AB Bank
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উন্নয়নকে নিরাপদও করতে হবে


Ekushey Sangbad
হাসান মামুন
০৯:১২ পিএম, ১৪ মার্চ, ২০২৩
উন্নয়নকে নিরাপদও করতে হবে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি তুলার গুদামে আগুন লাগার ঘটনা খবর হয়েছে। তবে ওখানে বড় খবর তৈরি হয়েছিল কিছুদিন আগে, যখন সীমা গ্রুপের একটি অক্সিজেন প্লান্টে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে। এ সম্পর্কে এলাকাবাসী যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা রোমহর্ষক। কারখানায় কর্মরতদের মধ্যে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁর মধ্যে একজনের স্ত্রী ‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড’ মামলা করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে নিরাপত্তার বেশ কিছু শর্ত পরিপালন না করে প্লান্টটি পরিচালনার প্রমাণও তো মিলেছে। এমনই ধারার কার্যক্রম পরিচালনায় শতভাগ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই এগোতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারিও জারি রাখতে হয় সেই মাত্রায়। এটা না পারলে এ ধরনের ব্যবসায় না যাওয়াই ভালো। সবাইকে সবকিছু করতে হবে কেন?

 

সীমা গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও খবর দেওয়া হয়েছ। তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে তাদের ঋণ জোগানো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন সুষ্ঠু রাখতে পারছে না মালিকপক্ষ। শেষে তাদের অক্সিজেন প্লান্টে যা ঘটে গেল, তাতে ব্যাংকগুলোর আরও দুশ্চিন্তায় পড়াই স্বাভাবিক। ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অবশ্য এসব সামলে চলতে অভ্যস্ত। তাদের সব ক্লায়েন্ট তো সীমা গ্রুপের মতোও নয়। তবে এর একটি প্লান্টে কাজ করতে এসে বিস্ফোরণে যাঁরা প্রাণ হারালেন, তাঁদের পরিবারের কী হবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা হয়ে থাকেন একমাত্র বা প্রধান উপার্জনকারী।

 

 

যাঁরা আহত হয়ে হাসপাতালে, তাঁদের চিকিৎসা সংকট ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনার খবর আসছে মিডিয়ায়। মালিকপক্ষ বলছে, তারা যথাসাধ্য করবে। তাকে তো এখন মামলাও মোকাবিলা করতে হবে। শ্রমিক অধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের উচিত হবে এর সুষ্ঠু ও দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়তা করা। অক্সিজেন প্লান্টটি কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির একেবারে বাইরে ছিল না অবশ্য। তাদের নিরাপত্তা শর্ত পালন করতে বলাও হয়েছিল। এরই মধ্যে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ছাদ উড়ে যায়, দেয়াল ফেটে যায় এবং ছিন্নভিন্ন ইস্পাতের টুকরো অনেক দূরে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে অসংশ্লিষ্ট একজনের করুণ মৃত্যু ঘটায়। ওটার কাছাকাছি যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের ঘরবাড়িও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর ক্ষতিপূরণ দেবে কে?

 

বিস্ফোরণের শব্দে যাদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয়েছে এবং ট্রমার মধ্যে পড়েছে যেসব শিশু, সে বিষয়ে কাকে কী বলব আমরা?

 

তুলা রাখার ডিপোর অগ্নিকাণ্ড সীমা প্লান্টের তুলনায় কিছুই না। অথচ সেটার আগুন নেভাতেও অনেক সময় লেগেছে। কীসের আগুন কীভাবে নেভাতে হয়, সে বিষয়ে জ্ঞানের না হলেও প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় ঘাটতি আছে। আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছে। এটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার। সীমিত লোকবল ও সরঞ্জাম দিয়ে তারা অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ভালো ভূমিকা রাখছে। দেশে যেভাবে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড বেড়ে চলেছে, তাতে এ প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রের মনোযোগ আরও বাড়াতে হবে।

 

বছর দেড়েক আগে সীতাকুণ্ড অঞ্চলেই বিএম কনটেইনার ডিপোতে এর চেয়ে ভয়াবহ যে বিস্ফোরণ ঘটে, তাতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তাদের বেশ ক’জন তথ্য ও ধারণার অভাবে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান। ডিপোতে যে তৈরি পোশাকের সঙ্গে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো মারাত্মক দাহ্য বস্তুর কনটেইনার রাখা ছিল, সেটা তাঁরা লক্ষ্য করেননি। ওই ডিপো যাঁরা গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদের একজন নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী। তিনিও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো পরিচালনায় নিরাপত্তার শর্ত পূরণে এগিয়ে আসেননি। এ দেশে ব্যবসা করতে এসে অনেকেই স্থানীয়দের মতো করে চলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।

 

লাইসেন্স প্রদানকারী ও নজরদারির দায়িত্বে থাকা লোকজনের ‘সমস্যা’ বুঝে ফেলে শুরু করেন এর সুযোগ নিতে। তার ফলে কোনো দুর্ঘটনায় ৫০ জনের মতো শ্রমিক ও ফায়ার ফাইটার মারা গেলে এবং তাঁদের রেখে যাওয়া পরিবার অসহায় হয়ে পড়লে কী আসে যায়? বিএম কনটেইনার ডিপোতে সংঘটিত দুর্ঘটনায় মামলা এখনও চলমান।

 

শিল্পকারখানায় সংঘটিত দুর্ঘটনা নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা হওয়াই ভালো। খাত ধরেও এটা হতে পারে। আমরা কিন্তু তৈরি পোশাক খাতে চলতে থাকা দুর্ঘটনাগুলো থেকে সম্ভবত বেরিয়ে আসতে পেরেছি। সেটা অবশ্য ওই খাতে আমাদের পণ্য আমদানিকারক দুই গোষ্ঠীর চাপে। তারা রীতিমতো দাঁড়িয়ে থেকে সিংহভাগ কারখানার নিরাপত্তা শর্ত পরিপূরণের বন্দোবস্ত করেছেন ব্যবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে। নিরাপত্তা শর্ত পূরণ করে চললে স্বল্পমেয়াদে উদ্যোক্তার খরচ হয়তো বাড়ে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ঠিকই সুফল পাওয়া যায়।

 

আমাদের অনেক তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান কিন্তু ভালো করছে, এমনকি আমদানিকারক দেশগুলোয় চলমান মন্দার মধ্যেও। নতুন বাজারে তাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি আকর্ষণীয়। কিছু প্রতিষ্ঠান তো ‘কমপ্লায়েন্স’-এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করেছে। দেশেই ঘটে যাওয়া এ ঘটনা প্রমাণ করে– অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা থাকলে শিল্পকারখানা নিরাপদভাবে চালানো সম্ভব। সব শেষে রানা প্লাজা ধসে ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে আমরা কিন্তু ঠিকই খাতটিকে নিরাপদ করতে সহায়তা জুগিয়েছি।

 

আশা করা হয়েছিল, কনটেইনার ডিপোতে নজিরবিহীন বিস্ফোরণের পর একই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সরকার এগিয়ে আসবে দৃঢ়ভাবে। যথোচিত নজরদারির বাইরে থাকা সীমা অক্সিজেন প্লান্টের দুর্ঘটনা বলে দিল– তা হয়নি। সহযোগী একটি দৈনিকে প্রতিবেদন এসেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে বিচিত্র শিল্পকারখানা গড়ে উঠলেও সেগুলো পরিচালনায় স্বেচ্ছাচার ও নজরদারিহীনতার কথা। সেখানে একই সঙ্গে জাহাজ ভাঙা শিল্পও গড়ে উঠেছে। রি-রোলিং মিলসহ অন্যান্য উপখাতে কিছু সুফল মিললেও এর নিরাপত্তা ঝুঁকি কিন্তু অগ্রাহ্য করার মতো নয়। সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকা, পাহাড়ি অঞ্চল ও জনপদে যথেচ্ছভাবে শিল্প-বাণিজ্যের এমন বিস্তার নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলছি কমই।

 

কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যুক্তিই বেশি করে দিচ্ছি। কিন্তু মানুষের নিরাপত্তাকে অগ্রাহ্য করে কোনো কিছু করতে দেওয়ার পরিণতি কি ভালো হয়? এটাকে ‘উন্নয়ন’ বলে প্রচার করাও অনুচিত, যখন সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে– শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে লোকবল শুধু নয়, তাদের হাতে আইনও আশ্চর্য রকম দুর্বল।

 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও শিল্প ও ব্যবসার নিরাপত্তা বিধানে প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ অনুপস্থিত। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও বেদনাদায়কভাবে নির্লিপ্ত। প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা ঘটলে কারখানাও তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়; মালিকপক্ষ বিপাকে পড়ে এবং লাটে ওঠে ব্যবসা।

 

প্রসঙ্গক্রমে পুরান ঢাকার লোকালয় থেকে রাসায়নিকের ব্যবসা সরিয়ে বিধিবদ্ধ অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনা সত্ত্বেও অবর্ণনীয় ঢিলেমির কি কোনো ব্যাখ্যা আছে? সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় কিছুই নেই, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো প্রকল্প তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেও সম্পন্ন করে সেটা আবার প্রচার করে। সাধারণ মানুষের জীবনকে নিরাপদ করে শিল্প-ব্যবসা পরিচালনাতেই কেবল দেখা যায় উদ্যোগ ও আন্তরিকতার অভাব।

 

এ যুগে উন্নয়নকে যে নিরাপদও করতে হয়– তা বোধহয় ভুলে থাকতেই চাইছি। বৈধতারও ধার ধারছি না। নইলে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের ছাদ ধসে পড়ার পর কেন খবর মিলবে যে, এর কোনো অনুমোদনই নেওয়া হয়নি! খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাচার করলে বেসরকারি খাত কেনই বা এর সুযোগ নেবে না?

 

একুশে সংবাদ.কম/স.ল.প্র/জাহাঙ্গীর

Link copied!