সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

এ পরিস্থিতিতে কী অপরাধ নিম্ন আয়ের মানুষের

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৯:১১ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০২১

এ মহামারীতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে, বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। উৎপাদনব্যবস্থার পাশাপাশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে কর্মসংস্থান। সংকুচিত হয়েছে পুরনো অনেক প্রতিষ্ঠান। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। 

লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্যকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের না হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বের না হলে দিনের খাবার জুটবে না অনেকের।

দিন যত গড়াচ্ছে করোনার গতিও তত উল্কা হচ্ছে। ভ্যারিয়েন্টের শেষ নেই, ডেলটা নিয়ে যখন অস্তির সর্বত্র তখর খবর এসেছে ল্যাম্বার। যা কিনা আরও মারাত্মক। সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দাবানলের মতো। মৃত্যুর আর রেকর্ড লেখার গতি নেই। কারণ, প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। শহরে থেকে গ্রামে মানুষের ঘুম ভাঙছে স্বজনের কান্নায়।

আক্রান্ত নিম্ন আয়ের মানুষ কাটাচ্ছে হাসপাতালের বারান্দায়। আইসিইউ আর অক্সিজেনের হাহাকারে জীবন বিপন্ন।

পরিস্থিতির উন্নতিতে যে কটি সমাধান বিশেষজ্ঞরা ঘুরিয়ে পেছিয়ে বলছেন, তার মধ্যে সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনেটেড করা, স্বাস্থ্যবিধি মানা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। প্রথমটি অর্থ্যাৎ সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনেটেড করা এখনও অন্ধকারে। দ্বিতীয় আর তৃতীয় দুটি বিষয়ই ভাবাত্মক বা বিমূর্ত। পালিত হচ্ছে আবার হচ্ছে না। সরকার জোড়েশোড়ে লকডাউনের কথা বলেছে। রাস্তায় সেনা টহলও দেখা যাচ্ছে? প্রতিদিনই গ্রেপ্তার হচ্ছে মানুষ। এই সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
 
লকডাউনে যাদের আটক করা হয়েছে, আদালতে নেয়া হয়েছে, দেখা গেছে বেশিরভাগই খেটে খাওয়া, নিম্ন আয়ের মানুষ। যারা প্রতিদিনের আয় সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। তারা নিম্ন আয়ের মানুষ। হকার, মজুর, গাড়ি চালক। যাদের অনেকের এই দীর্ঘ লকডাউনে বাঁচার অবলম্বন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, রাজধানীতে ঢিলেঢালা লকডাউনে সরজমিন দেখা গেছে, সড়কে গাড়ি চলাচল বাড়ছেই। আর তার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত। যারা নানান কাজ প্রয়োজন বলে চলাচল করছে। কিন্তু ব্যাপক হারে আটক হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 
 
৩৩৩-তো খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কঠোর লকডাইনের শেষ সাতদিনে খাদ্য সহায়তা চেয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৭৩৬টি পরিবার। এগুলো সবই জেলা শহরের মানুষ। কিন্তু এ সময় রাজধানীর সিটি করপোরেশন এলাকায় কাউকেই খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি। অথচ রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা অগুনতি। এই মানুষগুলোর অবস্থা কি? কিভাবে চলছে তাদের জীবন?
 
পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, খোলা বাজারে মধ্যবিত্তের দীর্ঘ লাইন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির চেয়ে বড় বিষয় খাদ্য। অনেক ব্যবসায়ীকেও দেখা গেছে নিঃস্ব হয়ে খোলা বাজারের লাইনে দাঁড়াতে। দেশের সর্বত্রই এ চিত্র। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়া অনেকের সঙ্গেই কথা বলে দেখা গেছে তাদের এমনতিইে আয় রোজগার নেই তার ওপর আটকালেই জরিমানা আর আটকের ভোগান্তি।
 
কঠোর বিধিনিষেধে নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষকে গ্রেপ্তার, আটক ও জরিমানা করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা ২০টি সংগঠনের এই জোট মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, গত কয়েক দিনে ঢাকা শহরে গ্রেপ্তার বা আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রমজীবী মানুষসহ যারা জরিমানা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের জেলে পাঠানো হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের জরিমানা ও কারাগারে না পাঠাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

অন্যদিকে, চলমান বিধিনিষেধে না মানায় গ্রেপ্তারদের একযোগে নেওয়া হচ্ছে আদালতের গারদখানায়। সেখানে শত শত লোককে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। 

এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধে শামিল হতে হবে সবাইকে।

 

একুশে সংবাদ/পলাশ

মতামত বিভাগের আরো খবর