সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

নতুন সিদ্ধান্ত আসছে আ‘লীগে

দলে পদ চাইলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে!

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৭:৩০ পিএম, ৯ নভেম্বর, ২০২২

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নতুন কমিটি গঠন করবে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা ধরনের  আলাপ-আলোচনা এবং উত্তাপ-উত্তেজনা চলছে।

 

এবারের কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে নতুন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, দলের গুরুত্বপূর্নপদ ‘সাধারণ সম্পাদক’ কে হচ্ছেন এ নিয়েও তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে একধরনের কৌতুহল লক্ষ করা যাচ্ছে। দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে দল এবং সরকারকে আলাদা করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সারা জীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সরকার এবং দল আলাদা করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণেই তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ রেখে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন। আবার ১৯৭৪ সালে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি পদও ছেড়ে দিয়েছিলেন।

 

বঙ্গবন্ধুর এই নীতি অনুসরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এ লক্ষ্যে তিনি সরকার এবং দল আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন ২০০৯ সাল থেকে। এই প্রক্রিয়া ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আওয়ামী লীগে এখন যারা মন্ত্রিত্বে এবং দলের নেতৃত্ব একসঙ্গে পালন করছেন এরকম সংখ্যা হাতে গোনা  বেশ কয়েকজন।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাড়া দুটি জায়গাতেই আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ও দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

 

আগামী জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি দল এবং সরকার আলাদা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ছাড়া অন্য কেউই দলের একাধিক পদে থাকতে পারবেন না এমন একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এতে আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন সাধারণ সম্পাদক পাচ্ছেন। যিনি শুধুমাত্র দলের নেতৃত্বে থাকবেন। তিনি কোনো মন্ত্রিত্বে থাকবেন না। এজন্য যদি কেউ সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন তাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে বলেও বিভিন্ন মহল আভাস দিচ্ছেন। এই সিদ্ধান্তটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

সূত্রে আরো জানা গেছে, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এই দুই জন মন্ত্রী থাকবেন। আর কেউই দলের নেতৃত্ব পেতে গেলে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। এই বিবেচনা থেকেই যারা যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মন্ত্রিত্বে আছেন, যারা সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মন্ত্রী আছেন তাদেরকে যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্য নানা রকম চেষ্টা করছেন নিজেদের গ্রহণ যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন।

 

তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে, যদি দলের নেতৃত্বে থাকতে চান তাহলে তাদেরকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। এরকম মন্ত্রিত্ব ছাড়তে অনেকেই আগ্রহী বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদের মধ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম দলের নেতৃত্বের ব্যাপারে আগ্রহী। এরকম আগ্রহী সংখ্যা আরও বেশি। শেষ পর্যন্ত সরকার এবং দল যদি আলাদা হয় তাহলে পরে আওয়ামী লীগের অনেকেই আছেন যারা মন্ত্রিত্বের চেয়ে দলের নেতৃত্বে বেশি আগ্রহী। আবার কেউ কেউ আছেন যে মন্ত্রিত্বই রাখতে চান। আগামী কাউন্সিলে বোঝা যাবে যে দল এবং মন্ত্রীদের মধ্যে কারা কোনটা বেছে নিতে পারেন।

 

মরিয়া কাদের, সংহত নানক: গত সোমবার (৮নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী ১০০টি সেতু উদ্বোধন করেছেন। সেই সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন। এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে তিনি ছুটে যান টাঙ্গাইলে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাত বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 

সেই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বিএনপির সমালোচনায় মুখর হন। এভাবেই ওবায়দুল কাদের এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এক বছর আগেও যিনি ঘর থেকে বের হতেন না, রীতিমত ঘরবন্দী হয়েছিলেন এবং লিখিত বক্তব্য ছাড়া কোন কিছুই দিতেন না সেই ওবায়দুল কাদের এখন ছুটে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। কদিন আগে কুমিল্লায় গিয়েছিলেন সম্মেলন উদ্বোধন করতে। সেই কুমিল্লার সম্মেলন উদ্বোধন করে ঢাকায় এসে তিনি শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদের এখন সরব, এক মুহূর্তে তার অবসরের সময় নেই। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ওবায়দুল কাদের দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র।

 

অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং হ্যাট্রিক তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্যই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। এখন অনেকটাই তিনি লাইমলাইটে এসেছেন এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন তিনি।

 

ওবায়দুল কাদেরের গত এক সপ্তাহের ব্যস্ততা দেখে অনেকেরই ধারণা হচ্ছে, তিনি সাধারণ সম্পাদক হবার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। তাঁর এই ছুটোছুটি, দৌড়ঝাঁপ ইত্যাদি তাঁর অসুস্থতাকে আড়াল করেছে। অনেকেই মাস ছয়েক আগেও বলছিলেন, ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে অসুস্থ। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মত অবস্থা তার নেই। তিনি ঘরে বসেই শুধুমাত্র প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন। সেই সমস্ত সমালোচনাগুলোর জবাব দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের।

 

অপরদিকে ওবায়দুল কাদের এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর অন্যতম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। জাহাঙ্গীর কবির নানক সবসময় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং সরব ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি এতদিন সংগঠনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখাশুনা করতেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিল সমীকরণের সমাধানও করতেন। কিছুদিন আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ ফরিদপুরের জেলা পরিষদ নির্বাচনের কাজে গিয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন প্রধান সমন্বয়কারী।

 

সিলেটের উপনির্বাচনেও তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানের ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। নীরবে-নিভৃতে কাজ করা জাহাঙ্গীর কবির নানকের অবস্থান অত্যন্ত সংহত কর্মীদের মধ্যে।

 

কর্মীরা মনে করছেন, রাজনীতিতে এখন যে সংকটকাল চলছে সেই সংকটকালে একজন দক্ষ সংগঠক দরকার যেই সংগঠক কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন এবং সংকট সমাধানের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিবেন। সেরকম একজন ব্যক্তি হিসেবে জাহাঙ্গীর কবির নানককে বিবেচনা করা হচ্ছে।

 

তবে অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগে এবারের সাধারণ সম্পাদকের লড়াইটা হবে সরাসরি ওবায়দুল কাদের বনাম জাহাঙ্গীর কবির নানকের লড়াই। এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হবেন, সেটাই দেখার বিষয়।

 

তবে কাউন্সিল যত এগিয়ে আসছে ততই দুইজনের লড়াইটা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে স্পষ্টত দুজনের কৌশল দুই রকমের। ওবায়দুল কাদের যেমন দেখাতে চাইছেন যে, তার কোনো বিকল্প নেই এবং তৃতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তিনি যোগ্য। তেমনি জাহাঙ্গীর কবির নানক শান্ত-সংহত হয়ে বুঝাতে চাচ্ছেন যে, শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই সিদ্ধান্তই তাঁর জন্য শিরোধার্য।

 

শেষ পর্যন্ত কে সাধারণ সম্পাদক হয় নাকি এই দুইজনের বাইরে কেউ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

একুশে সংবাদ/সফি.প্রতি/পলাশ
 

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর