আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফটিকছড়িতে কার হাতে উঠবে ধানের শীষ!

বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে নির্বাচনের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে বরাবরই আলোচনা-সমালোচনা চলেছে। বিশেষ করে ‘জুলাই বিপ্লবের’ পর সেই বিতর্ক আরও তীব্র হয়। সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনি পরিকল্পনা অনেকটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

ওই বৈঠকে ড. ইউনূস ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আভাস দেওয়ার পর সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী থেকে আজ-অব্দি ফটিকছড়ি আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পাঁচবার প্রার্থী দিয়েছিল, তন্মধ্যে চার বার বিজয়ী ও একবার বিজিত হয়েছিল। বিগত দিনে বিএনপির মনোনীত বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে এল.কে. সিদ্দিকী একাই (১৯৭৯ ও ১৯৯১ ) দুই বার জয়ী হন। ৯৬-এর ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তিনি পুনরায় বিজয়ী হলেও একই বছরের জুনের নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি থেকে বিপুল সংখ্যক ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন আলহাজ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মরহুম)। পরবর্তীতে তিনি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জেল-জুলুমের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত পৃথিবী থেকেই বিদায় নেন।

২০১৪ ও ২০২৪ সালের আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। এছাড়াও আসনটি থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছিলেন প্রয়াত জামাল উদ্দিন আহমেদ, কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার প্রমুখ।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করলে সারা দেশের মতো ফটিকছড়িতেও সর্বত্র চলছে গুঞ্জন ও আলোচনা। চায়ের দোকান থেকে লোকাল বাস, সর্বত্র একটি কথা, তাহলে ফটিকছড়িতে কার হাতে উঠছে ধানের শীষ?

ফটিকছড়িতে ঘুরে যে-সব প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাদের গণি চৌধুরী, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শিল্পপতি সরওয়ার আলমগীর, বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক, গতবারের প্রার্থী কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ ফয়জীর নাম উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও কেউ কেউ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ সালাহউদ্দিন ও ডাব নেতা খুরশিদ জামিলের কথাও বলছে।

উপজেলা নেতৃত্বে ক্ষমতাকেন্দ্রিক মতবিরোধের কারণে গোটা ফটিকছড়ির কর্মীদের মধ্যেও বিভাজন লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষত সরওয়ার আলমগীর গ্রুপ ও বাহার গ্রুপ নামে দুটি গ্রুপের কথা সর্বত্র আলোচিত। উভয় গ্রুপের লোকজন মনে করে, তাদের নেতাই সর্বোচ্চ যোগ্য।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ইতিমধ্যে প্রার্থী সিলেকশন ও মনোনয়ন পেতে প্রার্থীর বিশেষ গুণের কথা ঘোষণা করেছেন।

দলীয় সূত্র ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, এবার তিনটি মানদণ্ডে প্রার্থী নির্ধারিত হবে :

১. ত্যাগ ও সংগ্রাম, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সক্রিয় এবং নির্যাতিত নেতাদের অগ্রাধিকার।
২. সততা ও সুনাম, দুর্নীতিমুক্ত, জনআস্থাভাজন ও সুনামধন্য ব্যক্তিত্ব।
৩. জনগণের গ্রহণযোগ্যতা, যার স্থানীয় জনসম্পৃক্ততা ও জনপ্রিয়তা বেশি।

মাঠপর্যায়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি ভক্ত ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, এবার অতীতের বিভক্তি ভুলে সবাই একযোগে মাঠে নামবেন। দলের স্বার্থে আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলের হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই সবাই একযোগে কাজ করবে।

অনেকে মনে করেন, উপজেলার শীর্ষ নেতারা যদি একে অপরকে ছাড় না দেয়, তাহলে ২০০৮ সালের মতো চৌধুরী পরিবারের কেউ ভাগিয়ে নিতে পারে আগামী নির্বাচনের টিকিট।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ফটিকছড়িতে ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। তৃণমূল সূত্র মতে, কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার, কাদের গণি চৌধুরী এবং সরওয়ার আলমগীরের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হাইকমান্ড থেকে।

এখন দেখার বিষয়, চট্টগ্রাম-০২ (ফটিকছড়ি) আসনে কে হচ্ছেন ধানের শীষের কাণ্ডারী।

একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে