রাজশাহীর তানোরে যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সীর দখলবাজিতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপির ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পর থেকেই মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিনের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এতে জনমনে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের পাশাপাশি বিএনপির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি (সোমবার) তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের মালশিরা গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক পরিবারের চাতাল দখল করে নেন শরিফ উদ্দিন মুন্সী। ভুক্তভোগী পরিবার দাবি করেছে, ওই জমি শরিফ উদ্দিন বহিরাগত ভাড়াটিয়া ক্যাডার দিয়ে জোরপূর্বক দখল করেন।
এ ঘটনায় ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মালশিরা গ্রামের দিলিপ কুমার মণ্ডলের পুত্র সেতু কুমার মণ্ডল তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কামারগাঁ ইউনিয়নের মালশিরা মৌজার খতিয়ান নং ৩১৬, দাগ নং ৬৬৩ ও ৬৬৪—মোট ২০.৩৩ শতক জমি, শ্রেণি: চাতাল—২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ক্রয় করেন দিলিপ কুমারের স্ত্রী লিপি রাণী ও ছেলে সেতু কুমার মণ্ডল। শরিফ মুন্সী এখন জোর করে এই সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন শরিফ মুন্সী। গোকুল গ্রামে বিএনপির আয়োজিত কর্মীসভায় মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিনকে প্রধান অতিথি করায় সভা পণ্ড করে দেন তিনি। এছাড়া বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শিল্পপতি অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেকের মাদারীপুরে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানেও হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ১৬ মে (শুক্রবার) বিকেলে তার নির্দেশে ক্যাডার বাহিনী চৌবাড়িয়া গরুহাটে গরু ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলামকে লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে, পরে টেনেহিঁচড়ে পাশের এলাকায় নিয়ে গিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখে এবং তার গরু বিক্রির টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
সাইফুলের ছেলে সজিব ও ভাগ্নে এনামুল জানান, হাটে ৮টি গরু নিয়ে যান সাইফুল। এর মধ্যে ৫টি গরু বিক্রি হলে হামলাকারীরা সেই টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, কামারগাঁ ইউনিয়নে শরিফ উদ্দিন মুন্সী এখন একটি “বিষফোঁড়া” হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, কৃষকের আলুর জমির টাকা আত্মসাৎ, গভীর নলকূপে অপারেটর নিয়োগ বাণিজ্য, মুন্ডুমালা পশুহাটে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে পাঁচন্দর ও চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নে বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে দুই নেতার মৃত্যুর ঘটনায়ও শরিফ মুন্সীর নাম সামনে এসেছে, অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযুক্ত যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন মুন্সী দাবি করেন,“আমি দিলিপ কুমারের কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছি। এখানে কোনো জবরদখলের প্রশ্নই আসে না। দিলিপ যদি জায়গা বুঝিয়ে দেন, তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
ভুক্তভোগী সেতু কুমার মণ্ডল বলেন,“বাবার সঙ্গে শরিফ মুন্সীর কী হয়েছে, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু বাবার কারণে স্ত্রী ও সন্তানের জমি জবরদখল করা যায় না। আমরা আমাদের জমি ফেরত চাই।”
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে