মায়ের আদেশে যুদ্ধে যাই
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ দিনটি ছিল ২৫ শে মার্চ। নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর পাক হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলায় সারাদেশ শোকে আচ্ছন্ন। মা আমাকে পাশে বসিয়ে বলল, বাপ তুই যুদ্ধে যা। দেশের জন্য যুদ্ধ কর। বীর হয়ে ফিরে আয়। মুক্তিযোদ্ধা মহির আলমের মা সবজান এভাবে মহির আলম কে যুদ্ধে যেতে বলেছিলেন। মায়ের আদেশ পেয়ে স্বাধীনচেতা মহির আলম নিরস্ত্র বাঙ্গালীর ওপর পাকহানাদার বাহিনীর অত্যাচারের কথা ভেবে যুদ্ধে যেতে মনস্থির করেছিলেন।
বুকে অমিত শক্তি সঞ্চয় করে মায়ের আর্শিবাদ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে রওনা হন ভারতের উদ্দেশ্যে। সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙ্গালীর ওপর পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ছড়িয়ে পড়েছে। যেদিকে তাকানো যায় ঘর-বাড়ি আগুনে পুরে দেয়ার চিত্র চোখে পড়ে।
মহির আলম আরো জানান, মায়ার জালে আটকা পড়ে যান এই ভেবে সেদিন একবারও পেছন ফিরে তাকাননি তিনি। এরপর ভারতের কাঁকড়ি পাড়া এলাকায় ১৯ দিনের ট্রেনিং শেষে রৌমারী ট্রেনিং সেন্টারে আরো ১০ দিনের ট্রেনিং-এ অংশ নেন। এরপর ১১ নং সেক্টরে যোগদান করেন। পরে ১১ নং সেক্টরের কোম্পানী কমান্ডার প্রকৌশলী আবুল কাশেম চাঁদের নির্দেশে কয়েকটি প্লাটুনে ভাগ হয়ে চিলমারী আক্রমনে অংশ নেন।
এ সময় তার প্লাটুনের কমান্ডার ছিলেন নজরুল ইসলাম। মহির আলম জানান, ১৯৭১ এর ১৭ই অক্টোবর রৌমারী ক্যাম্প থেকে নৌকা যোগে চিলমারীতে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। অভিযানে অনেক পাকহানাদার বাহিনী নিহত হয়। এরপর ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার প্রকোশলী আবুল কাশেম চাঁদের নেতৃত্বে ৮ নভেম্বর রাতে উলিপুর ডাকবাংলো পাকহানাদার বাহিনী মুক্ত করতে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি।
পরে হাতিয়া, অনন্তপুরসহ কয়েকটি এলাকায় যুদ্ধ করি। যুদ্ধে ওইসব এলাকার ৬ শতাধিক সাধারণ লোক পাকহানাদার বাহিনীর এলোপাতারী গুলিতে মারা যায়। দেশ শক্রমুক্ত হওয়ার পর আমরা সকলে চিলমারী হাসপাতালে একত্রিত হই। কোম্পানী কমান্ডার আবুল কাশেম চাঁদের নির্দেশে ২৪ শে জানুয়ারী ১৯৭২ সালে গাইবান্ধা মালোশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেই। এর পরে মোঃ শওকত আলী সরকার (বীর বিক্রম) এর হাতে মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্র গ্রহন করি। মহির আলমের মুক্তিবার্তা-০৩১৬০৫০১৮৩, গেজেট নং-১৬৬১।
মহির আলম জানান, মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিমর্হুত যখন চোখে ভাঁসে জ্বল চলে আসে। স্বাধীনতার ৪৪ তম বিজয়ের দিন পেরিয়ে গেলেও আমরা কি পেলাম। আজ আমি পুঙ্গুত্ব বরণ করলেও সরকারী কোন সাহায্যে-সহযোগীতা পাইনি। পত্রিকার পাতা খুললেই পাওয়া যায় আমার মতো অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের চরম দারিদ্রতার খবর।
একুশে সংবাদ ডটকম/মমিনুল ইসলাম বাবু/২১.১২.১৪।
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :