AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিশ্ব শান্তির দূত বাংলাদেশ


Ekushey Sangbad
মো. জাহাঙ্গীর আলম
০৮:৩৭ পিএম, ২৯ মে, ২০২৩
বিশ্ব শান্তির দূত বাংলাদেশ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’ এই নীতি গ্রহণ করেন। এ নীতির আলোকে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় প্রথমে আঞ্চলিক সমঝোতাসহ বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমন, অস্ত্র সীমিতকরণ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, বিশ্ব শান্তি তাঁর জীবনদর্শনের মূলনীতি। তিনি বিশ্বের সর্বত্র শান্তি কামনা করতেন এবং তা সুসংহত করার পক্ষে ছিলেন। এ জন্য তিনি জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীন দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের তুলে ধরা এবং উন্নয়নের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়, যা বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সক্রিয় অবদানের পথ তৈরি করে।

 

১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন। তিনি ভাষণে বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং জাতিসংঘ সনদ সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি শান্তি, মানবাধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, নিরস্ত্রীকরণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়নসহ মানুষের অগ্রযাত্রায় তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন। এরই ফলে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত সব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর নীতির আলোকেই তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ সুদৃঢ় করেছেন। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অটল থেকে সম্পর্ক আরও গভীর  করার জন্য যে কোনো প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহাবস্থান বজায় রেখে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।


বাংলাদেশ জাতিসংঘের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব শান্তি ও সংহতি রক্ষায় অংশ নিয়েছে এবং সেনাসদস্য প্রেরণ করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অপারেশন সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অধিকতর পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। শান্তিরক্ষী হিসেবে পাঠানোর আগে সামরিক পর্যবেক্ষক ও কন্টিনজেন্ট সদস্যদের মিশন উপযোগী করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেইনিং শান্তিরক্ষীদের মানসম্মত ও মিশন চাহিদামতো প্রশিক্ষণ প্রদান করে। ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্ডন্যান্স সেন্টার অ্যান্ড স্কুল কাউন্টার আইইডি প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

 

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল ও আরব জাতিরাষ্ট্রের মধ্যকার চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রথম জাতিসংঘ সেনা মোতায়েন করে। বিশ্ব শান্তি, মানবকল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য জাতিসংঘ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এ কাজের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। শান্তির পক্ষে, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এবং শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনা পাঠানোর মাধ্যমে দেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত করেছে।

 

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অবদান, ত্যাগ ও পরিশ্রম আজ বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী  ৭১টি অপারেশন সম্পন্ন করেছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ৬৯ মিশনের মধ্যে থেকে ৫৪ মিশনে ৪০টি দেশে মোট ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৭ জন শান্তিরক্ষী প্রেরিত হয়েছে। বর্তমানে ৮টি দেশের ৯টি শান্তিরক্ষী মিশনে ৬৫৮২ জন সেনাসদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মোতায়েন রয়েছে, যার বেশিরভাগই আফ্রিকা মহাদেশে। দক্ষতা ও কর্তব্য নিষ্ঠার কারণে কুয়েত সরকার কুয়েত পুনর্গঠনে বাংলাদেশি সেনাসদস্যদের নিয়োগ দেয়।

 

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী ও পুরুষ সদস্য বিশ্বে যে কোনো স্থানে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি নারী সেনাসদস্যরাও ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শান্তিরক্ষা মিশনে অন্য দেশের সেনাসদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশি সেনারা বিভিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ ও পেশাদার সেনাসদস্যরা বিভিন্ন ভূমি ও আবহাওয়াগত এবং অন্যান্য ঝুঁকি সত্ত্বেও পৃথিবীর অনেক মহাদেশে পদচারণা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় অটল থেকেছেন কিন্তু এ মহান ব্রত হতে বিচ্যুত হননি।

 

ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদসংকুল দেশে জাতিসংঘের  অনেক দেশ সৈন্য প্রেরণে অস্বীকৃতি জানালেও বাংলাদেশ তার সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছে। এ ধরনের মনোভাব ও দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর হওয়ায় জাতিসংঘের অধীনে সেনা মোতায়েনে বাংলাদেশকে শীর্ষস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০১৬ সালে খুব দ্রুত সময়ে মালিতে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের বৈধ সম্পর্ক ও রক্ষক হিসেবে কালচার অব পিস অ্যান্ড নন-ভায়োলেন্স জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

 

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন এবং ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনে বাংলাদেশের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল কূটনৈতিক তৎপরতা ও বাংলাদেশি সেনা অফিসারদের দক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা, দেশপ্রেম ছাড়াও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ এই শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। ১৯৯০-১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে বাংলাদেশের সেনাদের দক্ষতা ও সাফল্য এ সুযোগকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে সবচেয়ে বেশি সুনাম, খ্যাতি ও কৃতিত্ব অর্জন করেছে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে, যার মূল দাবিদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

 

মেজর মো. জাহাঙ্গীর আলম, এইসি: সেনা কর্মকর্তা।

 

একুশে সংবাদ/এসএপি

Link copied!