জেনে রাখুন বজ্রপাত হলে কি করবেন
একুশে সংবাদ :বজ্রপাত হতে আমরা সবাই কম বেশি দেখেছি। কিন্তু কোনো কিছুর উপর সেই বজ্র (বাজ) পড়তে হয়তো কম মানুষই দেখেছেন। কিন্তু এই কথাটি কি জানেন? সরাসরি যদি কোনো মানুষ, পশু-পাখি বা গাছের উপর বজ্র পড়ে তাহলে বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে যদি আশেপাশে পড়ে তাহলে গুরুতরভাবে ঝলসে যেতে পারে।
ধরুন আপনি নির্জন কোন রাস্তায় অথবা ফাঁকা মাঠ দিয়ে যাচ্ছেন, আর এমন সময় হঠাৎ করেই ঝড় বৃষ্টি সাথে বিদ্যুৎ চমকানি শুরু হয়ে গেল। তখন ঠিক কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। মনে মনে আবার ভয়ও হচ্ছে, কখন যানি মাথার উপর বজ্র পড়ে! আগে থেকে এমন অবস্থা দেখলে হয়তো কাছাকাছি কোথাও গিয়ে একটু আশ্রয় নেয়া যেতো। আমাদের অনেকেরই এমন ধারণা রয়েছে।
তবে এই ধারণাটা যে আপনার সঠিক তা নয়। কারণ কপাল খারাপ হলেও বজ্রপাতে আহত হওয়ার আগে অন্তত মিনিট খানেক সময় আপনি পেতে পারেন। অর্থাৎ প্রকৃতির ‘রোষ’ আপনার মাথায় পড়ার আগে একটা শেষ সতর্কবার্তা পাওয়ার সুযোগ কিন্তু আপনার রয়েছে।
তাহলে কীভাবে বুঝবেন এখনই আপনার আশেপাশে বজ্রপাত হতে পারে? জানুন তাহলে এর আগ মুহূর্তের লক্ষণগুলো-
বজ্রপাত হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে কোথায় তা পড়বে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে বজ্রপাত হবে এমন প্রস্তুতি নিন। তবে সত্যি বলতে বজ্রপাতের এসব লক্ষণ অধিকাংশ সময়ই খেয়াল করা সম্ভব না। তাই সবসময় এর জন্য নিজেকে প্রস্তুতি রাখাই উত্তম। বিশেষ করে বৈরী আবহাওয়ায় সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
খোলা বা উঁচু স্থান থেকে দূরে থাকা
ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোন অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেওয়াই সুরক্ষার কাজ হবে।
উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা
কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া যাবে না।
জানালা থেকে দূরে থাকা
বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে।
ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা
বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা যাবে না।
বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা
বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না। চালু থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে, নাহলে নষ্ট হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। বজ্রপাতের আভাস পেলে প্লাগ খুলে এগুলো বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
গাড়ির ভেতর থাকলে
বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
গগণচুম্বী স্থান থেকে নিজেকে সরাতে হবে
এমন কোনো স্থানে যাওয়া যাবে না যে স্থানে নিজেই ভৌগলিক সীমার সবকিছুর উপরে। এ সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যেতে হবে। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যেতে হবে।
পানি থেকে দূরে থাকা
বজ্রপাতের সময় নদী, জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে সরে যেতে হবে। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
পরস্পর দূরে থাকতে হবে
বজ্রপাতে সময় কয়েকজন জড়ো হওয়া অবস্থায় থাকা যাবে না। ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যাওয়া যেতে পারে।
নিচু হয়ে বসা
যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এ সময় মাটিয়ে শুয়ে পড়া যাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।
রবারের বুট পরিধান
বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।
বাড়ি সুরক্ষিত করতে হবে
বজ্রপাত থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য বজ্র নিরোধক দ- বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। বাড়ির চারদিকে নারকেল জাতীয় গাছ লাগালে বজ্রপাত হলে ওইসব উঁচু গাছের ওপরই হবে।
বজ্রপাতে আহত হলে
বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা করতে হবে। সরাসরি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে। হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ জরুরি।
একুশে সংবাদ/এন এস/২৪.০৪.২০১৭
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :