AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইলিশ মাছের খনি দক্ষিণাঞ্চল


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি,বরিশাল
০৪:০৪ পিএম, ২৪ আগস্ট, ২০২৩
ইলিশ মাছের খনি দক্ষিণাঞ্চল

প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানামুখী প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ মাছ উদ্বৃত্ত থাকছে। এমনকি এ অঞ্চলে মৎস্য সেক্টরে অনুমোদিত জনবলের অর্ধেকেরও বেশি ঘাটতির পাশাপাশি সাগর ও নদ-নদীতে অভিযানের মতো কোনো নৌযান না থাকলেও প্রবৃদ্ধি জাতীয় হারের চেয়ে বেশি। গত ১ দশকে দেশে মাছের উৎপাদন ৫৩ শতাংশ বাড়লেও প্রায় ১১ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্যখাতে প্রবৃদ্ধির পেয়েছে ৭৫ শতাংশ। দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১১২ শতাংশ। আর সারা দেশে ইলিশের ৬৬ শতাংশই আহরিত হয় দক্ষিণাঞ্চলে।

 

একজন মানুষের দৈনন্দিন ৬০ গ্রাম মাছের চাহিদার বিপরীতে আমাদের দেশে তা ইতিমধ্যে ৬২.৫৮ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮’এর হিসেব অনুযায়ী, দেশের মোট জিডিপি’র ৩.৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপি’র ২৫.৩০ শতাংশ মৎস্যখাতের অবদান রেথে চলছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশরও বেশি মানুষ মৎস্য সেক্টর থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন।

 

২০১৬-১৭ সালে দেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও আরও ৫ বছর আগেই দক্ষিণাঞ্চল এখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্ত ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে এবং বদ্ধ জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলও এক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ অঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর বদ্ধ জলাশয়, ৪ লাখ ২৭ হাজার ৪৮২ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয় ছাড়াও প্রায় আড়াই হাজার বেসরকারি মৎস্য খামার, ৫০টির মত সরকারি-বেসরকারি মৎস্য হ্যাচারি, ৯২০টি নার্সারি খামার ছাড়াও প্রায় ৯ হাজার চিংড়ি খামার মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক অবদান রয়েছে।

 

কৃষি ফসলের চেয়ে মাছে মুনাফা বেশি হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের মানুষ মাছ চাষে ঝুঁকছে। তবে ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরে মহাসেন, আম্পান, আয়লা ও সিত্রাং-এর মত ঘূর্ণিঝড়সহ প্রবল বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক মাছের ঘের, পুকুর ও দিঘী প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি মাছ ও পোনা ভেসে গিয়ে চাষিরা সর্বশান্ত হয়। তবে বরিশাল অঞ্চলে ৪২টি উপজেলাতেই মাছ চাষে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে ।

 

দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি নদ-নদীকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে যা উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে অব্যাহত নগরায়নের ফলে মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শহরগুলোর পুকুর, দীঘি ও খালগুলো ক্রমাগত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যা মৎস্য সেক্টরের জন্য একটি বড় হুমকির মুখে পড়বে । বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার পুুকুর ও দীঘি, ৬৬৭টি বরোপীট, ৯০টি প্রবাহমান নদ-নদী, ৪৩টি বিল, একটি বাঁওড় বা মরা নদী, প্রায় দেড় হাজার খাল ও সোয়া ৬শ প্লাবন ভূমি সহ মোট ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরে কম বেশী মাছ উৎপাদন হচ্ছে।

 

এসব জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ২০০৮-০৯ সালে ২ লাখ ৯৮ হাজার টন থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার টন ও ’২১-২২ অর্থ বছরে তা প্রায় ৫ লাখ ৩২ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। যার মধ্যে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার টনের মত। ২১-২২ অর্থ বছরে দেশে ইলিশের সহনীয় আহরন ছিল ৫.৬৬ লাখ টন। এছাড়াও প্রায় ৬০ হাজার টন রুই জাতীয় মাছ এবং পাঙ্গাস, শিং-মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া এবং চিংড়ি ছাড়াও অন্যান্য মাছের উৎপাদনও ছিল দেড় লাখ টনের মত। এ সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি ৫০টি হ্যাচারি ও ৯২৩টি নার্সারিতে প্রায় ১৮ হাজার কেজি রেনু ও ২৫ লাখ ১৮ হাজার মাছের পোনা উৎপাদন হয়েছে।

 

বরিশাল অঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ জেলে মৎস্য সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। যার মধ্যে মৎস্য অধিদফতরের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ৪৭৪। এ অঞ্চলে জেলে পরিবারের সংখ্যা আড়াই লাখের মত। মৎস্য অধিদফতরের অপর এক পরিসংখ্যানে দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগেই প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জেলে ইলিশ আহরণে জড়িত। যার ৬৫ শতাংশ সার্বক্ষণিক ও ৩৫ শতাংশ খন্ডকালীন ।

 

বিগত ২২-২৩ অর্থবছরে বরিশাল অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার জলাশয়ে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে ৫৩ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা অবমুক্ত করেছে মৎস্য অধিদফতর। সরকার ২০১২-১৩ অর্থ বছরকে ভিত্তি হিসেবে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের মৎস্য চাষি ও মৎস্যজীবীদের আয় ২০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলেও বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানান হয়েছে। দেশের বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ কার্যক্রম অতীতে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও অতি সম্প্রতি তা কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়েছে। বরিশাল অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার খাঁচায় ১২ শ মৎস্যজীবী মাছ চাষ করে বছরে প্রায় এক হাজার টন বিভিন্ন ধরনের মাছ উৎপাদন হয়েছে ।

 

পাশাপাশি এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কাকড়া ও কুচিয়া চাষ যথেষ্ট সম্প্রসারণ ঘটছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ অঞ্চলের ৩ হাজার টন কুচিয়া ও সাড়ে ৭শ খামারে ৩শ টন কাকড়া উৎপাদন হয়েছে। ৬টি জেলার ১১টি উপজেলায় পুকুরে কিশোর কাকড়া চাষ, পেনে কাকড়া মোটা তাজাকরণ, খাঁচায় কাকড়া মোটা তাজাকরণ ও সামাজিক পর্যায়ে কুচিয়া চাষ-এর ২৫টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি উপজেলার প্রায় ৩ হাজার মৎসজীবী দেড় হাজার টন শুটকি উৎপাদন করেছে। যার পুরোটাই ছিল রোদে শুকানোর মত লাগসই প্রযুক্তির এবং কীটনাশক মুক্ত।

 

জনবল সংকটে বরিশাল বিভাগে মৎস্য অধিদফতরের কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার জন্য মাত্র ১৭০ কর্মকর্তার মঞ্জুরিকৃত জনবলের ১০১টি পদই শূন্য। পাশাপাশি ২শ কর্মচারীর অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১২০ জন। এ অঞ্চলে সিনিয়র সহকারী পরিচালকের ৭টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১ জন। চার জন সহকারী পরিচালকের পদের বিপরীতে কর্মরত ২ জন। অনুরূপভাবে প্রতিটি জেলা ও উপজেলাতেই বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় বরিশাল অঞ্চল জুড়েই মৎস্য চাষ ও উৎপাদন সহ সার্বিক কার্যক্রমই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

 

বরগুনা পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হোসাইন বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণেই দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। উপকূলীয় জেলেরা বেশ ভালোই ইলিশ আহরণ করেছেন। তিনি বলেন, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে সরকার কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট ছোট থাকায় এক সঙ্গে বেশি ট্রলার ভিড়তে পারে না। এ কারণে অন্য এলাকার ট্রলার এখানে আসে না। বাজারটি আরও বড় করা হলে বেশি ট্রলার এখানে মাছ বিক্রি করতে আসবে।

 

বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক বলেন, নদ-নদী বহুল দক্ষিণাঞ্চলে মাছ চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি উন্নত প্রযুক্তিতে মাছচাষ সম্প্রসারণে। এ লক্ষ্যে মাছ চাষে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তোলাসহ সব মৎস্যচাষিকে উন্নত প্রযুক্তিতে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

 

একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা

Link copied!