কুমিল্লার তিতাসে বলগেট দিয়ে অবৈধভাবে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব চলছে। যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এর দুই নেতা বালু সিন্ডিকেট তৈরি করে অবৈধ ভাবে ফসলি জমি ভরাটের এ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরিকল্পিত ভাবে সড়কের ধারে খাসজমি, জলাশয়, খাল, বিল, ডোবা, পুকুরসহ কৃষিজমি ভরাট করছে স্থানীয় এ বালু সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালী নেতারা বিএনপির বহিস্কৃত নেতা ও দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাদের শেল্টারে অবৈধ বালু বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেঘনা নদী থেকে অবৈধ ভাবে উত্তোলন করা বালু বলগেট দিয়ে এনে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা ড্রেজার দিয়ে তিতাসের কলাকান্দি ইউনিয়নের খানে বাড়ি এলাকার নির্দিষ্ট বিভিন্ন স্থান ভরাট করে বালু বাণিজ্যের ব্যবসা করে যাচ্ছে কলাকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা মো. শফিক ও কলাকান্দি ইউনিয়নের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে বালু বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে আ`লীগের এ দুই নেতাকে শেল্টার দিচ্ছেন কলাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বহিস্কৃত সদস্য সচিব ছাবিকুল ইসলাম, ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. মামুন ও এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন বিএনপি নেতা।
আ`লীগের ও বিএনপির নেতারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জোড়পূর্বক উচ্চ রেটে জমির মালিকদের বালু ফেলতেও বাধ্য করেন বলেও স্থানীয়রা জানান।
এদিকে গোমতী নদী সংলগ্ন খানে বাড়ি টু কলাকান্দি এলাকার বেড়িবাঁধ সড়কের উপর দিয়ে বলগেট এর বালু সরবরাহ করতে ড্রেজারের লোহার পাইপ বসানোর কারণে ছোট যানবাহন গুলো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে ও সড়কের বিভিন্ন স্থান ভাঙ্গনের ফলে পথচারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হতেও দেখা যায়। তাছাড়াও রাতের বেলা জনবসতির পাশে অস্থায়ী ড্রেজার দিয়ে বলগেটের বালু বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কারণে সাধারণ মানুষকে বিকট শব্দ দূষণের শিকার হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আওয়ামীলীগ নেতাদের মদদ না দেয়ার কথা থাকলেও বিএনপির এ বহিস্কৃত নেতা দলে না থেকেও দলের নাম বিক্রি করে টাকার লোভে আওয়ামীলীগের নেতাদের ব্যবসা বানিজ্য পুনরায় পূর্নবাসন করতে সহযোগিতা করছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
আ`লীগের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যোগসাজশে যে এ বালু বাণিজ্যে চলছে এইটা এলাকার সবাই জানে বিষয়টি এখন "ওপেন সিক্রেট"। এনিয়ে তৃনমূল নেতা-কর্মীদের মাঝেও ক্ষোভ বিদ্যমান। বালু বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ করা নিয়েও গ্রুপিং রয়েছে। এগুলো নিয়ে যে কোন সময় এলাকায় বড় ধরনের একটি সংঘর্ষ হয়ে যাওয়ার আশংকাও রয়েছে।
এবিষয়ে কলাকান্দি ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মো. শফিক বলেন, ৫ই আগষ্টের পর থেকে আমি বালু ব্যবসা করি না। বিএনপি নেতারাই এখন এ বালু ব্যবসা করে। বর্তমানে খানে বাড়িতে এ বালু ব্যবসা করে ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মামুন ও সেন্টু।
কলাকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিজান বলেন, বালু ব্যবসা টা আগে আমরা করতাম আমরা যখন ব্যবসা করতাম তখন এত রাজনৈতিক হিসাব ছিল না। তখন বিএনপি আ`লীগ ছিল না সবাই মিলেমিশেই ব্যবসা বাণিজ্য করেছি। এখন বিএনপির তারা আ`লীগের লোকজন কে ব্যবসা করতে দিচ্ছে না তারা নাকি নিজেরাই এ বালু ব্যবসা করবে। বর্তমানে বালু ব্যবসা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এলাকায় এখন বিএনপি নেতা মামুন ভাই এই বালু ব্যবসা করেন সাথে স্থনীয় তাদের দলের এক নেতাও জড়িত রয়েছে বলে শুনেছি।
কলাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বহিস্কৃত সদস্য সচিব ছাবিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ বালু ব্যবসার সাথে জড়িত নই। এসকল অভিযোগ মিথ্যা। তবে যতটুকু শুনেছি খানে বাড়ি এলাকায় বিএনপি নেতা সেন্টু এ বালু ব্যবসা করেন।
কলাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন মিয়া বলেন, আমার সাথে কোন আ`লীগের লোক বালু ব্যবসায় জড়িত না। আমি একাই এ বালু ব্যবসাটা বর্তমানে করছি। তবে আগে মিজান, শফিক যখন ব্যবসা করতো সেহেতু তাদের কাছে অনেকেই কাজ দেয়। কাজ গুলো কিছু টাকা দিয়ে আমি তাদের থেকে কিনে নেই। আমার সাথে পার্টনারে ব্যবসা করতে কয়েকজন এসে বসেছিল কিন্তু তাদের লেনদেন ঠিক না থাকায় আমি একক ভাবেই বর্তমানে ব্যবসা টা করতেছি। আর যারা বলেছে আমি বালুর রেট বেশি দিয়ে বাধ্য করি বালু নিতে তারা মিথ্যা বলেছে ইব্রাহিম চেয়ারম্যানের ভাই ১১টাকা ফুট নিতো আমি ৮টাকা নেই এর চেয়ে কম নিয়া ব্যবসা সম্ভব না।
একুশে সংবাদ//তি.কু.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :