সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

কালু মাঝির স্বপ্নের ভেলা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২১

ভোলার শান্তি হাটের বেড়ীঁবাধের উপর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কালু মাঝির বসবাস। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জনের মধ্যে তিনিই একমাত্র উপাজর্নক্ষম ব্যক্তি। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চলে কালু মাঝির। একার উপাজর্নে সংসারের ভরণপোষণ আর ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। এ দুঃসহ যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে ভাবছিলেন অন্য কিছু করার। কিন্তু কি-ই বা করার আছে। অভাবের সংসার। নুন আনতেই পানতা ফুরায়। সেখানে ছোট খাটো একটা চায়ের দোকান দিতে গেলেও অনেক টাকার দরকার। জমানো কিছু টাকা যা ছিলো তাও শেষ হয়ে গেলো বড় মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে। উল্টো এনজিও থেকে যে ঋণ নেয়া হয়েছে, সেটাও পরিশোধ করা হয় নি। কৃষি কাজ করবে সেদিকেও মন টানছে না কালু মাঝির। গতবারের বন্যায় নিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতির রেস কাটিয়ে উঠতেই হিমশিস তার।

 তার উপরে মহাজনের জমি লগ্নীর মূল্য বৃদ্ধির খবর শুনে নিজেকে একেবারে অসহায় মনে হলো কালু মাঝির। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে অশ্রু এসে গেল তার। কিন্তু আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস কালু মাঝির। তার ভাবনা, যে আল্লাহ তার ভিটে মাটি নদীতে বিলিন করার পরেও বেরীবাধে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সে আল্লাহ তাকে একটা পথ দেখাবেই। কিছুিদন পরেই জানতে পারলেন, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে বেরীবাধে বসবাসরত দরিদ্র সদস্যদের মধ্যে গ্রুপ তৈরি করে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কালু মাঝি অধির আগ্রহে নাম দিলেন সেই প্রশিক্ষণে। দুদিনের প্রশিক্ষন শেষে জানতে পারলেন সংস্থা থেকে একটি করে খাঁচাও তৈরি করে দেয়া হবে। আর সেই খাঁচায় মাছ চাষ করতে পারবেন তারই ঘরের পাশ দিয়ে ছুটে চলা তেতুলিয়া নদীতে। আগ্রহ বেড়ে গেল কালু মাঝির। কিন্তু আলোর মাঝে হতাশার মেঘ কেটে গেলো আবারো কালু মাঝির মনে। 

এবার তিনি চিন্তা করছেন কই পাবেন খাঁচায় পোনা ছাড়ার টাকা আর খাবার কেনার টাকা। সেই চিন্তার অবসান ঘটিয়ে সংস্থা থেকে তাকে ৩০,০০০/- ঋন দেয়া হয় যেটা তিনি মাছ বিক্রি করে এরপরে পরিশোধ করবেন। একটু সাহসী হলেন কালু মাঝি। খাচাঁয় ছাড়েন ১১০০ মনোসেক্স তেলাপিয়া আর ৩০০ টি সরপুঁটি মাছ। প্রথমে ভেবেছিলেন খাচাঁয় মাছ চাষে অনেক সময় নষ্ট হবে। কিন্তু যখন দেখলেন যে তার কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটছে না তখন তিনি কাজে যাবার সময় সকালে একবার আর কাজ থেকে ফিরে বিকালে একবার খাঁচায় মাছের খাবার দিতেন। যে দিন নিজে খাবার দিতে না পারতেন, সেদিন ছেলেকে বলে দিতেন যেন স্কুল থেকে ফিরে সে খাবার দেয়। মাঝে মাঝে ছেলের সহযোগিতা আর নিজের আগ্রহ তাকে প্রশান্তি এনে দেয় যখন চার মাস পরে মাছ বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে নীট ১৪৫০০/- লাভ হয়। আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় কালু মাঝির। আশাবাদী হয়ে উঠেন তিনি। 

পরবর্তী ধাপের মাছ বিক্রি থেকে লাভ করেন ১৬,০০০ টাকা। পরের বছর নিজের কিছু জমানো টাকা আর সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে আরো দুটি খাঁচা নিজ উদ্দ্যেগে তৈরি করেন কালু মাঝি। তিনটি খাঁচায় মাছ চাষ করে আশার আলো দেখছেন কালু মাঝি। তিনি বলেন, যে নদী আমাকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছে, সে নদী-ই আমাকে সুখের পথ দেখাচ্ছে। যে পরিবারে দিনের খাবার জুটাতে কষ্ট হতো আজ সেখানে আমার সঞ্চয় থাকছে। প্রতিবার মাছ বিক্রির পরেই ছেলে মেয়েকে নতুন জামা কাপড় কিনে দেই বলেই হাঁসি কালু মাঝির মুখে।

 

 

একুশে সংবাদ/ম/ব


 

ফিচার বিভাগের আরো খবর