‘কিরে তোর বাপে নাকি শ্রীঘরে গেছে।’ ‘ও পাড়ার কানকাটা লালু শ্রীঘরে গেছে-এখন যদি এলাকাটা একটু ঠান্ডা থাকে!’ -এরকম কথা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শুনতে পাওয়া যায়।
কিন্তু কেউ কী জানেন-শ্রীঘর অর্থ কী? কেন শ্রীঘর বললে কারাগারকে বুঝায়?
আসুন জেনে নেয়া যাক-শ্রীঘর কীভাবে কারাগার হলে-

৬০০ শতাব্দীতে ‘শ্রীবাবু’ নামের এক ধনী অভিজাত হিন্দু কলকাতায় বাস করতেন। বিশাল এক প্রাসাদ বানিয়ে তাতে বসবাস করতেন। শ্রীবাবু বাস করতেন বলে প্রাসাদটি সাধারণ মানুষের কাছে ‘শ্রীঘর’ ‘শ্রীবাবুর ঘর’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মুসলিম শাসনামলে শ্রীবাবু ও তার পূর্বপুরুষগণ ছিলেন মোগল সম্রাটদের ঠিকাদার। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভের পর তিনি কোম্পানির পক্ষে কাজ শুরু করেন। ব্যাপক অর্থ উপার্জন করে ধনী হয়ে ওঠেন।
শ্রীবাবু ছিলেন আরেক ধনবান গৌরীসেনের ব্যবসায়িক গুরু ও অংশীদার। কালক্রমে শ্রীবাবু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তার সহায়সম্পদ ক্রমশ বেড়ে চলে। তবে একসময় কোনো কারণে কোম্পানির সঙ্গে তার মতের অমিল শুরু হয়। কোম্পানির অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরাগভাজন হয়ে পড়েন শ্রীবাবু।
পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শ্রীবাবুকে কোম্পানির সব কর্মকাণ্ড হতে বহিষ্কার করে। কোম্পানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে নিরাপত্তার খাতিরে শ্রীবাবুকে তারই নির্মিত ‘শ্রীঘরে’ আটকে রাখা হয়। শ্রীবাবু মারা যাওয়ার পর শ্রীঘরটি ইংরেজ অপরাধীদের সাময়িক কারাগার হিসাবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়। কোনো ইংরেজ অপরাধ করলে তাকে ঘোষিত কারাগারে না-দিয়ে শ্রীঘরে আয়েশে রাখা হতো। ফলে শ্রীঘর শব্দটি বাংলায় উপহাস অর্থে ‘কারাগার’ এর সমার্থক শব্দ হিসাবে স্থান করে নেয়।
একুশে সংবাদ/ এসএডি