AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উলিপুরে টুল-পিঁড়িতেই নর সুন্দরদের দিন কাটে


উলিপুরে টুল-পিঁড়িতেই নর সুন্দরদের দিন কাটে

ছাদ বিহীন খোলা আকাশের নিচে কন কনে শীতে দিব্যি চুল ছাঁটেন, আর দাড়ি-গোঁফ কেটে নর সুন্দরের কাজ করছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের নর সুন্দর (নাপিত) নামে পরিচিত মানুষেরা। আওয়ামী লীগ অফিস ও লাল দল ক্রীড়া অফিসের সামনে পিঁড়িতে বসেই সময় পার করছেন নর সুন্দর কাজ করা মানুষগুলো।

 

পথ চলতেই চোখে পড়ে যায়, নারায়ণ চন্দ্র শীল (৭০), শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র শীল (৬৫), আব্দুল বাতেন (৬৮)। তাদের প্রত্যেকেরই ঠিকানা উলিপুর পৌর সভাস্থ নারিকেল বাড়ি খামার ও আগ পাড়া গ্রামে। নারায়ণ চন্দ্র শীল এ পেশায় প্রায় ৫০ বছর ধরে আছেন। তাঁর স্ত্রীসহ তিন সন্তানের সংসার, দুই মেয়েকে এই পেশা থেকে আয় করা অর্থ দিয়েই বিয়ে দিয়েছেন।

 

ছেলেটিকেও বিয়ে দিয়েছেন এবং ছেলেকেও এ পেশায় নিয়োজিত করে একই সংসারে আছেন। ছেলেও তাঁর সাথে ফুটপাতে একই টুলে বসে নর সুন্দরের কাজ করছেন। পাশেই শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র শীল (৬৭) প্রায় ৩০ বছর ধরে একই কাজ করছেন। তাঁরও দুই সন্তানকে এই পেশা থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে বড় করে বিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সন্তানেরা একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে ওই দোকানে নর সুন্দরের কাজ করছেন।

 

লাল দল ক্রিড়া অফিসের সামনে যিনি আছেন তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের আব্দুল বাতেন নামে পরিচিত তিনিও তাঁর বাবার পেশার সূত্রে এই পেশায় নিয়োজিত আছেন প্রায় ৪০ বছর। বাতেনের সন্তানেরা বড় হয়ে সবাই নিজ জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। এই নর সুন্দরের কাজ করা প্রত্যেকেরই সংসার নিম্ন আয়ের। নর সুন্দরের কাজ করা মানুষদের আর আগের মত চোখে পড়ে না। ধীরে ধীরে নগর উন্নয়নের সাথে সাথে হিসেবের খাতাও বদলে গেছে।

 

মানুষের জীবন যাত্রার মান, চড়া দামে সেবা নিতেও শিখে গেছে মানুষ। দামি সুসজ্জিত দালানে বেড়েছে সেবার মান। গাছ তলা ভুলে যুগের চাহিদায় আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পকেট মার্কেটগুলোতে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বাড়া নর সুন্দরের কাজ করছেন ধর্ম সম্প্রদায় সব ভুলে এক শ্রেণির মানুষ। এত কিছুর ভিড়েও এখনো মাঝে মাঝে শহরের আনাচে কানাছে ব্যতিক্রম নর সুন্দরদের চোখে পড়ে। এক থেকে দেড় যুগ আগেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নর সুন্দরেরা সব বয়সের মানুষদের চুল, দাড়ি ও গোঁফ সুন্দরের কাজ করতেন।

 

একটা সময় ছিলো তখন স্যালুন বলতেই গাছ তলায়, বাঁশ তলায় বসে নর সুন্দরদেরর ডেকে চুল, দাড়ি ও গোঁফ কাটিয়ে নিতো মানুষ। এমনও সময় গেছে গ্রামের বিত্তশালীরা বাৎসরিক চুক্তিতে ধান-চালের বিনিময়ে নর সুন্দরদের কাছ থেকে নিজেদের চুল, দাড়ি কামানোর কাজ করে নিতেন। গ্রামের সদ্যজাত শিশুটির মাথা ন্যাড়া করার কাজটিও তারাই করতেন। এখন আয়ের উপর ভিত্তি করে শ্রেণিভেদে কখনো অভিজাত স্যালুনে কাজ করা নরসুন্দরদের বাড়িতে ডেকে নেন, ফুটপাতের নর সুন্দাররাও মাঝে মাঝে ডাক পান। কথিত আছে, এক সময় সংবাদ বাহনের কাজটিও তারা করতেন এবং উভয় পরিবারের কাছ থেকে সম্মানিও পেতেন।

 

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা আওয়মী লীগ অফিসের সামনে বসে থাকা দু‍‍`জন নর সুন্দরের দেখা মেলে, কথা হয় তাদের সাথে। নারায়ন চন্দ্র শীল ও মনিন্দ্র চন্দ্র শীল তাঁরা আপন চাচাত জ্যাঠাত ভাই।

 

নর সুন্দররা জানান, সারাদিনে ৩-৪ নর সুন্দরের কাজ পান প্রতিটি কাজাের মূল্য হিসেবে পান ৩০-৪০ টাকা। তাই দিয়ে হাট-বাজার করে বেলা শেষে হাসি মুখে বাড়িতে চলে যান।

 

তাঁরা জানান, মানুষ এখন অনেকটা আরাম প্রিয় সে কারনে আর আগের মতো কাজ পায়না।  ভাতা পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় তারা দু‍‍`জনই বয়স্কা ভাতা পান।

 

একুশে সংবাদ/কা.স্বা.প্রতি/এসএপি

Link copied!