AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কে এই আব্দুস সাত্তার?


Ekushey Sangbad
একুশে সংবাদ ডেস্ক
১২:১৮ পিএম, ২৭ এপ্রিল, ২০২১
কে এই আব্দুস সাত্তার?

বাংলাদেশ থেকে নাসায় যোগ দেওয়া প্রথম বিজ্ঞানীর নাম আব্দুস সাত্তার খান। বাংলাদেশের কতজন আব্দুস সাত্তার খান সম্পর্কে জানেন?  আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের এই মহান বিজ্ঞানীর সম্পর্কে না জানালে তারা হতাশায় থেকে যাবে যে আমাদের দেশে মনে হয় তেমন কোন বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছিল না বা যেতে পারে নি। নাসা সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া কষ্টকর। নাসায় কি করা হয় সেটা সম্পর্কে পুরোটা না জানলে এটা জানে নাসা থেকে রকেট পাঠানো হয় পৃথিবীর বাইরে। যাই হোক প্রচার প্রচারণা বিমুখ ব্যক্তি আব্দুস সাত্তার খান, এই নামটি সাবাইকে জানাতে হলে কিছুটা প্রচারের দরকার আছে।

আব্দুস সাত্তার খান ১৯৪১ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নবীনগর উপজেলার খাগাতুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সাত্তারের জন্মের নির্দিষ্ট তারিখটিও সংরক্ষিত করা হয়নি। মাত্র আট বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। এজন্য সাত্তারের মা তাঁকে নিয়ে পিত্রালয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। তখনকার আট দশটা ছেলে-মেয়ের মতোই বেড়ে উঠতে থাকেন সাত্তার খান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জন্য তাঁকে যেতে হতো কয়েক মাইল দুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছোট বেলা থেকে মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছেন জ্ঞানার্জনের অনন্য স্পৃহা।

 প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে বোর্ড স্ট্যান্ড করেন মাধ্যমিকে রতনপুর আবদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ালেখা শেষ করে সুযোগ পান দেশ সেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে ডক্টরেট করতে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৬৮ সালে রসায়নের উপর ডক্টরেট ডিগ্রিও অর্জন করে ফেলেন। 

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাতে হানাদার বাহিনীর নির্মম আক্রোশের শিকার হতে পারতেন সাত্তার। যখন বুঝতে পারলেন পাক সেনারা চলে এসেছে, ততক্ষণে বাইরে পালানোর আর কোনো উপায় নেই। তাই হতবুদ্ধি হয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলেন খাটের নীচে। 

১৯৭৩ সালে সাত্তার খান সংকর ধাতু নিয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য দেশ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এএমএস গবেষণাগারে ২ বছরের জন্য যোগ দেন। ঐ সময়টা ছিল জেট ইঞ্জিনের উন্নয়নকাল।

আব্দুস সাত্তার খান গবেষণায় দুর্দান্ত সাফল্য পান। আইওয়াতে আড়াই বছরের গবেষণায় ১০-এর অধিক অ্যালয় তথা সংকর ধাতু তৈরি করেন। তিনি নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এসব অ্যালয় উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যবহার উপযোগী। 

১৯৭৬ সালে নাসার লুইস রিসার্চ সেন্টারে গবেষণা শুরু করেন আব্দুস সাত্তার খান। এখানে এসে তিনি মহাকাশযানে ব্যবহারোপযোগী সংকর ধাতু নিয়ে কাজ শুরু করেন। তার গবেষণার ফলস্বরূপ তিনি পান নিকেল ও অ্যালুমিনিয়ামের একপ্রকার অত্যন্ত উন্নতমানের সংকর। এই ধাতু বিমানের জ্বালানী সাশ্রয় করে, উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে এবং কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া এসব ধাতুর ব্যবহার ছিল রকেটেও।

সাত্তার খানের উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন বিমান বাহিনীর জন্য দ্রুতগতির এফ-১৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তৈরির কাজে সরাসরি নিযুক্ত হন তিনি। ৭০-এর দশকে বিমান তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় সাত্তার খান জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান প্রাট অ্যান্ড হুইটনির নজরে আসেন। এজন্য এ কোম্পানি সাত্তার খানকে গবেষণার জন্য অর্থায়ন করে।  

আব্দুস সাত্তার খানের কিছু গবেষণার কথা না বললেই নয়, যা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এখনো ব্যবহৃত হয়ে আসছে-

·         কাটিং-এজ জেট ইঞ্জিনের জ্বালানি বাষ্পে তাঁর তৈরি ন্যানো-ক্যাটালিস্ট ব্যবহার করা হয়, যা অর্থসাশ্রয়ী।

·         তাঁর গবেষণা যুদ্ধ বিমানের ইঞ্জিনকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী করার ফলে যুদ্ধবিমান অধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারছে।

·         প্রাট অ্যান্ড হুইটনিতে থাকাকালীন তার গবেষণায় প্রাপ্ত তাপীয় অবসাদ ও ক্ষয়রোধী প্রলেপ দেয়ার পদ্ধতি চালু হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক সাফল্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

·         আলস্টম কোম্পানির ব্যবহৃত গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন উন্নয়নে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি।

·         আলস্টমের অত্যাধুনিক জি-১১ গ্যাস টারবাইনে ব্যবহৃত হচ্ছে তাঁর আবিষ্কৃত জারণরোধী প্রলেপযুক্ত যন্ত্রাংশ।

একুশ শতকের আগমনের সাথে সাথে কর্মস্থল পরিবর্তন করেন আবদুস সাত্তার খান। তিনি বলেছিলেন, একস্থানে কাজ করে একঘেয়েমি ধরে গিয়েছিল তার। প্রাট অ্যান্ড হুইটনি ছড়ে দিয়ে যোগ দিলেন সুইজারল্যান্ডের আলস্টম কোম্পানিতে। তখন জ্বালানি উৎপাদনের জন্য এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে মাত্র পাঁচ বছর কাজ করেই নামের পাশে যোগ করেন ২৫টি পেটেন্ট এবং পুরো জীবনে তিনি ৩১ টি পেটেন্টের মালিক হয়েছেন। 

গবেষণা এবং মহাকাশে তার প্রয়োগের জন্য তিনি নাসা, আমেরিকান বিমানবাহিনী, ইউনাইটেড টেকনোলজি এবং অ্যালস্টম থেকে আব্দুস সাত্তার খান অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্য পেশাজীবী বিজ্ঞানী হিসেবে রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি এবং এর আগে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি থেকে ফেলো নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি অব মেটালসেরও সদস্যপদ পান তিনি।

বাংলার মানুষের কথা ভেবে ১৯৯১ সালে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশের জন্য প্রায় ৬১০০০ ডলার সংগ্রহ করে রেড ক্রসের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পাঠান। দেশের মানুষের জন্য তিনি সাধ্য মত চেষ্টা করে গেছেন।

জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়েছেন আমেরিকায়, সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়ে। ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি, ৬৭ বছর বয়সে আমেরিকার ফ্লোরিডায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আমাদের দেশের এই মহান বিজ্ঞানীর নাম নয় শুধু তার কাজের জন্য বিশ্ববাসী যেমনি ভাবে সম্মান এবং তাঁকে স্মরণ করে, ঠিক তেমনি করে আমাদেরও তার সম্পর্কে এবং তার কাজ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

 

একুশে সংবাদ/এ/ব

Link copied!