সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ভোটারদের আস্থা ফিরিয়েছে গাজীপুর, চার সিটিতেও হবে সুষ্ঠু নির্বাচন

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ৫ জুন, ২০২৩

ভোটারদের আস্থা ফিরিয়েছে সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরশন। নিজ ভোটে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন এমন আস্থা ফিরে পেতে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে। বাকি আসন্ন চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে ও ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সশ্লিষ্ট্ররা। 

 

রাজনৈতিক ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত বছর ও তার আগের বছর অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল গোলযোগপূর্ণ। আস্থার সংকটের পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা ঝুঁকিও ছিল। প্রার্থী নিখোঁজ হওয়া, হামলা, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, ভোটারকে সুযোগ না দিয়ে কেন্দ্রের গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তির ভোট দিয়ে দেওয়া এবং ভোট গণনার শেষ মুহূর্তে ফল পাল্টে দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ নির্বাচনী সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গত ১৪ বছর ধরে এমন একটা পরিবেশ বিরাজ করছে যেন ভোটের ফল মানুষের আগেই জানা ছিল। ফলে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। এতে ভোটার উপস্থিতিও ছিল অনেক কম। দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে কিছু অমীমাংসিত বিষয় তো রয়েছেই।

 

রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্যা নিরসনে ইসি মুখে বললেও কার্যকর কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় নানান কথা বলেছে। সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

 

নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইসির যে বিধান রয়েছে সেটি মেনেই নির্বাচনগুলোতে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছি সেটি অন্য চারটি নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে। বরং আমরা চেষ্টা করছি যেসব ভুলত্রুটি ছিল সেগুলো সংশোধন করার। ফলে ভোটাররা নিঃসংকোচে ভোট দিয়েছে, সামনের নির্বাচনগুলোতেও দিতে পারবে।   সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ভোটে আসেনি। কিন্তু গাজীপুরে পরিবেশ সুষ্ঠু মনে করায় ভোটাররা কেন্দ্রে এসেছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে হয়তো কোনো কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। কিন্তু ইসির পক্ষ থেকে সময় ভোটারদের আস্থা সংকট কাটানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

 

তিনি বলেন, গাজীপুর নির্বাচনে কাউন্সিলররাই মূলত তাদের এলাকার ভোটাদের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। এ কারণে গাজীপুরে ভোট মূলত বেশি পড়েছে। বাকি চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের চেয়ে বেশি হবে । কারণ ভোটের পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার সব প্রক্রিয়া কঠোরভাবে নেওয়া হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে এটা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। কেননা জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের পরিস্থিতি অনেক বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

 

সরেজমিন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৫৩টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের গোপন কক্ষে ডাকাত , প্রার্থী নিখোঁজ, ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পর থেকেই সরকারদলীয় প্রার্থীকে শোকজ, ইসিতে ডেকে সতর্ক করা, নির্বাচনের আগের দিন একজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলসহ কঠোর অবস্থানে থাকতে দেখা যায় ইসিকে। একই সঙ্গে কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো নির্বাচনকে মনিটরিং করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিল ইসি। ফলে সকাল থেকে ভোটাররাও ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন।

 

নির্বাচন কমিশনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর যত ভোট হয়েছে তা বিশ্লেষণ করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে গাজীপুরের ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ছিল। তাদের মতে, গত বছর ১১ ডিসেম্বর বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাদের দলের সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যসহ সাত সংসদ সদস্য (ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) পদত্যাগ করেন। চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনগুলোতে উপনির্বাচন হয়। সেখানে ভোট পড়েছিল গড়ে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর আগে বর্তমান কমিশনের মেয়াদেই অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ফরিদপুর-২ আসনে ভোট পড়েছিল ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর ২৫ মে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন ভোট দিয়েছেন। যেটা মোট ভোটের ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

 

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ  বলেন,  গাজীপুরের ভোটে সিসিটিভি ক্যামেরায় শনাক্ত করে দুজনকে আটকের ঘটনাও ভোটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে। সব মিলিয়ে ইসি ফল পেয়েছে। ভোটাররাও আস্থা সংকট কাটিয়ে নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। যে কারণে বরিশাল ও খুলনার সিটি করপোরেশনও জমে উঠেছে। বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের গতি প্রকৃতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নির্ধারণ করে দেবে।

 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোটার উপস্থিতি বাড়ার পেছনে ইসির কোনো কৃতিত্ব নেই। কারণ এ নির্বাচনে বিরোধী কোনো পক্ষ ছিল না। সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও ছিল দুর্বল। ফলে পরিবেশ ছিল একমুখী। এতে প্রশাসন কোনো ধরনের পক্ষপাতমূলক বা বাড়াবাড়ি করেনি। ফলে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে, ভোট দিয়েছে। এ নির্বাচনে বিরোধী দল থাকলে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই অবস্থা হতো। বিএনপি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেই হামলা-মামলার সেই পুরনো সংস্কৃতি ফিরে আসবে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মূলত কাউন্সিলররা ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে বিএনপির ভোটাররাও ছিলেন। বিএনপি সমর্থক ভোটাররা কেন্দ্রে এসেছেন তার নিজ প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভোট দিয়েছেন। যে কারণে গাজীপুরে এ ফলাফল হয়েছে। বাকি সিটি করপোরেশনের ভোট সুষ্ঠু হলে ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে। 

 

উল্লেখ্য,আগামী ১২ জুন হবে খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন। ২১ জুন ভোটগ্রহণ হবে সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে।

 

খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। সিলেটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবং বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।

 

একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের আরো খবর