AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উপন্যাস - অপরাহ্নে বিসর্জন


Ekushey Sangbad

১০:৪৪ এএম, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
উপন্যাস - অপরাহ্নে বিসর্জন

একুশে সংবাদ : পেজ নং ৭- পুরুষের ঢলাঢলি, যৌণ হয়রানী সহ কত রকমের বাজে সংস্কৃতি বাংলার পবিত্রতাকে খুন করছে গলা টিপে! যে সংস্কৃতিকে পৃথিবীর আপামর জনতা শ্রদ্ধা করে। যে ভাষাকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসাবে বিশ্ব স্কীকৃতি দিয়েছে, সেই বাংলা ভাষার পবিত্রতা রক্ষার নামে অপবিত্র করতে একটুও দ্বিধা করছিনা আমরা। গলা ফাটিয়ে শ্রদ্ধা জানানো যায়না, আমরা তাই করছি। বিশ্ববাসি এসব নারকীয় ঘটনা দেখে হাসেই না, বরঞ্চ ধিক্কার দেয়। নারী যেখানে মা ও বোনের সম্মানে ভূষিত, সেই মা-বোনের ইজ্জতকে নোংরামির এমন জায়গায় নামানো হয়েছে যে, ইহা যেন সম্মানের জায়গায় ছিলইনা! আজ পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছর নানা রকমের সমস্যা, বিশৃঙ্খলা, অসভ্য আচরন গুলি যেমন সবার জানা, তেমনি মিল্টনও জানে। তারপরও সুন্দরী স্ত্রী ও আদরের সন্তানের আব্দার মেটাতে মেলায় আসা। মিল্টন আর কমলার সুখী পরিবারে জয়িতা বড়, জয় ছোট। জয়িতার বয়স আট, জয় দু বছরের। “জ্ঞানী ব্যক্তি পাপি হয়, অবুঝ বা পাগল কখন পাপি হয়না”। বৈশাখী মেলায় আনন্দের চেয়ে নিরানন্দই বেশী হয়, অবুঝ নিস্পাস জয়িতাকে মিল্টন বুঝাতে পারেনি। আনন্দ এখানে হাতছানি দেয়, কষ্ট আর দুঃখ আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। রিস্কা থেকে নামতেই সুন্দরী এক মেয়ে বিলম্ব না করেই জয়িতার দুই গালে একেঁ দেয় তাল পাতার ছবি, যেন জয়িতাকে অর্ভথনা জানানোর জন্যই মেয়েটি দাড়িয়ে ছিল। মিল্টন পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে ধরে। টাকাটা হাতে নিয়ে, মুচকি হেসে অন্য একটি শিশুর দিকে এগিয়ে যায় মেয়েটি। সামনে এগুতেই প্রচন্ড ভীরে পড়ে মিল্টন পরিবার। কেন এত ভীর! এর কোন মানে নেই! মিল্টন মানে খুঁজতেও চায়না। সামনে এগুতে হবে এটাই বাস্তবতা। মিল্টনের কোলে জয়। মায়ের হাত শক্ত করে ধরে জয়িতা হাঁটছে। এক পা সামনে যায় তো, পিছনে তিন পা ফেরত আসতে হয়। উল্টা উল্টি মানব জ্যাম। গাড়ির জ্যাম হয় একই সাড়িতে। বৈশাখীর মানব জ্যাম মারাত্বক! বুঝার কোন উপায় নেই, সামনে কিভাবে যেতে হবে। তারপরও যেতে হবে বলেই ধাক্কাধাক্কি, তবে একে ধাক্কাধাক্কি না বলে যুদ্ধ বললে অযুক্তিক হয়না। দিগন্ত মেঘে ঢেকে আছে। হৈ-হুল্লুরেও আকাশের বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস গুর গুর শব্দ কানে ভেসে আসছে। দিগন্তে বিদ্যুতের ঝলকানিও চোখে পড়ে মাঝে মধ্যে। পেজ নং ৮: প্রায় ঘন্টা খানেক মানব জ্যাম পার হয়ে কমলা বলল, মিল্টন আমি আর পারছিনা, চল ফেরত যাই, মনে হয় বৃষ্টিও নামবে! বৃষ্টি নামলে কি হবে বল! আমার কেমন জানি ভয়ও লাগছে। মিল্টন বলল, দুর বোকা! ভয় কিসের! এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই তো আনন্দ! ঠ্যালাঠেলি, ধাক্কাধাক্কিতেই তো মজা! না হলে এত মানুষ কেন আসে, বলতে পার? মায়ের সাথে জয়িতাও আকুতি, বাবা চল, আমারও ভয় লাগছে। আমি বাসায় যাব। মিল্টন বলল, কোন ভয় নেই মা। তুমি না বলছিলে তাল পাতার নকশা করা পাখা, ঝিনুকের মালা কিনবে! না বাবা, আর একদিন। মিল্টন লক্ষ্য করে জয়িতার চোখ পানিতে টলমল করছে। মিল্টন বলল, ঠিক আছে চল। তবে বের হবো কোন দিক দিয়ে? কমলা বলল, সামনে এগুতে থাক। একটু পরেই বড় একটি মোড় পাব। ওখানে এত ভীর হবেনা, রিস্কাও পাওয়া যাবে হয়ত! মিল্টন বলল, চল। ভীর ঠেলে সামনে এগুতে থাকে তারা। কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হয় দমকা বাতাশ সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি। দমকা বাতাশে মেলার ভীর দ্বিগুন হয়ে যায়, দ্রুত প্রস্থানে মানুষ একের উপরে আরেকজন, যেমনটি বাতাশের দোলায় সোনালী ধানের শীষ একটির উপরে আরেকটি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। নিজ গন্তব্যে যাবার কোন উপায়ও নেই। ধাক্কাধাক্কিতে নিজ রাস্তা পরিবর্তন হয় বারংবার। জয়িতা মায়ের হাত আরও শক্ত করে ধরে। মেয়েদের চিৎকার ভেসে আসে। কি অসভ্য! তোদের ঘরে কি মা বোন নেই! এ্যাই ছেলে গায়ে হাত দিলি ক্যান? কে কাকে বলছে বা কে কার অন্তবাসে অথবা নিতম্বে হাত বুলিয়ে মজা লুঠছে বোঝার উপায় নেই, হয়ত মেয়েদের অন্তবাসে, নিতম্বে হাত বুলিয়ে, খামছিয়ে মজা লুঠছে কুলঙ্গার ছেলেরা। হায়রে বাঙ্গালী! হায়রে বৈশাখ, হায়রে পবিত্র নববর্ষ! মিল্টনরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, তার পাশেই কয়েকজন ছেলে ষোল-সতর বছরের এক মেয়ের পড়নের কাপড় খুলে হাজার হাজার মানুষের সামনে আনন্দ লুঠে নিচ্ছে। কারও কিছু বলার নেই, নেই বাঁধা দেবার কেউ। কি বিভৎস্য, নির্মম দৃশ্য। মিল্টনের বুকের মাঝে ধক ধক করে, সাথে আছে রূপবতী স্ত্রী আর আট বছরের মেয়ে জয়িতা। জয়কে কমলার কোলে দিয়ে জয়িতাকে নিজের কাছে নেবার চেষ্টা করে মিল্টন। প্রচন্ড ধাক্কা সামাল দিতে ব্যর্থ মিল্টনের হাত থেকে ফসকে জন সমুদ্রের স্রোতে চলে যায় জয়িতা। নির্দয় মাংশাসী প্রাণী যখন হরিণের পেজ নং ৯- পালে আঘাত হানে, তখন হরিন শাবক প্রাণ ভয়ে এদিক ওদিক দৌঁড়াতে থাকে, ঠিক তেমনি জয়িতা এদিক ওদিক তাকিয়ে মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদে। মা আমাকে ছেড়ে যেওনা মা, বাবা তুমি কোথায়? আমাকে নিয়ে যাও বাবা। জয়িতার চিৎকার কারও মন স্পর্শ করতে পারেনা। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মা জয়িতা, মা জয়িতা বলে চিৎকার করছে মিল্টন এবং কমলা। চিৎকার যেন কারও কানে পৌছায়না, কারও হৃদয় স্পর্শ করেনা। সবাই দৌড়াচ্ছে এদিক ওদিক। বণে বাঘ যখন হরিন আক্রমনে ছুঠে, শত শত হরিন, এদিক ওদিক প্রাণ পণ ছোটে নিজেকে বাঁচাতে, ঠিক তেমনি মেলার মানুষ গুলি দৌঁড়াতে থাকে এদিক ওদিক যেন বাঘ তাদের পিছু নিয়েছে। মা বাবার চিৎকার এবং জয়িতার কান্না প্রচন্ড বাতাশ-বৃষ্টিতে মিলিয়ে যায়। “মাঝে মাঝে প্রকৃতি মানুষের সাথে এমন আচরন করে, যেন প্রকৃতি কষ্ট দেবার জন্যই মানুষকে পৃথিবীতে এনেছে” মাঝে মধ্যে মনে হয় “পৃথিবী নিজেই সাত দোযখের এক দোজখ, এটাই কষ্টের শেষ জায়গা”। হায়েনা যখন জীবিত হরিন শাবকের মাংস ছিড়ে খায়; দশটি সিংহ যখন জীবিত মহিষের মাংস কামড়ে কামড়ে ছিড়ে খায়, তখন দোজখের বর্ণনার চেয়ে কোন অংশে কম মনে হয় না। মা-বাবা হারা ছোট্ট শিশুর মা মা চিৎকারে যেখানে আসমান ভেঙ্গে খান খান হবার কথা, যেখানে মরু ভূমিতে পানির স্রোত বয়ে যাবার কথা, সেখানে প্রকৃতি নির্দয় নিষ্ঠুর হয়ে জয়িতা আর বাবা মায়ের করুন আর্তনাদকে ভৎসনা করে খিল খিল হাসে। হাজার হাজার মানুষের মাঝে মাত্র আট বছরের একটি শিশু বাবা মাকে না পেয়ে খুঁজে ফিরে, এ যে কি করুন বেদনার, তা শুধু জয়িতাই বুঝতে পারছে। হয়ত বিধাতা বুঝতে পারে না! অজগর সাপ কোন প্রাণীকে যখন আয়েশে গলাধকরণ করে, প্রাণীটি বিধাতাকে প্রাণ পনে ডাকে, বিধাতা তখন বিদ্রুপ হাসে। প্রিয় সন্তানকে খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা বাবা মা, নারি ছেড়া ধনকে না পেলে হৃদয়ের মাঝে যে বেদনা শুলের মত বিধে, যা নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে হৃদয়কে খোঁচা দেয়, তা হয়ত আজ প্রকৃতি ভুলেই গেছে। প্রায় আধা ঘন্টা প্রচন্ড বৃষ্টি আর বাতাশে মেলা খালি হয়ে গেল। ছোট শিশু জয়িতা এদিক ওদিক দৌড়ে কোথায় যে চলে গেছে কে জানে! মিল্টন এবং কমলা পূরো মেলার মাঠে, রাস্তায় দৌড়ে দৌড়ে মা জয়িতা মা জয়িতা বলে চিৎকার করে কাঁদে, যেমনটি মরুভূমিতে দৌড়িয়েছেন প্রাণ প্রিয় শিশু ইসমাইলকে এক ফোটা পানি খাওয়ানোর জন্য মা হাজেরা। সেদিন মা হাজেরা পানি পেয়েছিলেন, পানি খাইয়ে সন্তানকে শান্তি দিতে পেরেছিলেন কিন্তু বাবা ও মা জয়িতাকে বুকে নিয়ে আদর করতে পারলেন না। চুমুই চুমুই ভরে দিতে পারলেননা প্রিয় সন্তানকে। পেজ নং ১০- বিপদ কখনও একা আসেনা, যখন আসে তখন নাতী-পুতি নিয়েই আসে। তাই ঘটল জয়িতার কপালে; অঁন্ধকারে দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাসে ধাক্কা লেগে পড়ে গেল। বিশ-বাইশ বয়সের একটি ছেলে মাইক্রোবাস থেকে নেমে দ্রুত জয়িতাকে তুলে নিল মাইক্রোবাসে। জয়িতা আশ্বাস পায়। বাবা মায়ের কাছে যাবার আশায় বুকে আশা বাঁধে। জয়িতা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ভাইয়া আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে চল। আমার খুব ভয় করছে। বৃষ্টিতে চুপসে গেছে জয়িতা, সারা গায়ে কাঁদা মাখানো। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথায় হাত দিয়ে অঝড়ে কাঁদে জয়িতা। ছেলেটি বলল, একটু থাক মনা, ঝড় থামলে মায়ের কাছে নিয়ে যাব। কোন চিন্তা করনা। কি নাম তোমার? কোথায় তোমার বাসা? জয়িতা শুধু কাঁদে, প্রচন্ড ব্যথায় আশ্বাসিত জয়িতা ছেলেটির কোলে মাথা রাখে। ঝড় থামেনি। মাইক্রোবাসটি স্টার্ট নিল। জয়িতা বলল, আমি মায়ের কাছে যাবো। ছেলেটি তাকে শান্তনা দেয়, আমরা তোমাকে তোমার মায়ের কাছেই নিয়ে যাচ্ছি। জয়িতা ভয় পায়, সে চিৎকার দিয়ে উঠে। এতক্ষন যাকে অভয়াশ্রয় মনে হয়েছে, এক মহুর্তে অন্য রকম মনে হয় ছোট্ট জয়িতার কাছে। জয়িতার আর্তনাদ যেন পৃথিবী থেকে বের হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু বুব ফাটা আর্তনাদ না পৌছাল বাবা মায়ের কাছে, না পৌছাল প্রকৃতির মহা শক্তির কাছে, না নরম করতে পারলো কুলাঙ্গার ছেলেটির মনকে। জয়িতা শরীরের সব টুকু শক্তি দিয়ে মা বলে চিৎকার দেয়, মা আমাকে বাঁচাও। বাবা আমাকে বাঁচাও। আল্লাহ তুমি আমাকে রক্ষা কর। মা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না মা। মা আমাকে তুমি নিয়ে যাও মা। “প্রকৃতি আপন নিয়মেই চলে, চলার গতি কখনও পরিবর্তন হয়না”। বর্ষা কালে বৃষ্টি, শীত কালে ঠান্ডা, গ্রীস্ম কালে গরম, এটাই প্রকৃতি। আপন নিয়মের ব্যতিক্রম হয়না। বাবা মা হারা শিশুর কান্নায় প্রকৃতির কোন দয়া হয়না। জয়িতার সকল চিৎকার, কান্না কারও কানে পৌছে না, বাতাশের শন শন শব্দে মিলিয়ে যায়। প্রকৃতির অভিশাপের জারজ সন্তান ছেলেটি জয়িতার মুখ চেপে ধরে। হয়ত এভাবেই হয়। সিংহ যখন কোন পশুকে মারার জন্য আক্রমন করে, তখন ঘাড়ের উপর কামড় বসিয়ে ঝুলে থাকে, যতক্ষন না প্রাণ চলে যায়। তেমনিই ছেলেটি নিস্পাপ জয়িতার উপর আক্রমন করে। জয়িতা বাঁচার জন্য ছেলেটির হাতে কামড় দেয়। ছেলেটি সীমারের মত মায়া, মমতা বিসর্জণ দিয়ে সর্ব শক্তি দিয়ে জয়িতার গালে থাপ্পর মারে। একুশে সংবাদ // র‌্যাক লিটন // ২৯.১০.২০১৭
Link copied!