AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চিনির চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে সুগারবিট চাষ


Ekushey Sangbad
হাসান কাজল
০৩:০২ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪
চিনির চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে সুগারবিট চাষ

সুগারবিট দেশের চিনির চাহিদা পূরণে বিশাল ভূমিকা রাখতে সক্ষম। দেশে চিনি উৎপাদনের পুরোটাই তৈরি হয় আখ থেকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ টি চিনি কলে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হয়, তা বার্ষিক চাহিদার পাঁচ শতাংশেরও কম। গবেষণায় দেখা গেছে সুগারবিট চাষে আরো ২০ শতাংশ চাহিদা পূরণ সম্ভব। বিশ্বের মোট উৎপাদিত চিনির ৮০ ভাগই আসে আখ থেকে। আর সেই চিনির বেশিরভাগ উৎপাদিত হয় ভারত ও ব্রাজিলে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। আখের পাশাপাশি নতুন ফসল সুগারবিট থেকে চিনি তৈরি করে এই চিত্র পাল্টানো যায়। বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা দেশের মাটিতে সফলভাবে সুগারবিট উৎপাদন করেছেন। এই ফসলের উৎপাদন সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে তারা সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে সুগারবিট থেকে আখের চেয়ে কম সময়ে চিনি উৎপাদন করা সম্ভব। তবে সুগারবিট চাষের পরীক্ষামূলক প্রকল্প সফল হওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে চাষের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বাংলাদেশে শেষ পযর্ন্ত সুগারবিট চাষ ও সুগারবিট দিয়ে চিনি তৈরির কার্যক্রম আলোর মুখ দেখেনি।

সুগারবিট কী?

সুগারবিট অনেকটা মিষ্টি আলু জাতীয় একটি উদ্ভিদ, যার মূলে উচ্চ মাত্রায় সুক্রোজ থাকে। পৃথিবীর অনেক দেশেই সুগারবিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে সাদা চিনি উৎপাদন করা হয়। গুড় ও লাল চিনিও তৈরি হয়ে থাকে। সুগারবিটের মূলকে কুচি কুচি করে কেটে এটিকে পানির সাথে মিশিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জাল দিলে এর ভেতরে থাকা চিনি নির্গত হয়ে পানির সাথে মিশে যায়। তারপর সেই পানিকে সিদ্ধ করলে এক পর্যায়ে দানাদার চিনি পাওয়া যায়। সুগারবিট সাধারণত শীত প্রধান দেশের ফসল হলেও নাতিশীতোষ্ণ এলাকাতেও এটি হয়ে থাকে।

গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে , 

আখ উৎপাদন করতে সময় লাগে ১ বছর । সুগারবিট শীতের পাঁচ মাসেই উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি আঁখের সাথে একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবেও সুগারবিট উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানা গেছে। আখের তুলনায় সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনে কিছুটা বেশি খরচ হয়। আখের ক্ষেত্রে ফসলের রস নিয়ে সেটিকে তাপ দিয়ে চিনি উৎপাদন করা হয়। তাপ দেয়ার ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে আখের বাকি অংশই সাধারণত ব্যবহার করা হয়।

আর সুগারবিটের ক্ষেত্রে বিটকে ছোট করে কেটে সেটিতে পানি মিশিয়ে তাপ দিয়ে চিনি আলাদা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য আলাদা যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১০-১১ থেকে প্রায় আট বছর বাংলাদেশে সুগারবিট উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই বাছাই করে। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত চিনি কলের জমিতে আখ চাষীদের সুগারবিট চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এই গবেষণার সাথে শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন এমন এক কৃষি কর্মকর্তা বলেন,  

“প্রায় আট বছর তিন ধাপে গবেষণা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, বাংলাদেশে সুগারবিট উৎপাদন করা সম্ভব। উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি দক্ষিণের লবণাক্ত পানির অঞ্চলেও সুগারবিট চাষ করা হয়। দেশে ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২টি চিনি কল এলাকায় এক হাজারের বেশি আখ চাষীকে সুগারবিট উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় পাইলট প্রকল্পের অধীনে। এই প্রশিক্ষণের পুরোটাই ছিল গবেষণা প্রকল্পের অংশ, তাই এ সময় আখ চাষীদের জমিতে সুগারবিট চাষ না করে চিনি কলের নিজস্ব জমিতে এই গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণায় জড়িত ব্যক্তিরা বলেন, 

জমিতে ফলন এবং চিনি উৎপাদনের হার–দুই হিসেবেই আখের চেয়ে বেশি লাভজনক সুগারবিট। এক একর জমিতে ৩০ থেকে ৪০ টন সুগারবিট উৎপাদন করা সম্ভব, যেখানে এক একর জমিতে বাংলাদেশে ২০-২৫ টন আখ উৎপাদন করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আখের ক্ষেত্রে এমন দেখা যায় যে, কারও জমিতে অনেক ফলন হয় আবার কারও জমিতে খুব কম ফলন হয়। কিন্তু সুগারবিট প্রায় সব জমিতেই একই ধরণের ফলন হয়।”

আখের তুলনায় সুগারবিটে ২ গুণ চিনি পাওয়া যায় :

এছাড়া সুগারবিটে আখের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ চিনি থাকে। একশো কেজি আখ থেকে যেখানে সর্বোচ্চ সাত কেজি চিনি উৎপাদন করা সম্ভব, একই পরিমাণ সুগারবিট থেকে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ সেখানে ১২ থেকে ১৩ কেজি হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, 

উৎপাদনশীল জাতের আখের অভাব, সময়ের আগে বা পরে আখ কাটা, চিনি কলে পৌঁছানোর আগে আখ শুকিয়ে যাওয়া, কারখানার ভুলত্রুটি–এরকম নানা কারণে বাংলাদেশে যে পরিমাণ আখ উৎপাদন হতে পারে, তা হয় না।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দুই ধরনের সুগারবিটের জাতও উদ্ভাবন করে যেগুলো বাংলাদেশের লবণাক্ত মাটিতে সহজে, কম খরচে চাষ করা যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় চিনি কলে পরীক্ষামূলকভাবে সুগারবিট চাষ করা হলেও কৃষকরা নিজে থেকে সুগারবিট চাষ করেননি। চাষের ক্ষেত্রে বীজ দেয়া থেকে শুরু করে চাষ পরবর্তী সার্বিক সহায়তাও সবসময় ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে এই ফসলের বাজার না থাকায় এর নির্ধারিত বাজারমূল্যও নেই। তবে কৃষকরা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন যে, ফসল সময়মত বিক্রি করা গেলে সুগারবিট চাষ বেশ লাভজনক ফসল হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।  

চাষীদের মতে,  

সুগারবিট চাষে কম সময় লাগে এবং অন্য ফসলের সাথে একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। এই কারণে সুগারবিট  চাষ বেশ লাভজনক হবে বলে মনে করেন তারা।

কৃষকদের ভাষ্য মতে, 

এক বিঘা জমিতে সুগারবিট  চাষ করতে ১৪-১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়, বেশি সেচও লাগে না। এই খরচে এখান থেকে প্রায় দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব।

ঠাকুরগাঁও গাইবান্ধা, পাবনা, সাতক্ষীরা সহ যেসব এলাকায় কৃষকদের সুগারবিট চাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, তাদের অধিকাংশেরই সুগারবিট চাষে  আগ্রহ রয়েছে  বলে জানা যায়।


একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা

 

Link copied!