পর্তুগালের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে সবদিক থেকে সমর্থন দিয়ে আসছেন রবার্তো মার্টিনেজ। তিনি আশা করছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ের উপর এই বিশ্বাস পর্তুগালকে দ্বিতীয় ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ শিরোপা উপহার দিবে।
এফ-গ্রুপের অপর তিন দল হলো তুরষ্ক, জর্জিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র। এর মধ্যে জর্জিয়া এই প্রথমবারের মত ইউরোর মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। রোনাল্ডো রেকর্ড ২০৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও সর্বোচ্চ ১৩০ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডো ক্যারিয়ারে ১১তম বড় কোন টুর্নামেন্ট খেলতে মাঠে নামতে যাচ্ছেন। এনিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে খেলবেন রোনাল্ডো। এ পর্যন্ত ১৪ গোল করে ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন এই সুপারস্টার। জার্মানীতে তার সামনে সুযোগ থাকছে নিজের রেকর্ডকে আরো সমৃদ্ধ করার।
ইউরো ২০২৪ বাছাইর্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। যদিও অনেকেরই ধারনা সৌদি পেশাদার লিগে যাবার কারনে হয়তোবা জাতীয় দলের জার্সিতে তার পারফরমেন্সে প্রভাব পড়তে পারে।
২০২২ কাতার বিশ্বকাপে আগের কোচ ফার্নান্দো সান্তোস নক আউট পর্বে রোনাল্ডোকে মূল দল থেকে বাদ দিয়েছিলেন। মরক্কোর কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে বিস্ময়করভাবে হেরে গিয়ে হতাশ করেছিল পর্তুগাল। কিন্তু আবারো সেই রোনাল্ডোর উপরই ভরসা করতে হচ্ছে পর্তুগালকে। যদিও এই সময়ের মধ্যে দলের আক্রনমনভাগে ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নান্ডো সিলভা, দিয়োগো জোতা ও গনসালো রামোসদের মত খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রমান করেছেন।
কাতার বিশ্বকাপ শেষে পর্তুগালের দায়িত্ব নেবার পরপরই মার্টিনেজ বলেছিলেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো বিশ্বের একজন সেরা খেলোয়াড়, যার নামের পাশে রয়েছে সর্বোচ্চ ম্যাচ ও সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ড্রেসিং রুমে তার অভিজ্ঞতা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খেলোয়াড়েরই দলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভূমিকা রয়েছে। সবচেয়ে তরুণ খেলোয়াড়টির ম্যাচ খেলার আকাঙ্খা রয়েছে। আর রোনাল্ডো, রুই প্যাট্রিসিও, বার্নান্ডো সিলভারা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে দলকে সহযোগিতা করবে। ড্রেসিং রুমে এ ধরনের পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকাটা খুবই জরুরী।’
যদিও রোনাল্ডোই তার দলের সবচেয়ে বেশী বয়সী খেলোয়াড় নন। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ সতীর্থ পেপে ৪১ বছর বয়সেও নিজেকে জাতীয় দলে ধরে রেখেছেন। মার্টিনেজ বলেছেন শুধুমাত্র ড্রেসিং রুমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যই পোর্তোতে খেলা পেপেকে তিনি দলে রেখেছেন। ইনজুরির কারনে রোনাল্ডোর আল-নাসরের সতীর্থ ওটাভিওর খেলা হচ্ছেনা। তার পরিবর্তে দলে ডাক পেয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার মাথিয়াস নুনেস।
গ্রুপ-এফ থেকে পরের রাউন্ডে যেতে হট-ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামতে যাচ্ছে পর্তুগাল। কিন্তু রোনাল্ডোর সাথে দলের অনেকেই বুঝতে পারছে সহজ গ্রুপ অনেক সময় নিজেদের কারনে কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ২০১৬ সালে শিরোপা জয়ের পথে গ্রুপ পর্বে পর্তুগাল অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও আইসল্যান্ডের সাথে ড্র করেছিল।
আগামী ১৮ জুন লিপজিগে চেক প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মার্টিনেজের দল ইউরো শুরু করবে। চারদিন পর ডর্টমুন্ডে তুরষ্ক ও ২৬ জুন জেলসেনকার্চেনে শেষ ম্যাচে জর্জিয়ার মোকাবেলা করবে। ২০০৮ ও ২০১২ সালে স্পেন ও ১৯৭২ ও ১৯৮০ সালে জার্মানীর শিরোপা জয়ের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে পর্তুগালের সামনে সুযোগ আছে তিনটি আসর বা তার কম সময়ের মধ্যে দুটি শিরোপা নিশ্চিত করার। ২০২০ সালে শেষ ষোলতে বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় পর্তুগীজরা।
আসরের নতুন দল জর্জিয়া তাদের তারকা স্ট্রাইকার কাভিটা কাভারাটসখেইলার উপর পুরোপুরি নির্ভওশীল। এই বছর একমাত্র দল হিসেবে জর্জিয়ার ইউরোতে অভিষেক হতে যাচ্ছে। সাবেক ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন গ্রীসকে প্লে-অফে পেনাল্টিতে পরাজিত করে মূল পর্বের টিকেট পায় জর্জিয়া। ২৪ দলের ফর্মেটের টুর্নামেন্টে জর্জিয়ার মত খর্ব শক্তির দলের সামনে সুযোগ রয়েছে নক আউট পর্বে যাবার। গ্রুপ পর্বে একটি জয় পরের রাউন্ডে যাবার সম্ভাবনা তৈরী করবে।
এবারের মৌসুমে নাপোলি সিরি-এ লিগে হতাশাজনক মৌসুমের অংশ ছিলেন কাভারাটসখেইলা। যদিও বাছাইপর্বে চার গোল করে জর্জিয়ার মূল ভরসার নাম হয়ে আছেন।
পর্তুগালের সাথে এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাবার ক্ষেত্রে চেক প্রজাতন্ত্রই এগিয়ে আছে। ইউরোতে আগের আসরগুলোতে ভাল পারফরমেন্সই তাদের এগিয়ে রেখেছে। গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্কের কাছে হেরে তারা বিদায় নিয়েছিল। রোনাল্ডোর সাথে ২০২০ ইউরোতে যৌথভাবে শীর্ষ গোলদাতা হয়েছিলেন প্যাট্রিক শিক। বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়ন বায়ার লেভারকুসেনের হয়ে স্মরণীয় মৌসুম কাটানো শিক এবারও নিজেকে প্রমানে মুখিয়ে আছেন।
তুরষ্ককে সবসময়ই ইউরোর সম্ভাব্য ডাক হর্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও গত আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে তাদের বিদায় অনেককেই হতাশ করেছিল। হাকান কালহানগ্লু নেতৃত্বে রিয়াল মাদ্রিদের তারকা আরডা গুলারসহ অন্যান্যরা এবার ভাল কিছু করার ব্যপারে আশাবাদী।
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :