শরীরের উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল জমা হলে সমূহ বিপদ। তবে এ বিপদ একদিনে আসে না। একটু সতর্ক হলে, জীবনচর্যায় পরিবর্তন আনলেই এড়িয়ে চলা যায় বিপদ, পাওয়া যায় সুন্দর সুস্থ জীবন। উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল ঠিক কী কী প্রভাব ফেলে শরীরে, কেমন ইঙ্গিত দেয় আগে থেকে তা জেনে রাখা দরকার।
আসলে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল একটি জরুরি উপাদান, শরীরে কোলেস্টেরল থাকা মানেই ঝুঁকি বা বিপদ নয়। প্রকৃতপক্ষে, সুস্থ কোষ গঠনের জন্য কিছু পরিমাণ কোলেস্টেরল প্রয়োজন হয়। কিন্তু যদি কারও শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং স্বাভাবিক সীমা অতিক্রম করে যায় তা হলেই তা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় এবং এটি ইস্কেমিক হৃদরোগের এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎক এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বার বার জোর দেন দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চার উপর। বিশেষত যাঁদের উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপ-সহ হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত অসুস্থতা রয়েছে।
নীরব ঘাতক—
ধমনীতে একটি ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল (Bad Cholesterol) তৈরি হয়েছে কি না তা বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনও উপায় থাকে না। এর কোনও লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পায়, এমন নয়। কিন্তু উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে কোনও ব্যক্তির রক্তনালীতে চর্বি জমতে পারে। তার ফলে ধমনীতে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। আবার কখনও কখনও ক্রমাগত জমতে থাকা চর্বি বড় আকারে জমাট বেঁধে যেতে পারে রক্তনালীর ভিতরে। তখনই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis) এবং PAD-এর ঝুঁকি—
উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখে দিলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে ধমনীর দেয়ালে চর্বি জমা হতে পারে। যাকে প্লাক (Plaque) বলা হয়। এটি ধমনীতে রক্তচলাচলের পথ সংকুচিত করতে পারে। হৃৎপিণ্ডে এবং শরীরের অন্যত্র রক্ত প্রবাহ বাধা প্রাপ্ত হওয়ার এই সমস্যাকে এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis) বলা হয়।ধমনীর সরু হয়ে যাওয়ার ফলে শরীরের নিচের অংশে, বিশেষ করে পায়ে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে, যার ফলে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (Peripheral Artery Disease) বা PAD নামক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর ফল মারাত্মক হতে পারে।
সতর্কতা—
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD) নিতম্ব (Hips), উরু (Thighs) বা পায়ের গোছে (Calf Muscles)-এ টান ধরতে পারে (Crumping) পারে। এতে, পা বা বাহু, সাধারণত পা, সুস্থ শরীর অনুযায়ী পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ পায় না।
পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে—
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, হাঁটা বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় এই ধরনের ব্যথা আরও খারাপ হতে পারে। এতে দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব পড়তে পারে।
যে সব লক্ষণকে অবহেলা করা যাবে না—
নিতম্ব, উরু এবং পায়ের পেশিতে টান ছাড়াও অন্য উপসর্গ রয়েছে যা নীরব ঘাতক PAD-এর সংকেত দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- পায়ের অসাড়তা বা দুর্বলতা
- পায়ে নাড়ি দুর্বল হয়ে যাওয়া
- পায়ে ত্বকে চকচকে ভাব
- পায়ে ত্বকের রঙ পরিবর্তন হওয়া
- পায়ের নখের ধীরে ধীরে বৃদ্ধি
- পায়ের আঙ্গুল, পায়ের পাতার ঘা নিরাময়ে দেরি
- হাতে ব্যথা। বিশেষ বুনন, লেখা বা অন্য কাজ করার সময় ব্যথা এবং টান ধরা
- ইরেক্টাইল ডিসফাংশন
- চুল পড়া বা পায়ে রোমের ধীর বৃদ্ধি
ঝুঁকি কমবে কীভাবে?
বিভিন্ন কারণ উচ্চ কোলেস্টেরল হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর জীবনচর্যা থেকে শুরু করে অন্তর্নিহিত চিকিৎসা পরিস্থিতি, অনেক কিছুই শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
অত্যধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট খাওয়ার পরিবর্তে, সবুজ শাকসবজি, স্বাস্থ্যকর এবং জলীয় ফল, ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য ইত্যাদি খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। আধা ঘণ্টা হাঁটা জরুরি।
ধূমপান ত্যাগ করা দরকার। কমিয়ে দিতে হবে অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ। তা ছাড়া নিজের ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কিছু কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনই শরীরে অনেকখানি সুস্থতা নিয়ে আসতে পারে। তবে সব কিছুর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি। তা হলেই পাওয়া যেতে পারে নীরোগ, সুন্দর জীবন।
একুশে সংবাদ.কম/জা.হা
আপনার মতামত লিখুন :