কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভেটেরিনারি ও প্রাণী সম্পদ হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন থেকে জনবল সংকট চলছে। ১১টি পদের মধ্যে ৮টি পদ পূরণ থাকলেও প্রধান কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জনসহ ৩টি পদ ফাঁকা। ফলে দাপ্তরিক কাজ-কর্মসহ উপজেলার প্রায় ৮ লক্ষাধিক গবাদিপশু-পাখির চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
প্রায় ৪৫৮.৫৭ বর্গ কিলোমিটারের উপজেলাটি ১৩টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। উপজেলার প্রাণীসম্পদ ও ভেটেরিনারি দপ্তর থেকে জানা যায়, বৃহৎ এই উপজেলায় গবাদিপশুর খামারীর সংখ্যা ৫হাজার ৭শত ৬ জন। যেখানে গরুর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১লাখ ৫৩ হাজার ৩শত ৭৩টি, মহিষের সংখ্যা ১ হাজার ২ শত ৯৬টি, ছাগলের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৭শত ৯৬টি, ভেড়ার সংখ্যা ২ হাজার ৬শত ১৭টি। প্রতিদিন পশু হাসপাতালে গড়ে প্রায় ২০-২৫টি গরু, ৩০-৪০টি ছাগল, ৭-৮টি ভেড়া চিকিৎসা নিতে আসে।
অন্যদিকে পোল্ট্রি খামারী রয়েছে, ১৭৫টি, এখানে লেয়ার মুরগির খামারীর সংখ্যা ৩টি, ব্রয়লার মুরগির খামারীর সংখ্যা ৮৪টি, সোনালী মুরগির খামারীর সংখ্যা ৫৯টি, হাঁসের খামারীর সংখ্যা ২৯টি। মোট প্রায় ৪ লাখ ৮৮হাজার ৮শত ৭৯টি হাসঁ মুরগি রয়েছে। এছাড়াও এখানে কবুতর রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৭শত ২৯টি। কোয়েল পাখি আছে প্রায় ৭শতটি, ঘোড়া আছে প্রায় দুই শতাধিক। এসব পশু-পাখি প্রতিদিন কোনো না কোনো রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। উপস্থিত কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ রোগাক্রান্ত পশু-পাখীকে চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে লাম্পি স্কিন রোগে প্রায় পাঁচশতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। এখনো অনেক এলাকায় অসংখ্য গরু আক্রান্ত অবস্থায় আছে।
এই দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, অফিস সহকারির কাজ করছেন, উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) মাহতাবুল ইসলাম। তিনি জানান, এতো বড়ো উপজেলায় জনবল সংকটের কারনে মাঠে মাঠে ঘুরে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। তিনি আরো জানান, আমার পদে অন্তত ১৪জন কর্মকর্তা দরকার সেখানে ৪ জন দিয়ে কোনোভাবেই উপযুক্ত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নগুলোই তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত অঞ্চল। ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে আশ্রিত ইউনিয়ন সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি এবং তিস্তা নদী বেষ্টনী করে আছে বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই, দলদলিয়ার আংশিক। এই ইউনিয়নগুলোর অধিকাংশ পশু পালনকারী ও বিভিন্ন খামারিরা প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের কারনে প্রতিদিন তাদের খামারে গবাদিপশুকে নানা রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ-বালাইয়ের মুখোমুখি হতে দেখছেন। নদীর ওই পাড় থেকে এই পাড়ে অনেকেই পশুর চিকিৎসা নিতে আসতে চান না।
সাহেবের আলগার আদর্শ খামারি সহিদুর রহমান, বেগমগঞ্জের মতিয়ার ও শাহজামাল, শুখের বাত্তি চরের আব্দুল কাদের জানান, গরুর চর্মরেগে তাদের প্রতিজনের ১টি করে গরু মারা গেছে। তারা আরো জানান, আমাদের গরুর খাদ্য বলতে চরের মাটিতে জন্মানো ঘাস এই ঘাস খেয়েও নানা রকম রোগ-বালাইয়ের শিকার হচ্ছে গবাদিপশু। চিকিৎসকের অভাবে এ ছর চর এলাকায় শত শত গরু ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, এখনো অসংখ্য গরু আক্রান্ত অবস্থায় আছে। তারা আরো জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে চিকিৎসা কেন্দ্র করা না হলে প্রতিবছর অসংখ্য গরুর মৃত্যু দেখতে হবে এবং অর্থনৈতিকভাবেও চরবাসি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
গুনাইগাছ ইউনিয়নের তিস্তার উপর জেগে থাকা চর দক্ষিন ও উত্তর সন্তোষ অভিরামের আদর্শ গরুচাষী বেলাল ও সুরফান জানান, গরুর চর্মরোগ চলছে এই ভয়াবহ ভাইরাস রোগের উন্নত চিকিৎসা নিতে পারিনি। তিস্তা নদী ঘেষা এ অঞ্চলের মানুষেরও একই দাবী অঞ্চল ভিত্তিক চিকিৎসা কেন্দ্রের। ধামশ্রনীর ইউনিয়নের মাঝারী গরুর খামারি জাকির হোসেন, তবকপুরের আদর্শ খামারি নাজমুল হোসেন, গুনাইগাছের শাহজামাল জানান, সরকারিভাবে যে পরিমান জনবল আছে তাতে একটি ইউনয়ন সেবা দিয়ে শেষ করতে পারবে না, তারা আরো জানান, গ্রাম্য পল্লী পশু চিকিৎসকরা না থাকলে আরও বিপদ হতো পশু চাষিদের জন্য।
বেকারত্ব দুরিকরণ ও অর্থনৈতিকভাবে মুক্তির লক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় এ উপজেলায়ও প্রতিদিন বেড়েই চলছে গবাদিপশু পালনের চাষ। পশু পালনের চাষ বাড়লেও বাড়েনি জনবল ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। এ রকম একজন নতুন আদর্শ খামারী তরুন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মারুফ আহমেদ জানান, কৃষিতে ও পশুপালনে বেকারদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও দক্ষ জনবলের ব্যবস্থা না করলে খামারীদে লচ গুনতে হবে। উলিপুর পৌরসভাস্থ কবুতর খামারী কিশোর লোবান জানায়, প্রতি বছর কোনো না কোনো রোগে তার কবুতরগুলো মারা যায়। পারিবারিকভাবেই সে এই কবুতর পালন পদ্ধতি শিখে গেলেও উন্নত প্রশিক্ষণ নেয়া হয় না লোবানের।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক শারিরীকভাবে অসুস্থ তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ছুটিতে আছেন জানিয়ে বলেন, শূন্য পদ পূরণের জন্য উপর মহলের কাছে আবেদন করা হয়েছে আশা করছি দ্রুতই পদগুলো পূরণ হবে এবং পশু-পাখী পালনকারীদের সেবার মান নিশ্চিত হবে।
একুশে সংবাদ/ক.স.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :