জয়পুরহাট জেলার কালাই পৌরসভা গঠিত হয় প্রায় ২৪ বছর আগে। অথচ দীর্ঘ এই সময়ে পৌর এলাকায় একটি নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশনও নির্মাণ হয়নি। ফলে বাড়িঘর, হাসপাতাল, বাজার ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন যে বর্জ্য তৈরি হয়, তা ফেলা হচ্ছে উন্মুক্ত জলাশয়ে, রাস্তার পাশে এবং জনগণের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। শহরের বুক চিরে প্রবাহিত উন্মুক্ত জলাশয়টি এখন ধীরে ধীরে একটি ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে।
তথ্যবিবরণীতে জানা যায়, ২০০১ সালে জয়পুরহাট জেলার প্রবেশদ্বারে ১২.৯২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে কালাই পৌরসভা গঠিত হয়। ২০১৮ সালে এটি “গ” শ্রেণী থেকে “ক” শ্রেণীতে উন্নীত হয়। ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে প্রায় ২৪ হাজার মানুষের বসবাস। অথচ এত সময়েও পৌর এলাকায় নির্দিষ্ট কোনো ডাম্পিং স্টেশন তৈরি হয়নি। এমনকি পৌরসভার নিজস্ব কোনো জায়গাও নেই যেখানে নিয়মিতভাবে বর্জ্য ফেলা যাবে।
প্রতিদিন সকালে কালাই পৌরসভার একটি পিকআপ ভ্যানে করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পাঁচশিরা বাজারের পূর্ব পাশে উন্মুক্ত জলাশয়ে এবং জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে টিএন্ডটি এলাকায়। একইভাবে সড়াইল গ্রামের পূর্ব পাশের সড়কের ধারে বর্জ্য ফেলার চিত্রও প্রতিদিন দেখা যায়। দুর্গন্ধের কারণে এসব রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অনেকেই মুখে কাপড় চেপে চলাচল করেন। এর ফলে বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে রয়েছেন, বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা। মাঝে মাঝে এই বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে করে পরিবেশ আরও বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চার কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত উন্মুক্ত জলাশয় আজ দখল ও দূষণের শিকার। ময়লা ফেলার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই জলাশয়ের জায়গা দখল করে নির্মাণ করছেন রাস্তা, ঘরবাড়ি ও দোকান। তারা আশঙ্কা করছেন, এইভাবে চলতে থাকলে জলাশয়টির অস্তিত্বই একসময় বিলীন হয়ে যাবে এবং তার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।
পাঁচশিরা এলাকার বাসিন্দা মো. হেলালউদ্দিন ও সালেহা বেগম বলেন, “এই সড়কে চলতে গেলে দম বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন বাজারে যাওয়া লাগে, কিন্তু দুর্গন্ধ আর সহ্য করতে পারছি না।”
কালাই ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তাসিন আরিফ বলেন, “গত প্রায় ১০ বছর ধরে এভাবেই রাস্তার পাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। অনেকে প্রতিবাদ করেছে, ফেসবুকেও লিখেছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”
সড়াইল গ্রামের বাসিন্দা আশরাফ হোসেন বলেন, “উন্মুক্ত জলাশয় ও মহাসড়কের পাশে প্রতিদিন ময়লা ফেলা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। পথচারীরা মুখে রুমাল দিয়ে চলাচল করছেন। আমরা নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দাবি জানাচ্ছি।”
প্রবীণ শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, “দুই দশকের বেশি সময় ধরে একটি পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশন না থাকা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা উচিত।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী জানান, তাদের বিকল্প কোনো স্থান দেখিয়ে দেওয়া হয়নি, কোথায় ময়লা ফেলতে হবে সে নির্দেশনাও নেই। তাই তারা বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত জায়গাতেই বর্জ্য ফেলছেন।
পৌর প্রশাসক ও কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান বলেন, “আমরা জানি শহরটি ভবিষ্যতে বড় শহরে পরিণত হবে। সে লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের চেষ্টা চলছে। তবে অর্থ ও জায়গার সংকটের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করা যাচ্ছে না।”
একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে