সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ১৩ নভেম্বর, ২০২২

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামী ১১ নভেম্বর।

 

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইতিহাস থেকে জানা যায়, কলেজটির প্রথম কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর নালগলার ৫/১, জুম্মন ব্যাপারী লেনে (ভাওয়ালরাজ এস্টেট) কায়েদ-ই-আজম কলেজ নামে। তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আল জিন্নাহর উপাধি অনুসারে এ কলেজের নাম রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে লক্ষ্মীবাজারে জমি ক্রয় করে কলেজটিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়।

 

প্রথমে কেবল আই.এ, আই.কম, এবং বি.কম কোর্সের পাঠদানের অনুমোদন ছিল কলেজটির। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালে চালু হয় বি.এ (পাশ) কোর্স। এরপর ১৯৫৮ সালে কলেজটিতে বি.এসসি কোর্স চালু হয়।

 

তৎকালীন সময়ে রাজধানী ঢাকার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজই প্রথম শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল।

 

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নাম হয় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে  স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।

 

কলেজটি সম্পর্কে এই কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জীবন নাহার যুথি লিখেছেন, “সোহরাওয়ার্দী কলেজ আমাকে জীবনে উঠে দাঁড়ানো শিখিয়েছে।”

 

২০১৭ থেকে ২০২১ আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময় কেটেছে এই কলেজ প্রাঙ্গণে। এই কলেজ আমার জীবনের বাক পরিবর্তন করে দিয়েছে নতুন গতি। আমি কখনোই কারো সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতেই পারতাম না। এই কলেজ আমাকে জীবনে উঠে দাঁড়ানো শিখিয়েছে। আমার জীবনের সকল পরিবর্তনের সূচনা হয় এই কলেজ থেকে, ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয় আমাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য-সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়েছেন।

 

২০১৯ সালে আমি স্বাধীনতা দিবসে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে প্যারেডের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাই। ২০২০ সালে প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে আমি রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার সুযোগ পাই। ২০২১ সালে বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশগ্রণের সুযোগ পাই। এই সবকিছু আমার কলেজের শিক্ষক, অধ্যক্ষ মহোদয়ের প্রেরণা এবং সাহায্য ছাড়া সম্ভব হতো না।

 

এই কলেজে এসে আমি সকল ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পাই। এখানে প্রতিটি শিক্ষকের ব্যবহার খুবই অমায়িক। কলেজ প্রাঙ্গণে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে মুক্তির সনদ। ছয় দফার উপর নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্য যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বহন করছে। ঐতিহ্যবাহী লাল ইটের বাতিঘরের নজরকাড়া সৌন্দর্য পুলকিত করে সকলের মন।

 

কলেজেটিতে ছোট-বড় সকলের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানে প্রতিটি জাতীয় দিবস খুব আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয়। কলেজে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং ক্লাব, ফটোগ্রাফি, বাঁধন, সাংবাদিক সমিতি, রেড ক্রিসেন্ট প্রতিটি সংগঠন এ ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকগণ খুব সুন্দরভাবে তাদের কাজে এগিয়ে যাচ্ছে ও সফলতা বয়ে আনছে। কলেজটি ছোট হলেও প্রতিটি সংগঠন তার নিজ কাজে সমাদৃত। এই কলেজ আমার খুব ভালোবাসার।

 

তাই এই ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমার প্রত্যাশা যেই ইচ্ছে গুলো নিয়ে গুটি গুটি পায়ে আমি এসেছিলাম সে সকল ইচ্ছে পুরণ হোক। অনুজদের আমার প্রানের কলেজ কে তাদের স্বপ্নের মত করে পাক। হয়তো কোন একদিন আমি এসে সেই সুবিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে বলবো আমার কলেজ, আমার প্রিয় কলেজ, আমার স্বপ্নের কলেজ। আমার কলেজ সবদিক থেকে সাগৌরবে তার জয়জয়কার ছড়িয়ে দিতে পারে ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এটাই আমার প্রত্যাশা।

 

একুশে সংবাদ/জা.হা.প্রতি/পলাশ

ক্যাম্পাস বিভাগের আরো খবর