AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বেকারত্ব: উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন জরুরি


Ekushey Sangbad
কুবি প্রতিনিধি
০৫:৩৪ পিএম, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩
বেকারত্ব: উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়ন জরুরি

বেকারত্ব অভিশাপ স্বরূপ। আর এই বেকারত্বের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে! বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বরাবরের মতোই ধোয়াশার সৃষ্টি করছে। একদিকে সরকারি হিসাবে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে অন্যদিকে বাস্তবতা বলছে দেশের সিংহভাগ শিক্ষিত কর্মক্ষম মানুষ প্রয়োজনীয়  চাকরির অভাবে কেউবা রিকশা চালাচ্ছে, কেউ ছোট খাট কাজ করছে, আবার কেউবা অর্থ উপার্জনের অন্য কোনো পথ না পেয়ে শেষমেশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে!

 

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কী? উন্নত বিশ্বের দেশ যেমন আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন আর্থিকভাবে সফল দেশ প্রতিমাসে তাদের কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব নিয়ে পরিসংখ্যান বের করে থাকে। যা তাদের এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে পথ নির্দেশিকার কাজ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের এ বিষয়ে  সঠিক  কোনো রেকর্ড নেই।

 

যদি আমরা সরকারি হিসাবের দিকে তাকাই,  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০১৬-১৭) এর তথ্য অনুযায়ী দেশে ৫ কোটি ৬৭ লাখ কর্মক্ষম লোকের মধ্যে ৫ কোটি ৫১ লাখ কোনো না কোনো ভাবে কাজের সাথে জড়িত। যা বর্তমান দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির সাথে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অপরদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারত্বের সংখ্যা ৪ কোটির ও বেশি!! অদূর ভবিষ্যতে যা আরও বাড়বে!

 

সরকার উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করার ফলে এখন প্রতি উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কলেজ এবং জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছে, যা অবশ্যই শিক্ষাকে সকলের দ্বারে পৌছে দিচ্ছে৷ উচ্চশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু একাধারে তা উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ও বাড়াতে সহায়তা করছে।

 

একটি উন্নয়নশীল জাতি হিসেবে আমাদের দেশের সীমাবদ্ধতা অনেক। উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এই সমস্যা সমাধানকল্পে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য হলেও কর্মসংস্থান এর সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে অগ্রসরমান হলেও এই বিশাল উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক অপ্রতুল।

 

এছাড়াও, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ লাভ করলেও মাঠ পর্যায়ে সে শিক্ষার প্রায়োগিক ব্যবহারের সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে খুব স্বল্প পরিমাণেই আছে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দুর্নীতি ও রাজনীতির কালোছায়ার কারনে অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবিক শিক্ষা বিচ্যুতি ঘটে থাকে। এর ফলে "সেশন জট" সহ আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

 

বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে যোগদানের সর্বোচ্চ বয়স যেহেতু ৩০ বছর, সেখানে একজন শিক্ষার্থীকে তার স্নাতকোত্তর সমাপ্ত করতেই অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলতে হয়। অন্যদিকে, চাকরির বাছাই প্রক্রিয়ার সাথে স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিল না থাকায় প্রত্যেক উচ্চ শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীকেই নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য আলাদা করে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় যা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ। এসব কারনে অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীরা বিষন্নতার অতল গহবরে নিজেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এইসব কিছু অতিক্রম করে যদি কেউ চাকরির পরীক্ষা দিতেও যায় দেখা যায় তার বয়স আর বাকি নেই।

 

কিন্তু শুধু এই সকল কারন ই নয়, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বেকারত্ব দূরীকরণের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অসচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও নিয়োগ বানিজ্য এবং স্বজনপ্রীতি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার সময় কোন না কোন কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অসংখ্য সংবাদ আসে।

 

গত কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার ক্যাশ পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায় প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু ব্যাক্তির কারনে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পর তা পরীক্ষা কেন্দ্রে আসার পূর্বেই পরীক্ষার্থীদের কাছে চলে যায়। এর মাধ্যমে এই দালাল চক্র অসহায় ও হতাশাগ্রস্ত বেকারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।

 

অন্যদিকে, একটা চক্র আবার অনেক ছাত্রদের প্রবেশপত্র নিয়ে নকল পরিক্ষার্থী সেজে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ কার্যক্রমের প্রাথমিক ধাপগুলো উত্তীর্ন করতে সাহায্য। এই ফাঁদে পা দেয় কিছু অসহায় উচ্চ শিক্ষিত বেকার শিক্ষার্থী। কিন্তু মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা উর্ত্তীন হতে ব্যার্থ হয়ে সহায় সম্ভলহীন হয়ে নিজেকে আরো গভীর সমস্যায় ফেলে দেয়। অপরদিকে, বেসরকারি খাতে চাকরি পাওয়া আরো কঠিন৷ সেখানে যে পরিমাণ যোগ্যতা ও দক্ষতার দরকার হয় তা আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের দিতে ব্যর্থ হই৷ বিভিন্ন  কারনে হাজারো মেধাবী উচ্চ শিক্ষিত বেসরকারী খাতে চাকরি পেতে ব্যর্থ হচ্ছে।

 

উপরিউক্ত, সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হওয়া এখন সময়ের দাবী। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কোন বিকল্প নেই। তাই উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষণের মাধ্যমে গ্রন্থগত জ্ঞানের শতভাগ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

নিয়োগ কার্যক্রমকে শতভাগ স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থী অনুকূলভাবে নতুন করে সংগঠিত করাটা এখন সময়ের দাবী কারন অধিকাংশ সরকারী নিয়োগ পরীক্ষাতেই স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনার বিষয়াবলি প্রাথমিক ধাপগুলোতে কাজে আসে না। সেক্ষেত্রে অনেকেই স্নাতক এবং তদ্ধোর্ধ শিক্ষাজীবনের পড়াশোনার বিষয়াবলীর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

 

নিয়োগ কার্যক্রমের দূর্নীতি ও দালাল চক্রকে কঠোর হস্তে দমন করে সকলের জন্য সমান নিয়োগ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি খাতে চাকরি নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন স্বজনপ্রীতির কালোহাত না পড়ে সে দিকে সরকার ও রাষ্ট্রকে বিশেষ বিবেচনা রাখতে হবে।

 

কারণ আজকের এই শিক্ষিত জাতিই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা ও বড় বড় কাজের নেতৃত্ব দিবে। এখন থেকেই যদি উপরিউক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায় তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্দ্বিধায় আরও সুন্দর হবে।

 

লেখক: প্রজ্ঞা সূত্রধর ঋতু,শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

একুশে সংবাদ/ইর.প্রতি/এসএপি

Link copied!