বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ঠিক উত্তর দিকে টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে প্রতি বছর তাবলীগ জামাতের ‘বিশ্ব ইজতেমা’ অনুষ্ঠিত হয়। এই জমায়েত বাংলাদেশে হয়ে আসছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। লাখ লাখ মানুষ এতে অংশ নেন, যাদের মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো।
পৃথিবীরে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হজের পর এই বিশ্ব ইজতেমাকে বলা হয় মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় জমায়েত। এর গোড়াপত্তন হয় ভারতে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা অর্ধ শতকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে হয়ে আসছে।
বর্তমানে এতে বিশ্বের ১৩৫ টির অধিক দেশের মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। এতে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে এখানে বিশ্বের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব ইজতেমার আগে ১০ দিনের জোড় হয়ে থাকে। এ বছর ৫৭ তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর বয়ানের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম দিকে এই বিশ্ব ইজতেমা শনি, রবি ও সোম-এই তিন দিন অনুষ্ঠিত হতো। সোমবার জোহরের আগে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটত। কার্যত দেখা যেত, অধিকাংশ লোক শুক্রবার জুমার আগেই চলে আসেন, এতে তিন দিনের ইজতেমা চার দিনে গড়ায়। তাই পরবর্তী সময়ে সুবিধা বিবেচনায় শুক্র, শনি ও রবি করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় ক্রমবর্ধমান লোকসংখ্যার কারণে ২০১১ সাল থেকে এই বিশ্ব ইজতেমাকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়। প্রতি পর্বে নির্ধারিত ৩২ জেলার লোক অংশগ্রহণ করে থাকতেন। এতেও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে ৩২ জেলাকে পুনরায় দুভাগে বিভক্ত করে এক বছর পর পর ১৬ জেলার লোক অংশগ্রহণ করার পদ্ধতি চালু করা হয়। এতে প্রতিবছর দুই পর্বে মোট ৩২ জেলা অংশগ্রহণ করে এবং পরবর্তী বছর অন্য ৩২ জেলা অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এবং বছরব্যাপী সুবিধামতো সময়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জেলায় বা কয়েকটি জেলা মিলে তিন দিনের ইজতেমা ও ১০ দিনের ‘জোড়’ অনুষ্ঠিত হয়।
আখের অর্থ শেষ, আখেরি অর্থ শেষের; মোনাজাত মানে দোয়া বা প্রার্থনা। আখেরি মোনাজাত অর্থ হলো সমাপনী দোয়া বা যে দোয়ার মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্ত করা হয়।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার তুরাগ নদের তীরে টঙ্গী ময়দানে তাবলিগ জামাতের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিনে বিদায়লগ্নে যে সুদীর্ঘ সম্মিলিত দোয়া বা মোনাজাত করা হয়, তা-ই আখেরি মোনাজাত নামে পরিচিত।
তবে আজকাল একাধিক দিবসব্যাপী অনুষ্ঠেয় মাহফিল বা একাধিক অধিবেশনে বিন্যস্ত অনুষ্ঠানমালার সর্বশেষ দোয়াকেও আখেরি মোনাজাত নামে অভিহিত করা হয়। যেকোনো মাহফিলের শেষের দোয়াকেও আখেরি মোনাজাত বলতে শোনা যায়।
হাদিস শরিফে রয়েছে: ‘দোয়া ইবাদতের মগজ বা মূল’। (বুখারি ও মুসলিম) তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ বিশেষ সময়ে এবং কোনো কাজের শুরুতে ও শেষে দোয়া করা সুন্নত। সম্মিলিতভাবে দোয়া করা মুস্তাহাব। কোনো মজলিশে কোনো একজনের দোয়া কবুল হলে তার সৌজন্যে আল্লাহ তাআলা সবার দোয়া কবুল করবেন, আশা করা যায়। বড় মজমায় বা অধিক লোকের মাঝে এক বা একাধিক আল্লাহর মকবুল বা পেয়ারা বান্দা থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এসব বিবেচনায় আখেরি মোনাজাত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কাছে বা দূরে থেকে, যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো অবস্থান থেকে, যেকোনো মাধ্যমে দোয়া বা মোনাজাতে শামিল হওয়া যায়।
নির্ধারিত ইবাদত, যথা ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য সর্বাধিক এবং এগুলো সর্বাগ্রে পালনীয়। অনির্ধারিত ইবাদত নফল ও মুস্তাহাবের স্থান এর পরে। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত বাদ দিয়ে নফল বা মুস্তাহাব আমল করা জ্ঞানবানদের জন্য যুক্তিযুক্ত নয়।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :