সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

ঢাকায় যেতে ইচ্ছা করতাসে না ভাই

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:১৭ পিএম, ৬ মে, ২০২৩

মৃত্যু আসলে একটা আপেক্ষিক বিষয়। এখন জীবন আছে আর পরমুহূর্তেই জীবন নাশের শঙ্কা। কার মৃত্য কখন কোথায় লেখা আছে একমাত্র বিধাতা ছাড়া কেউই বলতে পারে না।

 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের ছাত্র মেহেদি হাসান গত পহেলা মে বাজার করতে গিয়ে স্বীকার হন দুর্ঘটনার। ঢাকা শহরে প্রতিদিনই ওয়াসা রাস্তা খুড়ে পানির লাইন ঠিক করবে এটা তো ঢাকাবাসীর জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী। সাথে কিছু দুর্ঘটনার খবর আসবে সেটাও যেন স্বাভাবিকই হয়ে গেছে। এখানেও ব্যতিক্রম নয়। জবিতে অধ্যায়নরত মেহেদিও একই ঘটনার স্বীকার।

 

 গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা বাজারের রাস্তায় ওয়াসার পানির লাইন ঠিক করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে গ্যাসলাইনের, যেখানে আহত হন মেহেদি। তার শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ পুড়ে যায়। তার দগ্ধ শরীর নিয়ে যাওয়া হয় শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে। ডাক্তারদের চেষ্টায় কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায়ও আনা সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু জীবন যুদ্ধে অবশেষে হার মানলো মেহেদি। ৬ই মে সকাল ৬টার দিকে বার্ণ ইউনিটের আইসিইউ থেকে দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে অপর দুনিয়ায় পাড়ি জমায় মেহেদি।

 
হাজারও স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন বহু মানুষ। কষ্ট করে লালন করেন তাদের স্বপ্নকে। মেহেদির মত দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান মেহেদি। নুরপুর মালঞ্চী হাই স্কুল, নাটোর থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী-তে। এরপর কিছুটা যুদ্ধ করেই ২০১৯-২০ সেশনে ভর্তি হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। নাটোরের স্কুলের ৫ টি বছর তার কাছে ছিলো স্বপ্নের মতো। ফেসবুকে এভাবেই লিখে গেছে সে, ‍‍`জীবনের সেরা ৫ বছর‍‍`।


বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও যুক্ত হয়েছিলো মেহেদি। বিটিভি এর ‍‍`বিজয় কথা‍‍` অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছিলো মেহেদি। নিশ্চয়ই স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার। এজন্যই শত বাধার মধ্যেও নিজেকে এগিয়ে রাখতে চেয়েছিলো সবার থেকে। কিন্তু এভাবে ২২ বছরের জীবনযুদ্ধে পরাজিত হতে হবে কখনো হয়তো ভাবেনি সে।


জীবন যুদ্ধে আঘাত আসে জেনেই হয়তো মেহেদি তার ফেসবুকে লিখেছিলো, ‍‍`জীবনে আঘাত আসা পার্ট অফ লাইফ, আর সেগুলোকে কাটানোই হলো আর্ট অফ লাইফ।‍‍` ঈদের ছুটি শেষে ২৬শে এপ্রিল সে একটি পোস্ট শেয়ার করে, যেখানে লেখা ছিল- ‍‍`ঢাকা যেতে ইচ্ছা করতাসে না ভাই‍‍`। হয়তো বা মায়ের কোল থেকে শেষ বিদায় নিতে ইচ্ছা পোষণ করেনি মেহেদির আত্মার। হয়তো বা থেকে যেতে চেয়েছিলো সন্তানদের চির সুরক্ষিত আশ্রয় মায়ের কোলে।

 
মেহেদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে জবির উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রক্টর সহ সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে মেহেদির বন্ধুরা তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া চেয়ে যাচ্ছে সবার কাছে। এঘটনায় গেন্ডারিয়া পুলিশ বাদি হয়ে একটা মামলা করলেও তার ফল কতটুকু পাবে মেহেদির পরিবার সেটা নিয়ে সন্ধিহান মেহেদির বন্ধুরা। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্বীকার যেন আর কেউ না হয় সেটারই প্রত্যাশা সবার। 

একুশে সংবাদ.কম/সম 

ক্যাম্পাস বিভাগের আরো খবর