এবার চলনবিলে ২০ কোটি টাকার মধু উৎপাদন
একুশে সংবাদ : চলনবিলে বর্তমানে প্রায় ৫ শতাধিক মৌচাষী বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন ও সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে তারা চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে মৌমাছির বাক্সসহ অবস্থান নিয়েছেন।
চলতি বছর এ এলাকা থেকে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন তারা।
জানা গেছে, চলনবিলের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, সিংড়া, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় গত প্রায় ১০ বছর ধরে রবি মৌসূমে সরিষা ফুল থেকে কোটি কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এ বছরও বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক মৌচাষী মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিলের সরিষার খেতের পাশে কয়েক হাজার হাজার মৌবাক্স বসিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসূমে চলনবিলের ৯ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। এরই মধ্যে চলনবিল সরিষার ফুলে ভরে উঠেছে। আর সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের জন্য মাসখানেক আগে থেকেই মৌচাষীরা বিলের সুবিধাজনক স্থানে অস্থায়ী আবাস গড়েছেন।
বর্তমানে এ বিল লাখ লাখ মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিষার ফলনও বাড়ছে।
বড়াইগ্রামের লক্ষীকোল বাজারের মৌচাষী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, তার মোট ৮০টি মৌবাক্স রয়েছে। যা থেকে তিনি প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার মণ মধু সংগ্রহ করতে পারেন। তাদের সংগৃহীত এসব মধু ৩০০ থেকে ৩৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এই চাষি।
এদিকে, চলনবিলের খাঁটি মধু সংগ্রহের জন্য প্রাণ, স্কয়ার, এপিসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই এখানে আসতে শুরু করেছেন।
এপি কোম্পানির প্রতিনিধি রাকিব হাসান জানান, চলনবিলের মধুর গুণগত মান খুবই ভালো। এসব মধু সংগ্রহ করে প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা দরে বাজারজাত করা যায়। কেনা দামের চেয়ে এতো কমে কিভাবে বাজারজাত করেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন জানান, যেসব সরিষার জমি থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করেন, সেসব জমির সরিষার ফুলে সঠিকভাবে পরাগায়ন ঘটে। ফলে সেসব জমির সরিষার ফলন ২৫-৩০ ভাগ বেড়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাটোরের উপ-পরিচালক রহমতুল্লাহ সরকার জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চলতি মৌসূমে চলনবিলের সরিষা ফুল থেকে বাণিজ্যিকভাবে এবং বিভিন্ন গাছ-পালায় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মৌচাক থেকে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১৫-১২-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :