বিরোধী রাজনৈতিক দলের সড়ক, রেল ও নৌপথে টানা দুই দিনের অবরোধ কালে ২১টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে রোববার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। অবরোধকালীন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২১টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হল মার্কেটের সামনে বিকল্প অটো সার্ভিস পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, এদিন সন্ধ্যায় অবরোধ কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার সকাল ৪টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দুদিনে মোট ২১টি গাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়েছেন তারা। এরমধ্যে ঢাকা সিটিতে ১২টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ) ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি, আনোয়ারা, পটিয়া) ৪টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া) একটি আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। এতে ১৫টি বাস, ২ টি ট্রাক, ১ টি প্রাইভেটকার, ১ টি সিএনজিচালত অটোরিকশা ও ১ টি লেগুনা পুড়ে যায়। এই ২১টি অগ্নিকাণ্ড নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪১টি ইউনিট এবং ২৪২ জন দমকলকর্মী কাজ করেন।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা দেখা গেছে, দিনের চেয়ে রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এই ২ দিনে মোট ২১টি আগুনের মধ্যে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৬টি আগুনের ঘটনা ঘটে এবং বাকি ৫টি দিনের অন্যান্য সময়ে সংঘটিত হয়।
ফায়ার সার্ভিস আরও জানিয়েছে, রোববার ভোর ৪টায় ডেমরার সাদ্দাম মার্কেটে বাসে আগুন দেয়া হয়। একই সময় জুরাইনে তুরাগ বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। এরপর ভোট ৫টা ১৭ মিনিটে মিরপুর ৬ নম্বরে বাসে আগুন দেয়া হয়। ৬টা ২৪ মিনিটে গাজীপুরের ভোগরায় বাসে আগুন দেয়া হয়। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার জিরোমাইলে একটি মিনি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে (চৈতালি) আগুন দেয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাংলামোটর মোড়ে বাসে আগুন দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ পর ৬টা ৫৮ মিনিটে মিরপুরের পল্লবী এলাকায় শিকড় পরিবহনের বাসে আগুন দেয়া হয়। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে নীলক্ষেত মোড়ে প্রাইভেটকারে আগুন দেয়া হয়। ১০টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের বায়েজিদে টাউন সার্ভিস পরিবহনের বাসে আগুন দেয়া হয়। একইদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর হাজারীবাগে সেন্ট্রাল লাইন ট্রান্সপোর্ট বাসে আগুন দেয়া হয়।
এরপর রাত ১২টা ৩৬ মিনিটে পোস্তাগোলার জুরাইনে বাংলাদেশ বিমানের স্টাফ বাসে আগুন দেয়া হয়। রাত ১টা ২৭ মিনিটে মুগদায় সিএনজি পাম্পের সামনে লেগুনায় আগুন দেয়া হয়। এরপর রাত ২টা ১১ মিনিটে গাজীপুরে বাসে আগুন দেয়া হয়। এর পরদিন সোমবার (৬ নভেম্বর) ভোর থেকে শুরু হয় অগ্নিসংযোগ। ভোর ৫টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাসে আগুন দেয়া হয়। ভোর ৫টা ১৮ মিনিটে গাজীপুরের সফিপুর ওভার ব্রিজের নিচে কালিয়াকৈর পরিবহনের বাসে আগুন দেয়া হয়। ৫টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা এলাকায় সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয়া হয়।
৫টা ৪৮ মিনিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে খোকা কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। এরপর বেলা সোয়া ১১টায় বগুড়ার বর্ণালি লিচুতলা এলাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে বিকল্প অটো সার্ভিস পরিবহনের বাসে আগুন দেয়া হয়। সবশেষ বিকেল সাড়ে ৫টায় মিরপুর ১০ নম্বরে ঢাবির (বিআরটিসি) বাসে আগুন দেয়া হয়।
দুই দিনের কর্মসূচি শেষ হওয়ার আগে সন্ধ্যায় আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। মাঝে একদিন (মঙ্গলবার) বিরতি দিয়ে বুধবার (৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
এদিকে ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১০টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর একটি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ৬টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি, ৬ নভেম্বর ১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
একুশে সংবাদ/এএইচবি/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :