পুরোনো স্কুলের ভূত
একুশে সংবাদ : টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসের কোণে ছোটখাটো একটা ভিড় জমে গেছে। অমি সবাইকে গ্রামের পুরোনো স্কুলটার ভূতের বর্ণনা দিচ্ছে। কেউ বিশ্বাস না করলেও সায়েম ঠিকই বিশ্বাস করছে এবং তার ভীষণ ভয়ও করছে।
‘চল, সবাই মিলে ভূতটা দেখতে যাই।’ প্রস্তাব দিল ক্লাসের সবচেয়ে সাহসী ছেলে নাফি। মারুফও সায় দিল তাতে। দুই যমজ বোন রুমা, সুমাও যেতে রাজি। কিন্তু তারা স্কুলটার ঠিক কোথায় ভূত পাবে তা জানে না। তাই অমি আর সায়েমও যাবে। প্রথমটায় সায়েম যেতে চাচ্ছিল না। তার ভূতে ভীষণ ভয়। অমিই তাকে জোর করে রাজি করাল।
সন্ধ্যার পর দেখা করবে বলে সেদিনের মতো সবাই যে যে যার যার মতো চলে গেল। সন্ধ্যার পরেই সায়েম ছাড়া সবাই অমিদের বাড়ির পেছনে হাজির হলো। প্রথমটায় ওরা অবশ্য ভেবেছিল, সায়েমকে ছাড়াই চলে যাবে। পরে দেখা গেল, একটু দেরি হলেও ভিতু সায়েম ঠিকই দলে এসে যোগ দিয়েছে।
‘এই হলো সেই স্কুল’, অমির কণ্ঠস্বর কেমন ভয়ার্ত শোনাল। আশপাশে বাতাস না থাকলেও গাছপালা নড়েচড়ে ওঠে। ক্লাসগুলোর ভেতর আলো জ্বলতে-নিভতে থাকে, ছোট বাচ্চাদের পড়ার শব্দ শোনা যায়। আর...
‘শুধুই বকবক করবি, না ভেতরে যাবি?’ বলে সায়েম স্কুলের দিকে এগোয়। সবাই অবাক হয়ে লক্ষ করে সায়েম এতটুকুও ভয় পাচ্ছে না। ওরা পুরো স্কুলটা একবার ঢুঁ মেরে আসে, অস্বাভাবিক কিছুই চোখে পড়ে না। শেষে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যেই না গেট দিয়ে বের হবে, তক্ষুনি তাদের সামনে দিয়ে সাঁই করে একটা গাড়ি দ্রুত বেগে স্কুলে প্রবেশ করে।
‘এত রাতে গাড়ি আসবে কোথা থেকে?’ রুমা জিজ্ঞেস করে।
গাড়িটা সোজা স্কুলের অফিস রুমের সামনে গিয়ে থামে। তিনজন লোক গাড়ি থেকে নেমে অফিস রুমের ভেতরে ঢোকে। অমিরা রুমের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ওদের কথা শুনে অমিরা বুঝতে পারে, লোকগুলো শিশু পাচারকারী। পাচার করার জন্য দুটো বাচ্চাকে ধরে এনেছে। সায়েম বলল, ‘মারুফ, তোর মামা না পুলিশের আইজি? তুই আর আমি বাইরে গিয়ে তোর মামার সঙ্গে যোগাযোগ করি। নাফি, রুমা আর সুমা গাড়ির ভেতরের বাচ্চা দুটাকে উদ্ধারের চেষ্টা কর। আমি লোকগুলোকে দেখছি।’ সায়েমের সাহস দেখে এবার সবাই অবাক হয়ে যায়।
নাবিহা জাহাননাবিহা জাহান
সায়েম সবাইকে তাগাদা দিল। নাফি, রুমা আর সুমা গাড়ির কাছে চলে যায়। লক করা গাড়িটার ভেতর দুটো ছেলেকে দেখতে পায়। লক খোলার বহু চেষ্টা করছে ওরা। তখন সায়েম এসে ওদের কাছে একটা চাবি দিল। সেটা দিয়ে দরজা খুলে ছেলেগুলোকে বের করল।
রুমা জিজ্ঞেস করল, ‘চাবি কোথায় পেলি?’
এর মধ্যে অমিরা চলে এসেছে পুলিশ নিয়ে। ভাগ্যিস, থানাটা স্কুলের কাছেই ছিল। পুলিশ আঙ্কেল কাছে আসতেই সায়েম হাত দিয়ে অফিস রুম দেখিয়ে দিল। অফিস রুমে গিয়ে দেখা গেল, লোকগুলো মাটিতে পড়ে আছে। কেউ বিশ্বাসই করতে পারল না যে সায়েম একা লোকগুলোকে মেরেছে। আমি জিজ্ঞাসা করতেই সায়েম তার অদ্ভুত রকমের হাসিটা দিল। বলল, ‘পরে সব জানতে পারবি।’
পরের দিন স্কুলের সবাই ওদের খুব তারিফ করল। কিন্তু সায়েম সেদিন অনুপস্থিত। পরের দুই সপ্তাহ সে স্কুলে এল না। খবর নিতে নাফিরা গেল সায়েমের বাসায়।
বেল বাজাতেই সায়েমের মা এসে দরজা খুলে দিলেন। নাফি জিজ্ঞাসা করল, ‘আন্টি সায়েম কোথায়?’ আন্টি ওদের সায়েমের রুমে নিয়ে গেলেন। ওরা দেখল সায়েমের ভীষণ জ্বর।
সায়েম বলল, ‘সরি। রাগ করিস না। আসলে আমার ভীষণ জ্বর ছিল সেদিন। তাই আসতে পারিনি।’
সবাই অবাক! তাহলে ওদের সঙ্গে কে ছিল
একুশে সংবাদ // পপি // প্রআ // ২৭.০২.১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :