আমনের বাম্পার ফলনেও লোকসানের শঙ্কায় নওগাঁর কৃষক
একুশে সংবাদ : চলতি মওসুমেও আমনের আবাদে বাম্পার ফলন পেয়েছেন নওগাঁর কৃষকরা। তবে হাটে বিক্রি করতে গিয়ে মোটা ধানের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা। চিকন ধানে আরো বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা।
এদিকে জেলার মহাদেবপুর, মাতাজী, চকগৌরী, হাঁপানিয়া, রানীনগর, আবাদপুকুর, সাপহার, পোরশা ও শিশাহাটে সবচেয়ে বেশি ধান কেনাবেচা হয়। আমন মওসুমে কাটা মাড়াইয়ের শুরু থেকেই এসব হাটে ধান বিক্রি শুরু হয়েছে। একই সাথে জেলা ও জেলার বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান-চাল ব্যবসায়ী ও মিলাররা ধান কিনতে আসছেন ওইসব হাটে। এদিকে হাটগুলোয় ধান কেনাবেচার ধুম পড়লেও দাম কম হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। এদিকে তারা বলছেন উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে। চিকন ধানে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজীহাটে ধান বিক্রি করতে আসা মনজুর এলাহী জানান, এবার মোটা জাতের স্বর্ণা-৫, গুটি স্বর্ণা ও সুমন স্বর্ণা জাতের আবাদে প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ২০-২২ মণ। শ্রমিকের মজুরি, হাল ও কিটনাশকসহ প্রতি বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। স্থানীয় হাটগুলোয় প্রতি মণ মোটা জাতের শুকনা ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৬০-৬৭০ টাকায়। এতে আপাতত লাভের মুখ দেখছেন না তারা। তবে গোলায় ধরে রাখতে পারলে হয়তো মাসখানেক পরে বেশি দাম পাওয়া যেত।
কিন্তু হাল, সার ও কিটনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করতে গিয়ে ধান বিক্রি করতেই হচ্ছে। ময়েন হোসেন নামে অন্য একজন বলেন, মওসুমের শুরুতে মোটা ধানের বাজারদর ছিল বেশি। সে সময় স্বর্ণা জাতের শুকনা ধান বিক্রি হয়েছে ৭২০-৭৩০ টাকায়। কিন্তু ভরা মওসুমে বাজার দর অনেকটা নেমে আসায় চাষীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি তৌফিকুল ইসলাম জানান, এলসিতে বাহিরের দেশ থেকে চাল আমদানি করায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের চালের বাজারে। তাই বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে পারছেন না স্থানীয় মিলাররা। ধান-চালের বাজার দর এ অবস্থায় থাকলে ধানের অবৈধ মজুদ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, চলতি মওসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ২ লাখ ৩ হাজার ৮৯৭ হেক্টরে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্র ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। এ থেকে চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৪ টন। এরই মধ্যে চলতি আমন মওসুমের ধান কাটা ও পুরোদমে মাড়াই চলছে।
জেলায় মোটা জাতের ধানের ৭৫-৮০ শতাংশ আবাদ ঘরে তুলেছেন কৃষক। এবার বিঘা প্রতি মোটা জাতের (স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা, বিআর-১১, সুমন স্বর্ণা) ধানের ফলন হয়েছে ২০-২২ মণ। আর চিকন জাতের সুগন্ধি ধানের (চিনি আতপ, ব্রিধান-৩৪, কালোজিরা) ফলন হতে পারে ১৪-১৫ মণ। এখনো পুরোপুরিভাবে চিকন জাতের ধান কাটা শুরু হয়নি। তবে মোটা ধান মাড়াইয়ের পর বিক্রির জন্য স্থানীয় বিভিন্ন হাটে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
একুশে সংবাদ ডটকম/আর/১২-১২-০১৪:
Link copied!
আপনার মতামত লিখুন :