সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ফুলকপির পুষ্টিগুন ও উপকারিতা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ২ আগস্ট, ২০২১

শীতকালের সেরা সবজি ফুলকপি । এটি সাধারন্ত শীতকালেই উৎপাদনের মূল সময়কাল। যদিও বর্তমানে ফুলকপি সারা বছর পাওয়া যায়।তবে,স্বাদের কথা বিবেচনা করলে শীতকালের ফুলকপি স্বাদে উৎকৃষ্ট। আমাদের দেশে,ফুলকপি সাদা এবং হালকা হলুদ বা বাদামী বর্নের পাওয়া গেলেও, বাইরের দেশে সাদা,হলুদ বা পার্পল বর্ণেরও মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। ফুলকপি পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি সবজি ।

প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে ক্যালরি রয়েছে ৩১,প্রোটিন ৩.৩ গ্রাম,ফ্যাট ০.৮ গ্রাম,ফাইবার ১.১ গ্রাম,শর্করা ০.৮ গ্রাম। সুতরাং,বুঝতেই পারছেন দামে বেশ সস্তা হলেও পুষ্টিগত দিক দিয়ে খুবই উপকারি ফুলকপি।পাশাপাশি,স্বাদের দিক থেকেও দারুণ সুস্বাদু।আর এই সবজিটিতে নানাভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। ফুলকপি মাংসের সাথে,ডালের সাথে,চাপ বা কাবাব হিসাবে,মাছের সাথে ঝোল বা স্যূপ/সালাদ অনেক ভাবে খাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ:
ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’,  ‘সি’,  ‘কে’, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। একটি মাঝারি আকারের ফুলকপিতে রয়েছে শক্তি-২৫ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট-৪.৯৭ গ্রাম , প্রোটিন-১.৯২ গ্রাম , ফ্যাট-০.২৮ , আঁশ-২ গ্রাম, ফোলেট-০.৫৭ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন-০.৫০ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন-০.০৫ , প্যানথানিক এসিড-০.৬৬৭ মাইকোগ্রাম। ফুলকপি পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। এর পাতার উপরিভাগে ক্যানসার নিরোধক উপাদান পেয়েছেন বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

ফুলকপি সাস্থের জন্য উপকারি
ফুলকপিতে উচ পরিমাণে বিভিন্ন রকমের উপকারী পুষ্টি উপাদান যেমন: ফোলিক এসিড,ভিটামিন-সি,ভিটামিন-কে,কোলিন,ছাড়াও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।তবে,ক্যালরি খুব বেশি নেই।তাই,এটি একাধারে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর।

ফুলকপিতে বিদ্যমান‘সালফোরাফোন” রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে এবং ক্যান্সারের স্টেমসেল গুলোকে ধ্বংস করার মাধ্যমে টিউমারের গ্রোথকে বাঁধা দেয়।এছাড়া,ফুলকপিতে থাকা “ইনডোল” প্রস্ট্রেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং আইসোথায়াসিনেট ব্রেস্ট,কোলন,ইউটেরাস এবং লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

ফুলকপিতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং কার্ডিয়াক কমপ্লিকেশনস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সুস্বাদু এই সবজিতে খুব ভাল পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য সঠিক পরিমাণে ফাইবারের চাহিদা পূরনের জন্য খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি রাখতে পারেন।

আমরা নানা কারণে বিভিন্ন সময় শরীরে বিভিন্ন রকম প্রদাহ,যন্ত্রনা বা ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকি যা দূর করতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি রাখা যেতে পারে।তবে,যদি গাউটের কারণে প্রদাহ হয় তবে ফুলকপি কিছুটা সাবধানে খেতে হবে।কারণ,ফুলকপি পিউরিন সমৃদ্ধ।সেক্ষেত্রে,ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

ফুলকপিতে যে “ফাইটোকেমিক্যালস”রয়েছে তা, টক্সিক উপাদান সমূহকে ভেঙ্গে কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,গল ব্লাডারের সুরক্ষার জন্য এই “ফাইটোকেমিক্যালস” বেশ কার্যকর।

সুস্বাদু এই সবজিটিতে গুরুত্বপূর্ন বি ভিটামিন-কোলিন রয়েছে যা মস্তিস্কের বিকাশে সাহায্য করে।সুতরাং,গর্ভবতী মা এবং যারা আলঝেইমার রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।এছাড়া,গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল হেলথের জন্য এই উপাদানটি ভীষণ উপকারী।

ফুলকপিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট “গ্লুটাথায়োন” দেহের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে,আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

যারা,স্কিন ভাল রাখতে চান তারা নিয়মিত ফুলকপি খেতে পারেন।ফুলকপিতে ভাল পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে যা আমাদের দেহের কোলাজেন প্রোডাকশনে সাহায্য করে।যা,রিংকেল বা এজিং প্রসেস কে ধীর করে দেয়।এছাড়া,ফাইন লাইন দূর করা এবং ক্লিয়ার স্কিন পাবার জন্য ভিটামিন-সি।

সতর্কতা:
নিঃসন্দেহে,ফুলকপি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।তবে,বিশেষ কিছু রোগের ক্ষেত্রে,ফুলকপি পুষ্টিকর হলেও কখনো কখনো খাদ্য তালিকা থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বাদ দিতে হবে।বিশেষ করে,যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত যতদিন পর্যন্ত থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে না আসে ততদিন পর্যন্ত ফুলকপি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া।যদি খুব বেশি খেতে ইচ্ছা করে সেক্ষেত্রে সীমিত পরিমাণে খুব ভাল ভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া।

হজমে সহায়ক: ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফার-জাতীয় উপাদান। যা খাবার হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। তাছাড়া ফুলকপির ফাইবার খাবার হজম হতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

তাই খাবারের তিলিকায় ফুলকপি অবশ্যই রাখতে হবে । ফুলকপি পুষ্টিতে যেমন তেমনি সাস্থ সমত্য ও বটে ।

একুশে সংবাদ/বর্না

লাইফস্টাইল বিভাগের আরো খবর