AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ঋতুচক্রের লীলায় প্রকৃতিতে শীত এসেছে


Ekushey Sangbad
পর্যটন ডেস্ক
০৫:০২ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩
ঋতুচক্রের লীলায় প্রকৃতিতে শীত এসেছে

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের সোনার বাংলাদেশ। ঋতুচক্রের খেলায় বাংলার বুকে ঋতু পরিবর্তন হয় নিজস্ব ধারায়। গ্রীষ্মের পর বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ৬টি ঋতুর ক্রমান্বয়ে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশের ধারা বাংলার বুকে আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। বাংলার ঋতুরঙ্গে প্রকৃতি সেজে ওঠে বিচিত্র সাজে। যেমনি তার নয়নমনোহর রূপ তেমনি সৌন্দর্যের বিচিত্র বিলাস। এমন ষড়ৈশ্বর্যময়ী রূপ মনে হয় আর কোথাও দেখা যায় না। 

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের পূর্বে কুয়াশার চাদর গায়ে দিয়ে শীতের আগমন ঘটে। চারদিকে ঘন কুয়াশায় ঘেরা প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক অজানা রহস্য। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে পৌষ ও মাঘ অর্থাৎ ইংরেজি ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি হতে মধ্য ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতের আধিপত্য বাংলার বুকে।

শীত দিনের দৈর্ঘ্য ছোট এবং রাতের দৈর্ঘ্য বড় হয়ে থাকে। হেমন্তের সোনাঝরা মাঠে শীতের আগমনে তিক্ততায় ভরে ওঠে প্রকৃতি। শীতের আগমনে উত্তরের হিমেল হাওয়া হাড়ে কাঁপন জাগায়, গাছের সবুজ পাতাগুলো হলুদ বরণ হয়ে যায়। ঝরাপাতার রিক্ত শাখা শীতে বিবর্ণ হয়ে প্রকৃতির সবুজ শ্যামলিমা রং বিবর্ণ করে দেয়। শীতের রাতে মানুষ লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। লেপের নীচ থেকে যেন উঠতে ইচ্ছা করে না তাদের। চোখে থাকে ঘুমের আবেশ। কত বেলা হয়েছে তাও বোঝা যায় না। শীতের সকাল যেন এক ঐশ্বর্যময়ী রূপ হিসেবে ধরা দেয় গ্রামবাংলার বুকে। 

আবছা অন্ধকার ভেদ করে শীত রাতের জঠর থেকে বের হয়ে আসে এক একটি শীতের সকাল। শীতের সকালে জড়সড় পাখির কিচিরমিচির বুঝিয়ে দেয় সকালের বার্তা। কুয়াশার বুক ভেদ করে ফুটে ওঠে আলোর রেখা, প্রভাতের সবুজ ঘাসের উপর শিশির জমে। গানে ভেসে আসে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি। তীব্র শীতের ভয় উপেক্ষা করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ছুটে চলেন মসজিদে। গৃহত্যাগী গবাদিপশুর ডাক আর রাখালের পদচারণা এবং কৃষকের গরু নিয়ে মাঠে যাওয়া শুরু। কারও গায়ে সামান্য শীতবস্ত্র থাকে, আবার কারও তাও থাকে না। 

শীতের প্রতিটি সকাল মানব মনে বিচিত্র অনুভূতির সৃষ্টি করে। পাতাঝরা কুয়াশা মোড়া সকালের দিকে তাকালে মন কেমন বিষণ্ন হয়ে ওঠে। তখন শীতকালকে একতারা হাতে, বৈরাগীর মতো উদাসী এক বাউল বলে মনে হয়। শুধু বৈরাগীই মনে হয় না, বরং শীতকাল এসে মানুষকে আরও প্রাণচঞ্চল ও আনন্দমুখর করে তোলে। নানা মেলা, পিঠাপুলির পার্বণ নিয়ে শীতকাল মানুষের মধ্যে থেকে নিরানন্দের ঢাকনাকে সরিয়ে দিয়ে খুশির ছোঁয়ায় উচ্ছ্বসিত করো। 

শীতের সকালের প্রকৃত দৃশ্য শহরের চেয়ে গ্রামেই ভালো ফুটে ওঠে। কারণ গ্রামের প্রকৃতিতেই শীতের সকাল বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গরীব। তারা শীতের সকালে খড়কুটো দিয়ে জ্বালানো আগুনের চারপাশে একত্র হয়ে বসে। খোশগল্প আর আগুন পোহাতে তারা ভীষণ আনন্দ পায়। সূর্যের আলোর ঝলমল রেখা ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সবাই খেজুরের রস খাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে।

অবশ্য শহরের অবস্থা ভিন্নধর্মী। ইটপাথর দিয়ে গড়ে ওঠা নগরগুলোতে শীতের তীব্রতা থাকে খুবই নগণ্য। কারণ ইটের পর ইট প্রকৃতিকে উপভোগ করতেই দেয় না। বড় বড় অট্টালিকায় ঘেরা নগরগুলোতে শীত যেন নিতান্তই অসহায়। উত্তরের শীতল হাওয়া প্রবাহিত হলেও খেজুরের রস ও গুড়ের মনমাতানো গন্ধ আমোদিত করতে পারে না তাদের। শহরের শীতের সকালে দূষিত বাতাস ও আশপাশের ময়লার নোংরা গন্ধ, কাকের ডাক, ডিজেল পেট্রোলের গন্ধ এবং বাস-ট্রাকের শব্দে মিশে যায় শত কোলাহল। সকাল হলেই অফিসগামী মানুষের ছোটাছুটি। এ যেন এক কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবন। যেখানে জীবনকে উপভোগের কোনো সুযোগই নেই। 

শীতকালে সকালবেলা হরেক রকমের পিঠা-পুলির আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে খেজুরের পাটালি দিয়ে তৈরি করা হয় গরম ভাপা পিঠা, খেজুরের রসে ভেজানো চিতই পিঠা, তেলের পিঠা, পাটিসাপটা, ভাপাপুলিসহ আরও নানারকম পিঠার সঙ্গে খেজুরের রসের পায়েসও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে রসময় করে তোলে। শীতকাল মানেই পিঠা-পুলি মহোৎসব। পিঠা-পুলির আয়োজন করার মাধ্যমে জামাই আদরের প্রচলনও রয়েছে গ্রামগঞ্জের মধ্যে। এ ছাড়া পিঠা-পুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে হরেক রকমের মেলা। 

শীতকাল সবার বিভিন্ন ধরনের আনন্দ উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেও বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ এ সময় চরম দুর্ভোগের শিকার হন। শীতবস্ত্রের পর্যাপ্ততার অভাবে শীত সহ্য করতে না পেরে এ সময় প্রতিবছর বহু শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। তবে বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের তৎপরতার কারণে বর্তমানে এ সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। তাই শীতকালে এ দুর্ভোগকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। 

বাংলাদেশের মানুষের কাছে শীতকাল এক বিচিত্র অনুভূতির সৃষ্টি করে। ঋতু তরঙ্গশালায় শীতের আবির্ভাব বাংলার প্রকৃতিকে উপহার দেয় এক ভিন্ন স্বাদ। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের মধ্যে যেন স্বর্গসুখের আস্বাদ রয়েছে। শীতকাল আমাদের মনে অনন্ত আশার আলো জাগিয়ে দিয়ে যায় বসন্তের আগমনী বার্তায়।

লেখক: মো: ইকবাল হোসেন, সাংবাদিক ও সাবেক শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

একুশে সংবাদ/এস কে 


 

Link copied!