সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

শ্রীমঙ্গলে ধ্বংসের মুখে কালের সাক্ষী ত্রিপুরা মহারাজার কাছারি বাড়ি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ১৮ মে, ২০২৩

চায়ের রাজ্যখ্যাত পর্যটন নগরী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী কাছারি বাড়িটি আজ অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের মুখে। শ্রীমঙ্গল শহরের প্রাণকেন্দ্র হবিগঞ্জ রোড (ঢাকা-সিলেট) মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা মহারাজার স্থাপনা কাছারি বাড়িটি ১৮৯৭ সালে ত্রিপুরা মহারাজা প্রতিষ্ঠা করেন।

 

 বৃহস্পতিবার (১৮ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাছারি বাড়িটি অযত্ন, অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাড়ির ছাদের পলেস্তরা ভেঙে ভেঙে পড়ছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। ঘরের মেঝেতে আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মুল রঙের ছিটেফোটাও নেই। এই কাঁচারি বাড়ির পাশ দিয়ে চলা রাস্তায় ধরে হাঁটছেন ভূমি সংক্রান্ত কাজে আসা লোকজন।

 

ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৮৯৮ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজা কর্তৃক এতদঞ্চলের প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের জন্য শহরের মধ্যভাগে প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপরে চুন-সুরকি দিয়ে ঐতিহাসিক এই কাছারি বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিসের সীমানার ভেতরে অবস্থিত এই কাছারি বাড়িটির পাশেই রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিস ও শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি বিশাল পুকুর আর কাছারি বাড়ির নাম অনুসারে নির্মিত হয়েছে কাছারি জামে মসজিদ। মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আজানের সুমধুর সুর। শতাধিক বছরের পুরোনো কাছারি বাড়িটি ১ দশমিক ৬৭ একর জায়গার ওপর নির্মিত।

 

একতলা কাচারি বাড়িটি প্রস্থে ৩০ফুট ও দৈর্ঘ্যে ২০ ফুট লম্বা, এর রয়েছে ৩টি কক্ষ, ৮টি দরজা ও ৯টি জানালা। প্রতিটি দেয়াল ১২ ইঞ্চি চওড়া ও চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত। কারুকাজও রয়েছে চোখে পড়ার মতো।

 

 শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ত্রিপুরা মহারাজার তৈরী এই কাচারি বাড়িটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এর কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে কাছারি বাড়িটির সংস্কার সাধন করলে সংরক্ষিত থাকতো এ ঐতিহ্য।

 

 তিনি আরো বলেন, পুরনো ঐতিহ্যের ইতিহাস সমৃদ্ধ তথ্যটি যদি সকলের দৃষ্টিগোচরের জন্য রাখা হতো তাহলে ইতিহাস পিপাসুরা সহজে ইতিহাস জানতে পারতো। পরিত্যক্ত ত্রিপুরা মহারাজা কাছারি বাড়িটি সংরক্ষণ করে ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য দাবি করছে বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদ।

 

 জানা যায়, এ ব্যাপারে বিগত বছরে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। এতে সিলেট অঞ্জলের ১৬ টি ত্রিপুরা পল্লীর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন, ভূমি সমস্যা ও সমাধানসহ কাছারিবাড়ি সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আহ্বান করা হয়।

 

 সুমন দেববর্মা জানান, ২০১৬ জুন মাসে তৎসময়ের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদা এই কাছারি বাড়িটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ভবনটিতে নতুন করে রঙের কাজ করান। কিন্তু পরবর্তীতে এই কাজের আর কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। সংবাদকর্মী মো. শাকির আহম্মেদ জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা একটি পর্যটন নগরী। ইতোমধ্যেই পর্যটন নগরী হিসেবে এই উপজেলার সুনাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় শতবছরের ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরা মহারাজার কাছাঁরি বাড়িটি সংস্কার করলে নতুন প্রজন্ম ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপপাসুরা এটি দেখতে পারবে এবং এর ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।

 

বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের সিলেট অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দেববর্মা বলেন, শ্রীমঙ্গল একসময় ত্রিপুরার অধীনে ছিলো। তখন ত্রিপুরীদের সংখ্যা ছিলো অনেক। ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর বেশীর ভাগই ভারত চলে গেছে। ত্রিপুরা মহারাজার কাঁচারী বাড়িটিতে বসে অষ্টাদশ শতকের ত্রিপুরা মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন। পরবর্তীতে আধুনিক ত্রিপুরার সুচনালগ্নে মহারাজ মানিক্য বাহাদুর দেববর্মা ঊনবিংশ শতাব্দিতে সমস্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম আগরতলাতে শুরু করেন। ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং তার রাজত্বকালে নির্মিত কালের সাক্ষী এই ভবনটিকে রক্ষা করলে তা নতুন প্রজন্মের নিকট কালের স্বাক্ষীর স্মৃতি ধরে রাখবে।

 

 শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার বলেন, ত্রিপুরা কাছারি বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের চিন্তা-ভাবনা থাকলেও এ ব্যাপারে এখনও কোন পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি। এ ব্যাপারে আমার পূর্ববর্তী সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য উচ্চ পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। হয়তো আগামীতে একটি সংরক্ষণ বা পুনঃসংস্কারের কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে আমি মাঝেমধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি।

 

একুশে সংবাদ.কম/এ.বি.মু/বিএস

ফিচার বিভাগের আরো খবর