সংসার চলে 'গুলা' বিক্রি করে
একুশে সংবাদ : মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা সদর হতে প্রায় ২০কি. মিঃ দূরে শাশইল গ্রাম। এ গ্রামের পাশ দিয়ে মহাদেবপুর-পোরশার সদর রাস্তা। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে যেতেই কানে ভেসে আসতে লাগলো, লালমাটি গুলা নিবেন! লালমাটি গুলা। এ পাশ ও পাশ তাকাতেই চোখে পড়ল এক তরুন। হালকা পাতলা শারীরিক গঠন। গায়ে ফুলহাতা শার্ট আর গলায় একটি গামছা ঝুলানো রয়েছে। সঙ্গে এক ভ্যান লালমাটির গুলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই বললেন বাড়ি নওগাঁর সাপহার উপজেলার ঘাটনগর ইলিমপুর গ্রামে। বাবা বয়েসের ভারে নুয়ে পড়ায় প্রায় ১৬ বছর ধরে তার পেশাকেই আমি বেছে নিয়েছি। বাবার নাম আবদুল জব্বার। আমার নাম রমযান আলী (২৪) লেখাপড়া তেমন জানিনা। বাবা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ লালমাটি সংগ্রহ করে অত্রাঞ্চলে বিক্রয় ও তার আয় থেকে সংসার চালাতেন। আমিও প্রায় বাবার সাথে থেকে সহযোগিতা করতাম এ কাজে।
এ লালমাটির গুলা গুলো বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে রাস্তার উভয় পাশ, নতুন পুকুর খননকালে সংগ্রহ করি। এরপর মাটিগুলো পানিতে ভিজিয়ে চালুনি দিয়ে চেলে মাটির আকির গুলো বের ও গুলা তৈরি করে রোদে শুকিয়ে বাজার, গ্রাম ও মহল্লায় বিক্রয় করে নগদ টাকা অথবা সমমূল্যের চাল নিয়ে থাকি। প্রতিটি মাটির গুলা তিন থেকে চার কেজি ওজনের এবং স্থান ভেদে ২০-৩৫ টাকার বিনিময়ে বিক্রয় হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার টাকার বিক্রয় হয়। পরিবারে পাঁচ জন সদস্য এ কাজে পুরো সহযোগিতা করে থাকেন।
এখন কিছু মানুষ ইটের বাড়ি তৈরি করতে শুরু করলেও রমযান আলী জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের ঘর বাড়ি প্রায়ই মাটির তৈরি। এ মাটি ক্রয় করে সৌন্দর্য বর্ধণের জন্য বাড়ির মেঝে, দেয়াল, আঙ্গিনা, ঘরের কোঠা লেপন করে থাকে গৃহিনীরা। এতে ধূলিবালিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে জানা যায়। আর এ মাটি বিক্রয়ের আয় থেকে রমযান আলীর পাঁচ সদস্যের সংসার ভালো ভাবেই চলে থাকে।
রমযান আলী আরো জানান, নওগাঁর পত্নীতলা, সাপহার, পোরশা নিয়ামতপুর সহ আশপাশের উপজেলা গুলোর প্রায় বাড়ির মালিকের বাড়িতে আমার মোবাইল ফোন দেওয়া আছে। প্রয়োজন হলেই তারা জানিয়ে দেন আমাকে। সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যানে করে নিয়ে তাদের বাড়িতে পৌছিয়ে দিয়ে থাকি। এ পেশায় আসার পর তাকে আর কারো কাছে হাত পাততে হয় না। তিনি স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/২১-০১-০১৫:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :