একুশেসংবাদ: সেই ১৮৬৮ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে অধিকারের দাবিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল শ্রমিকরা। তখন ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করানো হতো তাদের, অথচ মজুরি দেওয়া হতো কম। সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় শ্রমিকরা। ১৮৯০ সালের ১ মে, কাজের সময় ও শ্রমের অধিকার ফিরে পায় তারা। কিন্তু আজ তা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।
১২৫ বছরের পুরানো অধিকার আজও ম্লান। এখনো বৈষ্যমের শিকার শ্রমিকরা। ইতিহাস থেকে বর্তমানে এসে এমন হতাশার কথাই বললেন রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট লাভলী ইয়াসমিন।
লাভলী জানান, বাংলাদেশে শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় কাজের জায়গা হচ্ছে গার্মেন্টস। গত ৩০ বছরে দেশের এই শিল্পখাতটি অনেকদূর এগোলেও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়েনি ততটা।
কীভাবে শ্রমিকরা বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে লাভলী ইয়াসমীন জানান, শ্রমিকদের রক্তে ঝরা শ্রমের উপার্জনেই মালিকরা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, গ্রুপ ও কোম্পানি সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এমনও আছে একজন মালিক একটি গার্মেন্টস থেকে এখন ২৭ টি গার্মেন্টেসের মালিক।
মালিকদের সম্পদের পাহাড় হলেও শ্রমিকরা কিন্তু এখনো যথাযথ মজুরি পায় না। তাদের আবাসন ব্যবস্থা ভাল না। যে বেতন পায় তা দিয়ে বস্তিতে অমানবিক পরিবেশে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে তাদের।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস কাজে প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়। ২০ বছর কাজ করার পর অনেকটা বুড়ো হয়ে যেতে হয় তাদের। তখন আর চাকরি থাকে না। শূণ্য হাতে ফিরতে হয়। ওই সময়টাতে নেমে আসে জীবনের করুণ পরিণতি।
লাভলী অভিযোগের সুরেই বলেন, শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড নেই, স্বাস্থ্য বিমা নেই, পেনশন নেই। চাকরি শেষে একেবারে শূণ্য হাতে ফেরায় পারিবারিকভাবেও তারা নিগৃত হন, মর্যাদা পান না। অমানবিকভাবে জীবন যাপন করতে হয়।
এই বৈষম্য থেকে উত্তরণের জন্য তিনি শ্রমিকদের পেনশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য বিশেষভাবে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের বৈষম্য দূর করতে হলে, বাঁচার মতো মজুরি দিতে হবে, রেশন ব্যবস্থা চালু, আবাসন ব্যবস্থার সংস্থান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে হবে।
শ্রমিকদের জীবন যাপনের চিত্র দেখে রুবানা হক যে বেদনা বিদূর হয়ে পড়েছিলেন সেই কাহিনীও তুলে ধরলেন লাভলী ইয়াসমীন। রুবানা হক হচ্ছেন, সদ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র গার্মেন্টস শিল্প মালিক আনিসুল হকের স্ত্রী। আনিসুল হক গার্মেন্টস শিল্প, মোহাম্মদী গ্রুপের কর্ণধার।
এবার মেয়র নির্বাচনে রামপুরার বস্তি এলাকায় ভোট চাইতে গিয়ে নিজের চোখে দেখেছেন কি অমানবিক পরিবেশে থাকে তার স্বামীর মতো গার্মেন্টস মালিকদের শ্রমিকরা।
লাভলী ইয়াসমীনের ভাষ্যমতে, তখনই রুবানা হক বলেছিলেন, আসলে আগে তারা বুঝতেই পারতো না গার্মেন্টস শ্রমিকরা এতো অমানবিক জীবন যাপন করেন। তিনি আশ্বাস দেন অন্ততঃ তার স্বামী আনিসুল হক মেয়র হলে এই সব শ্রমিকদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করবেন।
লাভলী ইয়াসমীনও আশা করেন যেহেতু সরকার শ্রমিকদের প্রতি খুবই আন্তরিক। যে সব বৈষম্য এখনো রয়েছে তার সমাধান হবে। শ্রমিক দিবসে এটাই তার কামনা।
একুশেসংবাদ.ডটকম/আর কে০৩.৫.১৫
আপনার মতামত লিখুন :