বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতেই সবকটি সূচকে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই বন্দরে জাহাজ আগমন, কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং, রাজস্ব আয় এবং নিট মুনাফা—সব ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনুস দায়িত্ব গ্রহণের পর মোংলা বন্দরের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের নিয়মিত পরিদর্শন ও দিকনির্দেশনায় এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) মোংলা বন্দরে আগত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা ৮৩০টি, যা পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (৮০০টি)-এর চেয়ে ৩.৭৫% বেশি। কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১০৪.১২ লাখ মেট্রিক টন—লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭.২৫% বেশি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১,৪৫৬ টিইইউ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.২৮% বেশি। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৪৩.৩৩ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা (৩৩৩.৮৭ কোটি টাকা) থেকে ২.৮৩% বেশি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৬২.১০ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার (২০.৪৬ কোটি টাকা) তুলনায় ২০৩.৪৯% বেশি।
এছাড়া, চলতি অর্থবছরে ১১,৫৭৯ ইউনিট রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি হয়েছে মোংলা বন্দর দিয়ে, যা বন্দরটির সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে একটি।
বর্তমানে মোংলা বন্দরে রয়েছে ৫টি জেটি, ৪টি ট্রানজিট শেড, ২টি ওয়্যারহাউজ, ৭টি কন্টেইনার ইয়ার্ড এবং ২টি গাড়ি ইয়ার্ড। বন্দরের অপারেশনাল সক্ষমতায় রয়েছে ১৩৪টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, ৩৮টি সহায়ক জলযান, ১৬২টি রেফার প্লাগ পয়েন্ট এবং ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সুবিধা—যার মাধ্যমে একই জায়গা থেকে পারমিশন, বিল পরিশোধ ও ইকুইপমেন্ট বুকিংয়ের সকল সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইএসপিএস কোড অনুসরণ, কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল এবং ১৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ারসহ প্রয়োজনীয় নেভিগেশন সুবিধা রয়েছে।
বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে বর্তমানে চারটি বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে:
১. সহায়ক জলযান সংগ্রহ
২. পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং
৩. মোংলা পোর্ট আপগ্রেডেশন প্রকল্প
৪. অসমাপ্ত দুটি জেটির নির্মাণ
সম্প্রতি অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বন্দরের অবকাঠামো আধুনিকায়ন ও চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং। আরও তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ট্রেইলিং সাকশন হপার ড্রেজার এবং কাটার সাকশন ড্রেজার সংগ্রহ।
আগামী দিনের লক্ষ্যমাত্রা:
জাহাজ হ্যান্ডলিং: ১,৫০০টি
কার্গো হ্যান্ডলিং: ১.৫ কোটি মেট্রিক টন
কন্টেইনার হ্যান্ডলিং: ১ লাখ টিইইউ
গাড়ি আমদানি: ২০,০০০ ইউনিট
তবে বন্দরের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে—যেমন চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষা, পুরাতন জলযান প্রতিস্থাপন, দক্ষ জনবল সৃষ্টি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা।
বর্তমানে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, গ্যাস, কয়লা, স্টিল পাইপ, চিটাগুড়সহ নানা পণ্য আমদানি হচ্ছে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, হিমায়িত মাছ, কাঁকড়া ও যন্ত্রাংশ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমানের নেতৃত্বে বন্দর কার্যক্রমে নতুন গতি এসেছে। তিনি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন এবং Internal Business Development Standing Committee গঠন করে জাহাজ আগমনের হার বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
একুশে সংবাদ/বা.প্র/এ.জে