মোখার ভয়ে প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সাত হাজার বাসিন্দা এক প্রকার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। দ্বীপের সরকারি-বেসরকারি ৩৭টি স্থাপনায় আশ্রয় নেওয়া দ্বীপবাসীকে ঘূর্ণিঝড় মোখার চেয়েও দ্বীপের ‘বড় অংশ তলিয়ে যাওয়ার’ আতঙ্ক পেয়ে বসেছে। নানা সময়ে দ্বীপের পরিবেশ নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়েছে বটে, কিন্তু দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার মতো ‘মন্তব্যে’ দ্বীপবাসী ভয়ের মধ্যে সময় পার করেছেন।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া সৈকতকর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা সারা রাত ঘুমাইনি।
আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া লোকজনের মুখে শুধু দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে আমরা বেশি আতঙ্কিত দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। ’ তিনি জানান, দ্বীপের বাসিন্দারা ঝড়-বৃষ্টি মোকাবেলা করেই দিন কাটিয়ে আসছে।
দ্বীপের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে নতুন তথ্যটি হচ্ছে, দ্বীপ তলিয়ে যাওয়ার কথাটি। এর আগে তারা এমন ভীতির মুখে তেমন আর পড়েননি।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘দ্বীপ রক্ষা পেয়েছে, এ জন্য আমরা গর্বিত। ’
উল্লেখ্য, কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বিভিন্ন মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আলোচনাকালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অংশবিশেষ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া গতকাল দুপুর থেকে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এসব খবর ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবরটি দ্বীপবাসীকে নাড়া দিয়েছে।
এদিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আজ সকাল থেকে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে জেলা শহরসহ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলেও বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মাঝারি এবং হালকা বৃষ্টিপাতও রয়েছে। সাগরের পানিও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট বেড়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯ মিলিমিটার ও উল্লিখিত সময়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৪৩ কিলোমিটার।
কক্সবাজার জেলার আট উপজেলা ও চারটি পৌরসভায় আজ সকাল পর্যন্ত দুই লাখ ২৭ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৭৬টি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০টি। কক্সবাজার জেলা শহর, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকায় সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/ন.ট.প্র/জাহাঙ্গীর
আপনার মতামত লিখুন :