কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের মতিন সৈকত। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক। এলাকায় তিনি পরিবেশ যোদ্ধা এবং সমাজকর্মী হিসেবেই সমধিক পরিচিত।
তার নিজ গ্রাম আদমপুরসহ পুটিয়া ও সিঙ্গুলা তিন গ্রামের মধ্যবর্তী ১৫০ বিঘা বোরোধানের জমিতে ধানরোপন থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত মৌসুমব্যাপি এককালীন মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে বিঘা প্রতি ছাব্বিশ বছর যাবত সেচের পানি সরবরাহ করে কৃষককে ধান উৎপাদনে সহযোগিতা করছেন।
সেচ সুবিদা প্রাপ্ত আদমপুর গ্রামের মোঃ বিল্লাহ হোসেন, মোঃ আলী আশ্রাফ সিংগুলার আবদুল লতিফ, মোঃ বাচ্চু মিয়া, পুটিয়ার মোঃ সুরুজ মিয়া জানান 'মতিন সৈকত ২৬ বছর ধরে আদমপুর পুটিয়া সিংগুলা গ্রামের মাঝখানে বোরোধানের মাঠে মাত্র দুইশ টাকা কানি (বিঘাপ্রতি) ধান লাগানো থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত যার যতোবার সেচের পানি দরকার ততোবারই সেচের পানি দিয়ে আসছেন এককালীন মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে।
বিভিন্ন জায়গায় বোরোধানের জমিতে সেচের খরচ দিতে হয় ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা। মতিন সৈকতের মত কেউ এত কম খরচে সুবিধা দেয়না।
পুটিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন ' মতিন সৈকত প্রত্যেক বছর বোরোধানের জমিতে ঝাটা-জিংলা পুতে দেন যাতে পাখি বসে পোকামাকড় খেয়ে ফসলকে নিরাপদ রাখে। যাতে জমিনে কোন ধরনের কীটনাশক বা বিষ ব্যাবহার করা লাগেনা। বিষ, মাটি, পানি, বাতাস, ফসল এবং শরীরের ক্ষতি করে। আবার ফসলের মৌসুমে ঢোল পিটিয়ে মাইকিং করে এলাকার কৃষকদের কীটনাশকের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে সচেতন করেন। সেচের উৎস কালাডুমুর নদ মতিন সৈকতের উদ্যোগে ১১ কিলোমিটার পূনঃখনন হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, একমাত্র ফসল বোরোধান উৎপাদনের পরে এখানকার প্লাবনভূমির জমিগুলো বর্ষায় অলস অনাবাদি পরিত্যক্ত থাকত। ঘাস, কচুরিপানা, আবর্জনা জমে জঞ্জাল তৈরি হত। পরিস্কার করতে বিঘাপ্রতি ৪/৫ হাজার টাকা খরচ লাগত। এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গণশেয়ারের ভিত্তিতে স্হানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের সহযোগিতায় মতিন সৈকত আদমপুর, পুটিয়া, সিংগুলা তিন গ্রামের মধ্যবর্তী ২৫০ বিঘা জমিতে আপুসি এবং পুটিয়াতে ১০০বিঘা জমিতে বিসমিল্লাহ, আদমপুর, পুটিয়া ও বিটমান তিন গ্রামের মধ্যবর্তী ৩৫০বিঘা জমিতে আপুবি মৎস্য চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এসব প্রকল্পে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হয়। বোরোধান উৎপাদনে খরচ কমানোর সাথে বর্ষায় অনাবাদি জমিতে মাছ চাষ করার ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। বিঘাপ্রতি ১৪/১৫ হাজার টাকা করে প্রতি বছর জমিনের ভাড়া বাবদ পাচ্ছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সারোয়ার জামান বলেন "আদমপুর গ্রামের অধ্যাপক মতিন সৈকত উপজেলার কৃষকদের খুব আপনজন। সরকারের পাশাপাশি তৃণমূলে কৃষকের পাশে থেকে সব সময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। তিনি ২৬ বছর ধরে নাম মাত্র মূল্যে মাত্র দুইশ টাকায় বিঘাপ্রতি সেচ ব্যবস্থা করে কৃষকদের সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি কৃষকদের যেভাবে সংগঠিত করে তাদের সহযোগিতা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।। "
একুশে সংবাদ/কা/আ