সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

জর্ডান ও ইসরাইনের মৃতসাগর

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৩:৪১ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

পৃথিবীর বুকে এমন একটি সাগর রয়েছে যেখানে কেউ সাতার না জানলেও ডুবে যাবে না। এই হৃদটির নাম “ডেড সি”, যার বাংলা অর্থ আসে মৃত সাগর এবং আরবদের কাছে এটি “বাহরুল মায়্যিত” নামে পরিচিত। এই সাগরটি জর্ডান ও ইসরাইনের সীমানায় অবস্থিত। এ সাগরের পশ্চিমে ইসরাইল এবং পুর্বে জর্ডান অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ২০ লাখ বছর পুর্বে এই সাগরের উৎপত্তি। এ সাগরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কি.মি. এবং প্রস্থ প্রায় ১৮ কি.মি.।

কিছু জরিপে দেখা গেছে এই সাগরে রয়েছে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন টন লবণ, যা সাধারন সাগরের পানির তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। এই পানিতে লবণের পরিমাণ প্রায় ৩৪.২ শতাংশ। এর কারনে এই সাগরের পানির প্লবতা অনেক বেশি। প্লবতা দ্বারা তরলে উপর কোন কিছুর দ্বারা প্রদত্ত চাপের বিপরীত চাপ। অর্থাৎ পানির প্লবতা বেশি হলে সেখানে বস্তুটি ভেসে থাকবে। কারণ বস্তুর প্রদত্ত ওজন পানি বহনে সক্ষম। এই সাগরের এতো বেশি প্লবতার কারণে এখানে মাহব দেহ কর্কের ন্যায় ভেসে থাকে। যারা সাতার জানে না তারাও এখানে নির্দ্বিধায় নামতে পারেন কারন তাদের ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এই লবণাক্ততার কারণে এখানে মাছ অথবা কোন প্রানীর বেঁচে থাকার জন্য একেবারেই প্রতিকুল পরিবেশ। তাই এ সাগরে কোন মাছ বা প্রানী দেখা যায় না। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু ছত্রাকের দেখা পাওয়া যায়। জীবের বেঁচে থাকার জন্য একেবারেই প্রতিকুল এই সাগরের পানি।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২৩ মিঃ. নিচে অবস্থিত এই সাগরকে পৃথিবীর সর্বনিম্ন বিন্দু বলায় হয়। এই জায়গা এতো নিচে হওয়ার কারণে এখানে বায়ু চাপ বেশি এবং বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ বেশি বলে এখানকার বায়ু বা পরিবেশ অনেক ভাল। তাছাড়া এই সাগরে খনিজ সম্পদের পরিমাণও যথেষ্ট বেশি। এর পানিতে পটাশিয়াম, সালফার, ব্রোমাইন পাওয়া যায়। এখানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড প্রায় ৫০.৮ শতাংশ এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রায় ৩০.৪ শতাংশ।

সারাবছরই এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এখাকার কাদা পর্যটকরা গায়ে মেখে সুর্য স্নান করেন। এই জায়গাটি অনেক নিচু হওয়ার কারনে সুর্যের অতি বেগুনি রশ্নি এখানে কম আসে, যার কারনে এটি সূর্য স্নানের উপযুক্ত জায়গা। তাছাড়াও এখানকার পানি অনেকে চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করেন। অনেক খনিজবহুল পানির কারনে কিছু ওষুধি গুণ আছে এই পানির। 

মৃত সাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১২৪০ ফুট। কিন্তু সুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো দিনে দিনে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে এই সাগরের। গত শতাব্দিতে প্রায় ৪২২ মি. নেমে গেছে পানির স্তর। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এই পানি কমার হার। জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৫ মিঃ. করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে প্রতিবছর। এই সাগরের পানির উৎস জর্ডান নদী। তবে জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যবর্তী কিছু দ্বন্দ্বে জন্য নষ্ট হচ্ছে এই সাগরের পরিবেশ। ২০১৫ সালে ওই সাগর রক্ষার্তে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ রাখা হয়।

একুশে সংবাদ/এ/ব

ফিচার বিভাগের আরো খবর