ফ্যাশন হাউস অঞ্জনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ বলেন, আমরা বৈশাখ উপলক্ষে কিছু কাপড় তুলেছিলাম। সব ধরনের উৎসবকে সামনে রেখে আমরা বিভিন্ন কালেকশন উঠিয়ে থাকি। তবে এবার যেহেতু এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঈদ ও বৈশাখ হচ্ছে, তাই আমরা বৈশাখপ্রেমীদের জন্য অল্প করে পোশাক তুলেছি।

 

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, ব্যবসার টাকা, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এবং জাকাত-ফিতরা মিলিয়ে অর্থনীতিতে নতুন করে দেড় লাখ কোটি টাকা যোগ হয়। এর একটি অংশ ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছে। ঈদ ও রোজার বাড়তি খরচ মেটাতে কৃষকের ঘরে মজুত ধান বা অন্যান্য ফসলের একটি অংশ বিক্রি শুরু হয়েছে। তরমুজের মতো মৌসুমি ফলের ব্যবসাও জমে উঠেছে। এছাড়া অর্থবছর শেষ হয়ে আসায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ করার ধুম পড়েছে। ফলে সবকিছু মিলে টাকার স্রোত এবার গ্রামের দিকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ টাকার বড় অংশই যাচ্ছে ভোগ-বিলাসে। আর কিছু অংশ যাচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন খাতে।

 

জানা গেছে, অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে এবার বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভোজ্যতেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই ও পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ টন, চিনি ২ লাখ টন থেকে পৌনে ৩ লাখ টন, ডাল ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন, ছোলা ৫০-৬০ হাজার টন, খেজুর ১৫ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টন এবং রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেয়া হয়। চলতি বছর ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী অষ্টম বেতন কাঠামোর আলোকে ঈদ বোনাস পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিন বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এছাড়া বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব কাঠামোতে বোনাস দিচ্ছে। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীর বোনাসও যোগ হচ্ছে। যা পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ অর্থনীতিতে। এছাড়া ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে সারাদেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে। নি¤েœ একজন কর্মীকে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেয়া হয়। ওই হিসাবে গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা ধরে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বোনাস পাচ্ছেন এ খাতের শ্রমিকরা। যা পুরোটাই ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে।

 

একুশে সংবাদ.কম/আ.জ.প্র/জা.হা

Link copied!