AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উত্তরাঞ্চলে ভয়ানক রূপ নিচ্ছে খরা


Ekushey Sangbad
আব্দুল বাতেন, রাজশাহী
০২:২৩ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
উত্তরাঞ্চলে ভয়ানক রূপ নিচ্ছে খরা

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের দিব্যস্থল গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া। দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছেন আউশ ধানের। বৈশাখের শুরু থেকেই উত্তরাঞ্চব্যাপী যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে এতে করে রফিক মিয়ার ধানের জমিতে সেচে খরচ বেড়েছে দ্বিগুনের বেশি।

সেচ দিয়ে পানি ক্ষেতে বেশি দিন থাকছে না। অল্প দিনেই শুকিয়ে মাটি চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং তীব্র খরায় পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ধান নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে রফিক মিয়াসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের।

কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ফসলের জন্য পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বৈশাখ মাস শুরু হওয়ার পরে যেইভাবে খরা শুরু হয়েছে বাবা কি বুলবো, তারপর থেকেই আমগো বিলে জমিতে পানি পাওন যাইচ্ছে না। পানির অভাবে জমিগুলান শুকিয়ে যাচ্ছে। এত ট্যাকা খরচ করে ধান লাগানু আর সেই ধান পানির অভাবৈত মইরে যাচ্ছে। আল্লার কাছে দুয়া করি যাতে বৃষ্টি হয় আর আমাগো ধান গুলো বাঁইচ্যা থাকুক।

আরেক কৃষক সুজন আলী বলেন, যেইভাবে রৌদ পড়ছে তাতে তো দশ মিনিট মাঠে থাকাই মুশকিল। আর ধান তো পানি ছাড়া বাচেঁ না। ধান হতে হলে আগে পানির ব্যবস্থা থাকা লাগবে। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে গভীর নলকূপগুলো থেকে অর্ধেক পানি উঠছে আবার কোথাও পানিই উঠছে না। এমন হলে আমরা কৃষকরা কোথায় থেকে জমিতে দেওয়ার জন্য পানি পাবো?

রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও পানির সংকট দেখা দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলে টানা তাপদাহ চলছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায় শুক্রবার (১৮ই এপ্রিল) মৌসুমের সব্বোর্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (১৯ ই এপ্রিল) বেলা ৩টার দিকে। তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই তীব্র গরমে জনজীবনে অস্থিরতা নেমে এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতে দেশজুড়েই চলছে হিট অ্যলার্ট। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর-খালে পানি শুকিয়ে গেছে। এই অবস্থায় কৃষককে ফসল রক্ষায় পড়েছেন বিপাকে।

তানোর উপজেলার মত একই চিত্র পবা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌরসভার। উপজেলার দামকুড়া ইউনিয়নের কলার টিকর এলাকায় গভীর নলকূপ থেকে আগের চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ পানি উঠছে।

এলাকার আওয়াল হোসেনের কাছে পানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এইদিকে পানির জন্য তেমন একটা সমস্য হয় না। কিন্তু ইদানিং দেখছি যে হারে খরা হচ্ছে এতে করে খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এখানে সেচের কাজে ব্যাবহার হওয়া গভীব নলকূপগুলোতে আগে যে পরিমাণ পানি উঠতো এখন তার অর্ধেক উঠছে। দিনের চেয়ে রাতের বেলায় সামান্য পরিমাণ পানি বেশি পাওয়া যায়। তাই আমরা কৃষকেরা রাতের বেলাতেই পানি নিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু এই ভাবে চলতে থাকলে আমরা ধান নিয়ে তো ভালোই সমস্যায় পড়বো। খরার কারণে জমিতে পানি দিতে না দিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভায় পিল্লাপাড়া এলাকার মোহম্মদ আলী। তার ব্যবহৃত টিউবওয়েল থেকে বের হচ্ছে না পানি। ৬ সদস্যের পরিবার এবং বাড়িতে ৩টি গরু থাকায় পানির চরম অভাবে পড়তে হয়েছে তাকে।

মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার বাড়িতে গোসল খাওয়া থেকে শুরু করে গরুকে গোসল করানো সবই হয়ে থাকে টিউবওয়লের পানি থেকে। কিন্ত ৪-৫ দিন থেকে পানি না পাওয়ায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

টিউবওয়েল বসানো কারিগর জলিল আলী জানান, ইদানিং অনেকেই ফোন দেয় টিউবওয়েল নষ্ট হয়েছে জানিয়ে। ঠিক করতে গেলে গিয়ে দেখি তাদের টিউবওয়ের ঠিকই আছে কিন্তু পানির লেয়ার পাচ্ছে না। তাই টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ছাড়া লেয়ার উপরে উঠবে না।

পবা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহিনুল হক বলেন, প্রতিবছরই খরার কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা যায়। তবে আশা করছি বৃষ্টি শুরু হলে আবার পানির স্থর পূর্ণরায় আগের জায়গায় আসবে এবং পানি প্রবাহ সঠিক হবে।

রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের উত্তরাঞ্চলে পানি না পাওয়ার ভিতরে অন্যতম দুইটি প্রধান কারণ আছে। প্রথমটি হলো, তীব্র খরা এবং দীর্ঘদিন এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়া। তীব্র খরায় পানির যে উৎস গুলো আছে পুকুর, খাল-বিল নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পানির সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।

দ্বিতীয় কারণ হলো বরেন্দ্র অঞ্চলে আমাদের সরকারী সেচ ব্যবস্থা বাদেও ব্যাক্তি উদ্যেগে অনেকে গভীর নলকূপ খনন করেছে এতে করে পানির সংকট তৈরী হচ্ছে সেগুলো এলাকায়। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের জন্য সাধারণ কৃষক ভাইরা পানি পাচ্ছে না। তবে কৃষক ভাইয়েরা যাতে পানি পায় সেই লক্ষে আমরা আমাদের পুরনো গভীর নলকূপ গুলো উঠিয়ে নতুন করে খনন করে আবরা প্রতিস্থাপন করা হবে এতে করে কৃষক ভাইদের পানির জন্য সমস্য হবে না।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!