আজ ৪ ডিসেম্বর ঠিক এই দিনে কুড়িগ্রামের উলিপুর হানাদারমুক্তসহ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলার এ অঞ্চলটির কিছু অংশ ১১নং এবং কিছু অঞ্চল ৬নং সেক্টরের অধিনে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
বর্তমান উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, বুড়াবুড়ি, দুর্গাপুর ইউনিয়সহ আরো কিছু অংশ ৬নং সেক্টরের আওতাভুক্ত ছিলো। যুদ্ধকালীন সময় আজকের এই দিনে ভারতীয় মিত্রবাহিনী এবং নিয়মিত ও অনিয়মিত মুক্তিবাহিনীর অপ্রতিরোধ্য দুর্বার প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানী শত্রুবাহিনী উলিপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে ১৯৭১ সালে ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী, তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী ও তাদের প্রত্যক্ষ দালালদের সহায়তায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত এই উপজেলারই হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুটি গ্রামে ইতিহাসের জঘন্যতম অপারেশন চালায় এবং ৬৯৭জন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। হত্যা হওয়া ওই মানুষগুলোর স্মরণে হাতিয়া ইউনিয়নে একটি স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে।
যুদ্ধকালীন সময়ে পাকবাহিনী ঘাটি গেরেছিলো উলিপুর ডাকবাংলোয়। সেখানেই সময়ে অসময়ে চিলমারী ও উলিপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা এবং বিভিন্ন বয়সের নারীদের ধর্ষণ করে হত্যা করে পাক বাহিনী। মৃত এবং অর্ধ জীবিতদের ডাকবাংলোর পাশেই প্রায় ১শ গজ দুরে তাদের মাটি চাপা দেয়া হয়।
দেশ ও উলিপুর স্বাধীন হওয়ার পর রেল স্টেশনের পাশেই সাক্ষী ৭১`র একটি স্মৃতিফলক নির্মান করা হয়। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ডাকবাংলোয় পাক মিলিটারির ক্যাম্পে ৩দিক থেকে আক্রমন চালায় ৬ ও ১১ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী। আকস্মিক এই আক্রমনে দিক্বিদিক হয়ে পরে ক্যাম্পে থাকা মিলিটারী বাহিনী।
এ সময় পাল্টা আক্রমনে গুলিবিদ্ধ হন মুক্তিবাহিনীর চাঁদ কোম্পানির টগবগে এক যুবক চৌকস যোদ্ধা আব্দুর রহিম মন্ডল এবং সেখানেই নিহত হন। পরে তাঁকে বর্তমান ধামশ্রণী ইউনিয়নের সুরিরডারা গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়। আব্দুর রহিমের স্মৃতিবিজড়িত দিনগুলোকে স্মরণ রাখার জন্য তরুন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক গবেষক ও উদ্যোক্তা মারুফ আহমেদ ওই এলাকায় `আব্দুর রহিম স্মৃতি পাঠাগার` গড়ে তোলেন।
যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা না হলেও প্রতি বছর প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে দিবসটি পালন করাসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :