সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

বেদনা বিধুর আগস্ট

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ১৬ আগস্ট, ২০২২

ডাঃ এস এম বাদশা মিয়া- ১৫ই আগস্ট, জাতির বেদনাবিধুর আর্তনাদের এক বিরহের কবিতা৷ যে কবিতার উপসংহারে ভুলুন্ঠিত হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে অর্জিত বীরত্বের ইতিকথা, যার উপসংহার ম্লাণ করে দিয়েছিল বাঙালি জাতির স্বপ্নের বুনিয়াদ, আচ্ছন্ন করেছিল বাঙালি জাতিকে আধাঁরে আড়ষ্ট ঘনঘটায়। আগস্ট ট্র‍্যাজেডিকে যদি কোন অবয়বে রূপান্তরিত করা হয়, তাহলে হয়তো পুরো বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড বেদনার পাহাড়ে চিরকালের জন্য আচ্ছাদিত হয়ে রইবে। আগস্ট শোকের আবহ বাংলার হাজার বছরের গ্লাণি, দুঃখ, জ্বরা, ভ্রমকেও হার মানিয়ে জগদ্দল পাথরের মতো অসার হয়ে বাংলার বুকে চেপে রয়েছে।

 

বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙালি জাতির নয়, বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, শৃঙ্খলিত ও দুঃখী মানুষের কণ্ঠস্বর ও মুক্তির বিমূর্ত প্রতীক। সে কারণে তার হত্যাকাণ্ডের ক্যানভাস বিশালভাবে ব্যপৃত ও বিস্তৃত। জাতিক ও আন্তর্জাতিক নানামুখী ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।

 

সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি বিষয় প্রধান হয়ে সামনে আসে। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান হবে না। দুঃখী মানুষের মুক্তি এই লক্ষ্যে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন; ঘুণেধরা প্রচলিত রাষ্ট্র কাঠামো এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, বিচার ও প্রথাসিদ্ধ শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভেঙে জনগণের কল্যাণকর নতুন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনা।

 

তিনি বলতেন, ‘আমার সেনাবাহিনী হবে পিপলস্ আর্মি।’ বিদ্যমান ঘুণেধরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি হতে পারে এমন  একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা কার্যকর করা। কারণ এই আমলাতন্ত্র বঙ্গবন্ধুর কথায় ‘ঘুণেধরা, দুর্নীতিপূর্ণ এবং জনগণকে হয়রানি করার জন্য।’ সেজন্য প্রত্যেক স্তরে  নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা দিয়ে আমলাদের তাদের অধীনস্থ করার পদক্ষেপ নেন। জনগণের কাছে প্রশাসনকে জবাবদিহি করা; এর ফলে ব্রিটিশ-পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত আমলাতন্ত্রে বিরাট অভিঘাত তৈরি হয়।

 

একইসূত্রে, তৎকালীন বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীতে পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনা-অফিসারদের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত অধিকাংশই ছিল পাকিস্তানি মানসিকতায় আচ্ছন্ন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর জৌলস ও কর্তৃত্ব তাদেরকে পুরনো স্বপ্নযুগে বারবার পিছু টেনে রেখেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত বা তাড়িত ছিল না। বরং মুক্তিযোদ্ধা সেনা-অফিসারদের বঙ্গবন্ধু পদোন্নতি দেওয়ার ফলে পাকিস্তান থেকে ফেরত আসা অধিকাংশ সেনা-অফিসার ছিল বিক্ষুব্ধ। বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় তারা এগিয়ে আসেনি, বরং তারা ছিল উল্লসিত এবং তাদের মুখে ছিল পাকিস্তানের স্লোগান ‘জিন্দাবাদ’।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে সবচেয়ে ক্রিয়াশীল ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা দেশে এবং বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ব্যাপক অপপ্রচার চালায়। মুসলিম বাংলা স্লোগান দিয়ে ওই নামে বেতার স্থাপন করে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটায়। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো সেসময়ে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে একযোগে বাংলাদেশবিরোধী প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে অপতৎরতা চালায়। আবার এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার’ নামে অঘোষিত যুদ্ধে নামে।

 

বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিসিয়ারি হিসেবে এটিও ছিল অন্যতম একটি কারণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই মুজিব নগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যাতে অর্জিত না হয় সেই লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা সি আই-এর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। সেই ধারাপাত থেকে হেনরি কিসেঞ্জার লিখিত ‘হোয়াইট হাউস ইয়ার্স’ বইতে দেখা যায় খন্দকার মোশতাক ও তার সহচরবৃন্দ কমপক্ষে ১৩ বার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সেসময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ নয়, বড়জোর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন গঠন।

 

একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

মতামত বিভাগের আরো খবর