উপকরণ ছাড়াই জরাজীর্ণ ভবনে প্রশিক্ষণ!
একুশে সংবাদ : ক্লাস চলছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো টুলে বসে একদল তরুণ মনোযোগ দিয়ে শুনছেন শিক্ষকের কথা। সামনের টেবিলে বই-খাতা রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে কিছু লিখছেন কেউ কেউ। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের অবস্থা খুবই নাজুক। জরাজীর্ণ দরজা-জানালা। টুল-টেবিলের অবস্থাও ভালো নয়। ভাঙাচোরা, জোড়াতালি দেওয়া। সীমিত আসনে ভাগাভাগি করে বসেছেন অনেকে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর পরিচালিত অনাবাসিক যুব প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রের চিত্র এটি। সরেজমিনে দেখা যায় এসব অব্যবস্থাপনার চিত্র।
পাহাড়তলী হাজিক্যাম্প এলাকায় পরিত্যক্ত একটি দ্বিতল ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে প্রশিক্ষণকেন্দ্রটি। ২০০৩ সালে এটি গড়ে তোলা হয়। কিন্তু গত ১০ বছরেও এতে কোনো সংস্কার এবং উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ–সরঞ্জাম না থাকায় পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না বেকার তরুণ-তরুণীরা।
কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক মো. শহিদুল ইসলামও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এসব অব্যবস্থাপনার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। প্রতি মাসে আমাদের পর্যালোচনা সভায়ও আলোচনা হচ্ছে এবং সেভাবে সভার কার্যক্রমও অবহিত করা হয়।’
প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আটটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানান এখানকার কর্মরত প্রশিক্ষকেরা। এগুলো হচ্ছে: মডেল অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনস, পোশাক তৈরি, ব্লক-বাটিক ও স্ক্রিনপ্রিন্টিং, মৎস্য চাষ, কম্পিউটার বেসিক, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনার, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড হার্ডওয়ারিং এবং ইলেকট্রনিকস। এসব কোর্সের মেয়াদ চার থেকে ছয় মাস। বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণের জন্য এখানে ১৪ জন প্রশিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চারজন জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষক, সাতজন প্রশিক্ষক এবং তিনজন সহকারী প্রশিক্ষক। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন পাঁচজন প্রশিক্ষক। বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশিক্ষণার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘একটি কক্ষে বড়জোর ২০ জন বসতে পারেন। কিন্তু সেই কক্ষে বসতে হচ্ছে ৬০ জন করে। আমরা কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রয়োগের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। কিন্তু এখানে কোনো ইন্টারনেট সংযোগই নেই। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের দোতলায় একটি কক্ষে এশিয়া ফাউন্ডেশনের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা এবং ডিজিটাল লাইব্রেরির নামফলক লাগানো রয়েছে। কিন্তু কক্ষটি তালা দেওয়া থাকে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালের দিকে এশিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে লাইব্রেরি চালু করা হয়। কিন্তু তহবিল–সংকটের গত বছরের মাঝামাঝিতে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশিক্ষণকেন্দ্রের টয়লেটগুলোর অবস্থাও খুব নাজুক। প্রশিক্ষণার্থীরা বেশ ক্ষুব্ধ বিষয়টি নিয়ে। এ ছাড়া রয়েছে কম্পিউটার–স্বল্পতা। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ চলছে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই। আসন–সংকটের কারণে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। ব্লক-বাটিকের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রশিক্ষণ সরঞ্জামের ঘাটতি। এ জন্য চুলার প্রয়োজন হলেও নেই গ্যাসের সংযোগ। স্টোভ দিয়ে চালানো হচ্ছে ঠেকার কাজ। নেই কোনো ল্যাবের ব্যবস্থা।
২০১১ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ডিজিটাল লাইব্রেরি ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও সেটিও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ সময়।
কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশিক্ষণকেন্দ্রে টেলিফোন সংযোগ থাকলেও কোনো টেলিফোন সেট নেই। এখানে কোনো ব্রডব্যান্ড সংযোগ অথবা ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা না থাকায় প্রশিক্ষণার্থীদের ব্রাউজিং, ই-মেইল প্রভৃতি বিষয়ে হাতে–কলমে কোনো ধারণা দেওয়া যায় না। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য যেখানে ৪০টি কম্পিউটারের প্রয়োজন, সেখানে আছে মাত্র ১৬টি, যা প্রয়োজনের তুলনাই নগণ্য বলে মনে করেন প্রশিক্ষণার্থীরা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/৩১-০৮-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :