সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

যেভাবে হলো হাতিরঝিল, আজিমপুর, ধানমন্ডি

একুশে সংবাদ প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ৩০ মে, ২০২৩

মানুষ মফস্বল ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা শহরে আসেন জীবিকার সন্ধানে। ধীরে ধীরে ঢাকা শহর তাদের কাছে পরিণত হয় ভালোবাসার শহরে। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষ বসবাস করে। এই অপরুপ ঢাকা শহরে আমরা দিনের পর দিন বসবাস করলেও সঠিকভাবে জানিনা শহরের বিভিন্ন স্থানের নামকরণের ইতিহাস।

 

ঢাকা শহর 

কোটি মানুষের বসবাসের শহরে রয়েছে হরেক রকমের অপূর্ব ও অদ্ভুত নামের এলাকা। এই যেমন শাহবাগের মতো রাজকীয় নাম আছে, আছে হাতিরঝিলের মতো অদ্ভুত নাম। আজ জানবো ধানমন্ডি, হাতিরঝিল, আজিমপুর, কারওয়ান বাজার, চকবাজার, শাহবাগ, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকাগুলোর নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে।

 

ধানমন্ডি

যা থেকে চাল হয় আমরা তাকে ‘ধান’ বলি। আর ‘মন্ডি’ শব্দটি ফারসি, যার অর্থ হাটবাজার। ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকায় সবচেয়ে বড় ধানের হাট বসতো ধানমন্ডিতে। আর সেখান থেকেই আজকের ধানমন্ডি এলাকার নামকরণের উৎপত্তি।


হাতিরঝিল

মুঘল শাসকদের খুব পছন্দের একটি খেলা ছিল হাতির লড়াই। তাই সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাতি এনে রাখা হতো ধানমন্ডির পাশে  পিলখানায়। এই হাতিগুলোকে গোসলের জন্য নিয়ে যাওয়া হতো নিকটস্থ ঝিলে। এই ঝিলে হাতি গোসল করতো বলে ঝিলের নাম হয়ে উঠেছিল হাতিরঝিল।

 

আজিমপুর

আজিমপুরের নামকরণ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। কেউ মনে করেন, এলাকাটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র সুবাদার শাহজাদা আজমের শাসনামলে (১৬৭৭-১৬৭৯), এবং তার নাম আজম থেকেই এসেছে আজিমপুর নামটি। আবার কেউ কেউ মনে করেন, আওরঙ্গজেবের পুত্র নন বরং পৌত্র, সুবাদার আজিমুশশানের শাসনামলে (১৬৯৭-১৭০৩) উত্থান ঘটেছিল এলাকাটির  এবং তার নাম থেকেই এলাকার নামের সৃষ্টি।


কারওয়ান বাজার

কারাবান অর্থ সরাইখানা। দিল্লির সুলতান শেরশাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিখ্যাত গ্রান্ড ট্রাংক রোড বা সড়ক-ই-আজম। পরবর্তীতে ঢাকার মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত অংশটি নতুন করে নির্মিত হয়। তখন এই সড়কের কিছুদূর পরপর স্থাপিত হয়েছিল সরাইখানা বা কারাবান। ধারণা করা হয়ে থাকে, বর্তমান কারওয়ান বাজার এলাকায় ছিল এমনই একটি সুপরিচিত কারাবান, যা থেকে এলাকাটির নাম দাঁড়িয়েছিল কারাবান বাজার এবং পরবর্তীতে কারওয়ান বাজার।

 

চকবাজার

মুঘল আমলে গোড়াপত্তন ঘটা এই এলাকার পূর্বনাম আসলে চৌক বন্দর। তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি ছিল এলাকাটির। ১৭০২ সালে নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর হাত ধরে এই পাদশাহী বাজারটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক বাজারে পরিণত হয়। পরবর্তীতে আবারো নতুন করে এর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন ওয়াল্টার সাহেব।


শাহবাগ

শাহবাগ শব্দের আভিধানিক অর্থ রাজকীয় বাগান। মুঘল সম্রাটরা যখন ঢাকাকে প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন এরপর এই এলাকায় একটি বিশালাকার, দৃষ্টিনন্দন বাগানও গড়ে তোলেন তারা। আজ সেই বাগানের স্মৃতিচিহ্নটুকু পর্যন্ত চোখে পড়ে না। কিন্তু তবু সেটি রয়ে গেছে স্থানীয় মানুষের স্মৃতিতে। তবে যারা রাজকীয় বাগানকে স্মরণ করে, পুরো এলাকাকে শাহবাগ নামে ডাকার মাধ্যমে।

 

মিরপুর

এককালে এই এলাকায় বসত ছিল মীর সাহেবের। তার নামানুসারেই গোটা এলাকা পরিচিত হয়েছে মিরপুর নামে। তবে এখানে যে নদী বন্দর রয়েছে মুঘল আমলে তা ছিল শাহ বন্দর নামে খ্যাত। আর পাক আমলে এলাকাটি অবাঙালি অধ্যুষিত ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত হলেও মিরপুর ছিল ব্যতিক্রম। সবার শেষে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি স্বাধীন হয় মিরপুর। সেই হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণাঙ্গন বলা হয় মিরপুরকে।


মোহাম্মদপুর

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর নামানুসারেই এসেছে এই মোহাম্মাদ। ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে গেল, অনেক উদ্বাস্তু মুসলিমই চলে আসে তৎকালীন পাকিস্তানে। তখন অনেক অবাঙালি মুসলিমও ভিড় জমায় ঢাকায় এবং সবাই মিলে লালমাটিয়ার পাশে একটি এলাকায় বাস করতে থাকে। অবাঙালি মুসলিমদের এই আবাসিক এলাকারই নামকরণ হয় মোহাম্মদপুর হিসেবে এবং ১৯৫৮ সালে এই এলাকায় তাদের স্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা হয়।

 

একুশে সংবাদ.কম/সম   

পর্যটন বিভাগের আরো খবর