ঢাকায় সিনেমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট নায়ক শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহর মৃত্যু দিবস আজ। ২৬ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অগণিত ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান এ নায়ক। মাত্র ৩ বছরের ক্যারিয়ারে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন তিনি। এখনো জানা সম্ভব হয়নি তার রহস্যজনক মৃত্যুর আসল কারণ। অপমৃত্যু নাকি হত্যাকাণ্ড এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা।
সালমান শাহর প্রয়াণ দিবসে জনপ্রিয় নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে বেশ লম্বা স্মৃতিচারণ করে পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন তার অনুভূতির কথা।
একটি ছবি পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘সালমান শাহ ইমন (আদরের ছোট ভাই) যদি এই পৃথিবীতে সত্যি সত্যি বেঁচে থাকতেন, আমার প্রথম ছবির নায়ক তিনিই হতেন। আমি আমার বহু ইন্টারভিউতে এটা বলেছি মুখ দিয়ে। এবং এটাও বলেছি আমার ‘বিশ্বসুন্দরী’র ইন্টারভিউতে বহুবার যে, সেক্ষেত্রে সিয়ামকে না পেলে এই গল্প চেঞ্জ করব।
তিনি লেখেন, ‘কাজ করতে গিয়ে অনেক মিস করি সালমান শাহকে। তবে হ্যাঁ তিনি আছেন। সবার মনে, আজও অমলিন। কারণ, তার ছিল কাজের প্রতি ভালোবাসা। আর পরিচালক থেকে শুরু করে সবার প্রতি সম্মান। ‘সৃষ্টি অডিও ভিশন’ থেকে নাটক হলো অরুন চৌধুরীর লেখা ‘নয়ন’ ১৯৯৫ সালে। প্রডিউসার দেওয়ান হাবীব ভাই। গান লেখা অরুণ চৌধুরীর। গেয়েছিলেন শুভ্র দেব, শমী কায়সার, তমালিকা, ডলি জহুর, কাশেম আংকেল অভিনীত আহ! কী সুন্দর নাটক! কাজের প্রতি ইমনের (সালমান শাহ) ডেডিকেশন দেখে মুগ্ধ হলাম সবাই। আহারে ইমন। কত আনন্দ নিয়ে কাজ করতাম! আহ! ইমন, শমী, তমাল। ডিওপি ছিলেন বুলু ভাই, ছোট বেলার কত কিছু মনে পড়ে যায়! নীলা আন্টি আমাকে আর আমার বোনকে অনেক আদর করতেন। আর সালমান শাহ সুপারস্টার হওয়ার পরেও একরকম ছিলেন। এত সুন্দর ব্যবহার। অরুণ চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ের পরেও তা বদল হয়নি। বাসায় আসলে গল্প করত, মাঝে মধ্যে কিছু কষ্টের কথা শেয়ার করত! আমি মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনতাম মালিবাগের ৫ তলার বাসায়।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সালমান তুমি তখন যেমন আধুনিক ছিলে, আজও তুমিই আধুনিক। তুমি একমাত্র ‘অনলি ওয়ান’। মনে পড়ে যায়, এই দিনে তোমার চলে যাওয়ার পর বিটিভিতে আবারও নয়ন প্রচার হয়েছিল এবং ঢাকা শহরের রাস্তা দেখে মনে হয়েছিল সেদিন, যেন কারফিউ দেওয়া হয়েছে। সব সুনসান। কারণ, তখন একমাত্র চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন।এবং এটা সাড়া জাগানো জনপ্রিয় নাটক ছিল ইমনের। সত্যি আজও আমার মনে পড়ে যায় সব। নয়ন দেখার পর আমাদের ছেলে অনন্য প্রতীক ছোট বেলায় বলত, বড় হয়ে আমি সালমান শাহ হবো! সালমান, তোমার মতো কেউ নেই।তোমার মতো কেউ আসেনি। তুমি একমাত্র, যার জন্য আজও এত বছর হয়ে গেল চোখ ভেসে যায় জলে। কত মানুষ আসে যায়। কিন্ত বুকের ভিতর এমন হাহাকার তোমার জন্যই হয়। যেখানেই থাকো ভালো থেকো। সবাই তোমাকে ভালোবাসে। আর এত কম সময়ে তুমি যা করে গিয়েছিলে, তা কেউ করতে পারেনি। ভালো অভিনয় শিল্পী অনেকেই হতে পারে। কিন্ত জনপ্রিয়তা আর তা ধরে রাখা এত বছর ধরে, সহজ না আর তা এমনি এমনি হয় না। ভালোবাসা, শ্রদ্ধা তোমার জন্য। অনেক প্রার্থনা তোমার জন্য।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে আগমন। প্রথম ছবিতেই সারাদেশের মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব আর সুদর্শন চেহারা দিয়ে।
স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে সালমান শাহ ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন। তার প্রায় প্রতিটি সিনেমা ব্যবসা সফল ছিল। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমযুদ্ধ, কন্যা দান, দেন মোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জুমান, মহা মিলন, আশা ভালোবাসা, বিচার হবে, এইঘর এই সংসার, প্রিয়জন, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নেই, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়সী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু উল্লেখযোগ্য।
এসব সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন মৌসুমী, শাবনুর, লিমা, শাবনাজ, বৃষ্টি, শাহনাজ, শ্যামা প্রমুখ। কেয়ামত থেকে কেয়ামত সালমানের সঙ্গে মৌসুমীর অভিনয় এবং এই জুটি পরিচিত হলেও শাবনুরের সঙ্গে তার জুটিবদ্ধ সিনেমার সংখ্যা বেশি। এবং এই জুটিই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
একুশে সংবাদ/আরটি/এসএপি/
আপনার মতামত লিখুন :