AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রঙিন ফুলকপি আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন মদনের কৃষকরা


Ekushey Sangbad
মোঃ সাকের খান, মদন, নেত্রকোণা
০৪:১১ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
রঙিন ফুলকপি আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন মদনের কৃষকরা

মদন (নেত্রকোণা) প্রতিনিধিঃ বাজারে প্রচলিত সাদা ফুলকপির পাশাপাশি নতুনমাত্রা যোগ করেছে সবজিটির নানা রঙের জাত; যার পুষ্টিগুণ ও স্বাদ তুলনামূলক বেশি বলে জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ ছাড়া দাম ও লাভ ভালো হওয়ায় ‘ইউরোপে সালাদ’ হিসেবে ব্যবহৃত সবজিটি আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন ভাটি বাংলার চাষিরা। 

গত কয়েক বছর ধরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে কমলা ও বেগুনীবর্ণের ফুলকপি চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। চাষিরাও আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, এর স্বাদ প্রচলিত সাদা ফুলকপির চেয়ে একটু বেশি। 

নেত্রকোণার মদন উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, “বাজারে নতুন আসা কমলা রংয়ের ফুলকপিতে রয়েছে বিটা কেরোটিন; যা শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়। আর বেগুনীবর্ণ ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্থোসাইয়ানিন; যা শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘সি’-এর প্রাচুর্যসহ সাধারণ ফুলকপির (সাদা ফুলকপি) সব পুষ্টিগুণ উপাদানই রয়েছে। সারাদেশের মতো বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির প্রকল্পের আওতায় আধুনিক জাত সম্প্রসারণ প্রদর্শনী হিসেবে প্রথমবারের মতো নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলায় রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মৌরী তানিয়া মৌ। মদন উপজেলার এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, উপজেলার মদন ইউনিয়নের উচিতপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ৩৩ শতক জমিতে এই বাহারি ফুলকপির পরীক্ষামূলক আবাদ করেছেন। তিনি সফল হয়েছেন। এলাকার অন্য কৃষকও আগামী মৌসুমে চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, “সাদা ফুলকপি থেকে এই রঙিন ফুলকপির পার্থক্য হলো এর পুষ্টিগুণ বেশি। এই কপিতে বিটা কেরোটিন থাকে। চোখ এবং ত্বককে ভাল রাখে। এ ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে; যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। সাদা কপির মতোই আবাদের সময় একই লাগে। চাষ পদ্ধতিও একই।”

সরজমিনে সাইফুল ইসলামের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, উচিতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের জমিতে তিনি রঙিন কপি চাষ করেছেন। অনেকটা দূর থেকে দেখলে মনে হয়, কমলা আর বেগুনি রংয়ের ফুল ফুটে রয়েছে জমিতে। জমির একপাশে কমলা আর অপরপাশে বেগুনি রংয়ের কপি চাষ করেছেন তিনি। পাশেই অন্য এক টুকরো জমিতে আবাদ করেছেন কাঁচামরিচ। 

জমির পাশে দাঁড়িয়ে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, আমরা আগে সাদা ফুল কপি লাগিয়েছিলাম। কিন্তু চারাগুলো নষ্ট হওয়ার পর কৃষি অফিস থেকে উনিশত পঞ্চাশটি রঙিন ফুলকপির চারা দিয়েছেন। আমরা এই চারাগুলো নভেম্বরে জমিতে রোপন করি। ফসলের নতুন জাতের প্রতি আমার স্বামীর ঝোঁক বেশি। 

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “নতুন সবজির প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। বাজারমূল্যও বেশি পাওয়া যায়।” দুইটি রংয়ের এক হাজার নয়শ পঞ্চাশ কপি আবাদ করেছি। আমার হাত থেকে মোট ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, সেচ, শ্রমিক, কীটনাশক বাবদ।

“গত কয়েকদিন ধরে কপি বিক্রি করছি। বাজারে প্রচলিত সাদা রংয়ের কপি থেকে প্রায় দ্বিগুণ দাম পাচ্ছি। বর্তমানে একেক পিস কপি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। জমি থেকে কপি তুলে মদন বাজারে ও জাহাঙ্গীরপুর বাজারে আমি নিজেই বিক্রি করছি। তাছাড়া অনেকেই জমি দেখতে ভিড় করছেন। তারাও কপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সব কপি বেচা শেষ হলে আশা করছি অন্তত ৭৫ হাজার টাকা লাভ পাবো।”

একই গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম নতুন জাতের ফুলকপি আবাদ নিয়ে বলেন, “সাইফুল রঙিন ফুলকপি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে, বাম্পার ফলন হয়েছে। দেখতেও যেমন কপি সুন্দর তেমনি স্বাদও কিন্তু বেশি, পুষ্টিগুণও বেশি। এই চাষ দেখে এলাকার অন্য চাষিরাও উৎসাহিত হয়েছেন। আগামীতে আমিও এই নতুন জাতের ফুলকপি আবাদ করব।”

আরেক চাষি কায়কোবাদ তালুকদার বলেন, “সাইফুল চাষ করাতে আমরা মনে করি, এটা আসলেই একটা ভাল দিক। সেও উপকৃত হইছে। আমরা এলাকাবাসীও জানতে পারছি। আমরাও চাষ করতে পারবাম।”

কৃষক সাইফুলের সাফল্য দেখে অনেকেই অফিসে যোগাযোগ করছেন এবং আগামীতে ফসলটি করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা নতুন ফসলের ব্যাপারে সবসময় কৃষকদের উৎসাহিত করি।

শীতের সবজি ফুলকপি খাদ্য হিসেবে অসাধারণ ও সবার প্রিয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারযোগ্য কপিতে ৯০ দশমিক ৮ গ্রাম পানি, ২ দশমিক ৬ গ্রাম আমিষ, শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম চর্বি, শূন্য দশমিক ৪ গ্রাম শ্বেতসার, এক দশমিক ৯ গ্রাম খনিজ লবণ রয়েছে।”

মদন উপজেলার বিভিন্ন বাজারের পাইকারি সবজি বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে রঙিন ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা প্রথমবারের মতো সবজিটি দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন। এর গুণাগুণ সম্পর্কে বিক্রেতাকে নানা প্রশ্ন করছেন। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও দেখতে সুন্দর হওয়ায় আগ্রহী হয়ে অনেকেই কিনে নিচ্ছেন।   

জাহাঙ্গীরপুর এলাকার গৃহিনী সান্তনা দাস জাহাঙ্গীরপুর হাসপাতালের সামনে থেকে গত ১০ দিনে রঙিন ফুলকপি কিনেছেন তিনবার। কমলা ও বেগুনি দুই রংয়ের কপিই নিয়েছেন। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, “মনে হচ্ছে, সাদা ফুলকপির চেয়ে অল্প একটু স্বাদ বেশি রঙিন ফুলকপির। তরকারি রান্না করার পর সাধারণ কপির মতো এতোটা গুড়ো হয়ে যায় না। তাছাড়া রান্নার পরও কপির রঙ অনেকটাই অটুট থাকে। এতে তরকারিটা রান্নার পর ভাল দেখায়।”

নতুন বাজার থেকে দুই রংয়েরই কপি কিনে খেয়েছেন জানিয়ে মদন বাজার এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন উজ্জল বলেন, “এই কপি সাধারণ কপির চেয়ে অনেকটাই ভাল লেগেছে। কপি রঙিন হওয়ায় পুষ্টিগুণ বেশি। সাদা কপির চেয়ে স্বাদ, পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এখন রঙিন কপিই বাজার থেকে কিনে আনছি।”  

 

একুশে সংবাদ/এস কে

Link copied!